গত দু-বছর আইএসএল-এ টানা ব্যর্থতা। বারবার ব্যর্থতায় হতাশ হতে হয়েছে সমর্থক থেকে ক্লাব কর্তাদের। এবার ইমামি জমানায় নতুন করে মরসুমের শুরুয়াত করেছে স্টিফেন কনস্টানটাইনের লাল-হলুদ শিবির।
ডুরান্ডে প্ৰথম রাউন্ডেই ছিটকে যেতে হলেও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আশার আলো দেখিয়েছে। ইন্ডিয়ান নেভি, রাজস্থান ইউনাইটেড, এটিকে মোহনবাগানের বিপক্ষে জয়ের দেখা না পেলেও ইস্টবেঙ্গল ডুরান্ডের শেষ ম্যাচে চমকে দেওয়া হয় পেয়েছে গ্রুপের সবথেকে শক্তিশালী মুম্বই সিটি এফসির বিপক্ষে। চার গোলে সুমিত পাসিরা তছনছ করে দিয়েছিল মুম্বই রক্ষণ।
দেরিতে দলগঠন শুরু করলেও ইমামি ইস্টবেঙ্গল শেষদিকে বেশ কিছু দেশি-বিদেশি পরীক্ষিত তারকাদের সই করিয়ে চমক দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই মরশুম শেষে সমর্থকদের ডার্লিং হয়ে উঠতে পারেন।
কোচ স্টিফেন কনস্টানটাইনের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন এই তিন তারকা-
১) ক্লেইটন সিলভা: একদম নিখুঁত গোলশিকারি। বেঙ্গালুরু এফসিতে খেলা তারকার আইএসএল-এ খেলার অভিজ্ঞতা দেখেই নেওয়া হয়েছিল লাল-হলুদ শিবিরে। দল বাছাইয়ে যুক্ত থাকা কর্তারা যে ভুল ছিলেন না, তা প্রমাণ করে দিয়েছেন ক্লেইটন। ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে অভিষেক ঘটেছিল ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকারের। প্ৰথমে এলিয়ান্দ্রকে একাদশে রেখে ডার্বি একাদশ সাজিয়েছিলেন কোচ কনস্টানটাইন। পরে দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসাবে নামানো হয় ক্লেইটনকে। অভিষেক ম্যাচে সাপোর্টিং প্লে-র অভাবে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি।
তবে নিজের জাত চিনিয়ে যান ঠিক ছয়দিন পরে মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে। প্ৰথমে ফ্রি-কিক তারপর ৮১ মিনিটে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারক গোল করে যান তিনি।
বক্স স্ট্রাইকার হিসাবে যেমন খেলতে পারেন, তেমন সেকেন্ড স্ট্রাইকারের পজিশনেও খেলতে স্বচ্ছন্দ। থাই লিগে ১০০-র বেশি গোল থাকা তারকা যে আইএসএল, কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন।
২) ইভান গঞ্জালেজ: কনস্টানটাইন কোচ হয়ে আসার আগেই ইভানের সঙ্গে প্রি-কন্ট্র্যাক্ট সই করে রেখেছিল ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। কনস্টানটাইন সেই চুক্তিকে মান্যতা দিয়ে গঞ্জালেজকে স্কোয়াডে রেখেছেন। দু-বছরের চুক্তিতে ইস্টবেঙ্গলে পা রাখা তারকার অভিষেক ঘটেছিল ডুরান্ড কাপে রাজস্থান ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে।
ডুরান্ডে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ যে অনেক সংগঠিত লেগেছিল, তার অন্যতম কারণ স্প্যানিশ সেন্ট্রাল ব্যাক। প্রতিপক্ষের আক্রমণের সময় নিখুঁত পজিশন যেমন নিতে পারেন, সময়োচিত ট্যাকল করতেও সিদ্ধহস্ত রিয়েল মাদ্রিদের একাডেমি থেকে উঠে আসা এই ডিফেন্ডারের। ডিপ ডিফেন্সে চারিয়া কিরিয়াকৌয়ের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া যত দ্রুত গড়ে উঠবে ততই উপকৃত হবে ইস্টবেঙ্গল।
৩) অনিকেত যাদব: দেশের অন্যতম সেরা উঠতি ফুটবলার তিনি। দেশের ফুটবল মহলের আক্ষেপ সুনীল ছেত্রীর পর ভালোমানের ভারতীয় ফরোয়ার্ড কই? সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিতে পারেন অনিকেত যাদব। 'প্রতিশ্রুতিমান' ট্যাগ ছেড়ে তারকা-খ্যাতি পেতে পারেন মরশুম শেষে। স্টিফেন কনস্টানটাইন বরাবর যুব ফুটবলারদের নিজের সেট আপে প্রাধান্য দেন। অনিকেত সেই জন্যই ইংরেজ কোচের তত্ত্বাবধানে সেরা ছন্দে মেলে ধরতে পারেন নিজেকে। যুব দল থেকে উঠে আসা এই তারকা আগেই আইএসএল-এ খেলার স্বাদ পেয়েছেন জামশেদপুর, হায়দরাবাদের হয়ে খেলে।
ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সে একসময় ট্রেনিং নিয়ে আসা তারকা এখনও পর্যন্ত নিজের প্রতিভার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারেননি। তবে এই বছরই অনিকেতের কেরিয়ারে 'ব্রেক-থ্রু' মরসুম হয়ে উঠতে পারে। সময়ই অন্তত সেই সাক্ষী দিতে পারে।