গোটা আইএসএল বিতর্কহীন থেকেছে। তবে শেষলগ্নে প্লে-অফে যে এরকম বিতর্ক আমদানি করে যাবে বেঙ্গালুরু এফসি বনাম কেরালা ব্লাস্টার্স ম্যাচ, কে ভাবতে পেরেছিল। সুনীল ছেত্রীর চতুর ফ্রিকিক এক্সট্রা টাইমে। তারপরে কেরালার প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করেই সেই গোলের পক্ষে রায় দেওয়া রেফারির। এবং এরপরে কেরালা ব্লাটার্সের মাঠ ত্যাগ।
ঠিক কী ঘটেছিল?
ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে খেলা গোলশূন্য থাকায় খেলা গড়িয়েছিল নির্ধারিত সময়ে। অর্থাৎ অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলার শুরু হয়েছিল প্লে অফ থেকে সেমিফাইনালে পৌঁছনোর লড়াইয়ে। ক্রান্তিবীরা স্টেডিয়ামে ৯৫ মিনিটে সুনীল ছেত্রীকে ফাউল করেন কেরালা ব্লাটার্সের ভিবিন মনোহন। বক্সের সামান্য বাইরে থেকে ফ্রিকিক পেয়ে রেফারির সবুজ সংকেত পেয়ে যায় বেঙ্গালুরু এফসি। কেরালা ব্লাটার্স ওয়াল সংঘটিত করার আগেই সুনীল ছেত্রী দ্রুত ফ্রিকিক মেরে জালে বল জড়িয়ে দেন। সেই সময় কেরালা ব্লাটার্স গোলকিপার প্রভুসুখন গিল ওয়াল সাজাচ্ছিলেন। তাই পোস্টের নিচের সঠিক পজিশনে প্রস্তুত ছিলেন না। এমন অপ্রস্তুত অবস্থার ফায়দা নিতে দেরি করেননি সুনীল ছেত্রী।
আরও পড়ুন: মাঠ ছেড়ে ম্যাচ বয়কট কেরালার! সুনীলের বিতর্কিত গোলের পরেই ISL-এ ধুন্ধুমার-গন্ডগোল, দেখুন ভিডিও
এরপরেই নিজেদের অপ্রস্তুত অবস্থার কথা জানিয়ে রেফারিকে গোল বাতিলের জন্য চাপ দেন কেরালা ফুটবলাররা। তবে শেষে রেফারি গোলের পক্ষেই রায় দেন। আদ্রিয়ান লুনা ক্যাপ্টেনের আর্মব্যান্ড খুলে ফেলেন হতাশায়। কোচ ভুকুমানোভিচ গোটা ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে দলকে মাঠ ছাড়ার নির্দেশ দেন।
ফিফার নিয়ম কী বলছে?
ফিফার নিয়মের ১৩ নম্বর ধারার তৃতীয় সেকশনে বলা রয়েছে, ফ্রিকিকের ইঙ্গিত পাওয়ার পর প্রতিপক্ষ ফুটবলাররা যদি নির্ধারিত দূরত্বের তুলনায় বলের কাছে থাকে, তাহলে সুবিধা প্রযুক্ত না হলে ফ্রিকিক পুনরায় নিতে হবে। তবে কোনও ফুটবলার দ্রুত ফ্রিকিক নেওয়ার সময় প্রতিপক্ষের কোনও ফুটবলার যদি বলের ১০ গজের মধ্যে থাকে তাহলে সেই শট বাধাপ্রাপ্ত হলে রেফারি খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। তবে প্রতিপক্ষের কোনও ফুটবলার দ্রুত ফ্রিকিকের সময় কেউ ইচ্ছাকৃত বাধাদান করলে রেফারির সংশ্লিষ্ট ফুটবলারকে সতর্ক করার বিধান রয়েছে।
বিতর্কে সুনীল ছেত্রীর বক্তব্য কী?
"আমার ২২ বছরের কেরিয়ারে এরকম কখনও দেখিনি। এটা ঠিক হল না। রেফারি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তাঁরা বাঁশি বাজাবে, নাকি আমার ওয়াল লাগবে? আমি সঙ্গেসঙ্গেই বলি, আমার ওয়াল কিংবা বাঁশি কোনওকিছুরই দরকার নেই। আমি সব সময়ে এই নিয়ম ফলো করি এবং যদি সুযোগ থাকে, তবে আমি তা গ্রহণ করি। না হলে আমি বলে থাকি, ঠিক আছে, ওয়াল করা হোক। লুনা গোলের সময় ব্লক করার চেষ্টা করছিল। ও নিজেও এটা জানত। এটা অবশ্য আমার পক্ষেই গেল।"
"ফ্রিকিক নেওয়ার আগে সর্বদা রেফারিকে জিজ্ঞাসা করি। কারণ রেফারির অনুমতি ছাড়া তো ফ্রিকিক নেওয়া যায় না। এদিন অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা হল। কারণ ম্যাচ পুরো হবে কিনা, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে সংশয় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছলাম, এটা ভেবে ভালো লাগছে। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে নামার জন্য অপেক্ষার তর সইছে না।"
আরও পড়ুন: চিটিং করেই কি ফ্রিকিক থেকে গোল! অভিযোগ উঠতেই সুনীলের ঝাঁঝালো আক্রমণ কেরালা ব্লাস্টার্সকে
অতীতের বিতর্ক:
লা লিগায় ২০১৬/১৭ মরশুমে রিয়েল মাদ্রিদের হয়ে নাচো এরকম গোল করে গিয়েছিলেন সেভিয়ার বিপক্ষে। ইপিএলে থিয়েরি ওঁরি গানার্সদের জার্সিতে চেলসির বিপক্ষে একইভাবে কুইক গোল করে যান ফ্রিকিক পেয়ে। দুই ক্ষেত্রেই বিতর্ক হয়। তবে ফিফার নিয়ম মেনে গোল বহাল থাকে।