আইলিগে নজির গড়া কোচ। টানা দু-বার চ্যাম্পিয়ন। প্রথমবার গোকুলাম কেরালায় যোগ দিয়েই ক্লাবকে করেছেন চ্যাম্পিয়ন। দ্বিতীয় মরশুমে আবার আইলিগের ট্রফি নিজেদের দখলে রাখা তো বটেই লিগের ইতিহাসে সবথেকে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডও গড়েছেন। গোকুলাম কেরালার ইতালিয়ান কোচ ভিনসেনজো আলবার্তো এনেস এবার জানিয়ে দিলেন, তিনি আর থাকছেন না চ্যাম্পিয়ন দলে। গোকুলাম কেরালা ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে গোকুলামের চ্যাম্পিয়ন কোচ জানিয়ে দিলেন, "দু-বার ট্রফি জয় সম্পন্ন। এবার কোচিং চালিয়ে গেলে মোটিভেশনের সমস্যা হতে পারে। তাই এবার নতুন লক্ষ্য স্থির করছি। আইএসএল বা অন্য দেশের অন্য কোনও প্রোজেক্টে দেখা যেতে পারে আমাকে।"
কয়েকদিন আগেই এএফসি কাপে এটিকে মোহনবাগানকে যুবভারতীতে পর্যুদস্ত করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, আইএসএল-আইলিগের মধ্যে আসলে কোনও ফারাকই নেই। তুঙ্গে উঠেছিল বিতর্ক। এবার অবশ্য আইএসএলে কোচিংয়ের ইঙ্গিত দিয়ে আর্মেনিয়ার যুব দলের প্রাক্তন বস বলে দিচ্ছেন, "আইএসএল দারুণ একটা সম্ভবনাময় টুর্নামেন্ট। সকলেই আইএসএলের কথা বলছেন। তবে কোনও সন্দেহ নেই বিজ্ঞাপনী প্রচার, মার্কেটিংয়ে আইএসএল অনেক এগিয়ে। সম্প্রচারও বেশ ঝলমলে। আইএসএলে বড় সমর্থক পুষ্ট দলের কোচ হতে চাই। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে চাই।"
গোকুলামকে টানা দু-বার চ্যাম্পিয়ন করার অনন্য কীর্তি রয়েছে ভিনসেনজোর (ছবি: ফেসবুক)
বেশ কিছু দলে নতুন বসের আগমন ঘটতে পারে। ইস্টবেঙ্গলও আপাতত নয়া কোচের সন্ধানে রয়েছে। কোনও আইএসএল দলের প্রস্তাব রয়েছে কিনা, সেই বিষয়ে খোলসা করে ইতালির অলিম্পিক কমিটির প্রশিক্ষকের ভূমিকা পালন করা আলবার্তো এনেস জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও দলেরই অফার নেই।
আরও পড়ুন: মেহতাব-নবিদের সুপারিশ ইস্টবেঙ্গলে! কর্তাদের নজরে একাধিক আইলিগ তারকা
ভবিষ্যতের ঠিকানা যে লিগ-ই হোক, আইলিগ এবং এএফসি কাপে মহামেডান, এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হওয়ার স্মৃতি কোচিং প্রোফাইলে দাগিয়ে রাখবেন। জানাচ্ছেন, "এটিকে মোহনবাগান এবং মহামেডানের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। ওদের ঘরের মাঠে ৪০-৪৫ হাজার দর্শকদের সামনে খেলার অভিজ্ঞতা দুরন্ত হয়ে থাকল। প্রতিপক্ষ ক্লাবের এই বিশাল দর্শক আমাদেরও তাতিয়ে দিয়েছিল। দেখে ভালো লাগল, হারের পরেও এটিকে মোহনবাগানের সমর্থকরা দলকে সমর্থন চালিয়ে গেল। আমাদের ভালো খেলারও ওঁরা তারিফ করল হাততালি দিয়ে।"
ইতিহাস গড়ে রোড শোয়ে গোকুলাম (ফেসবুক)
কলকাতার সমর্থককুল যেমন হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে এনেসের। তেমনই দলের কীর্তিতে গর্বিত তিনি। এএফসির মত আন্তঃমহাদেশীয় টুর্নামেন্টে প্রবল প্রতাপশালী এটিকে মোহনবাগানকে নিজেদের ঘরের মাঠে পর্যুদস্ত করা- বড়সড় সাফল্য মানছেন এনেস। আইলিগের ইতিহাসে প্ৰথম চ্যাম্পিয়ন ইতালিয়ান কোচ বলছেন, "এটিকে মোহনবাগানের মত হেভিওয়েট দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে বেশ কিছু শক্তিশালী দলের মোকাবিলা করতে হয়েছিল। মহামেডানে।বিরুদ্ধে খেলেছি। পাঞ্জাবের (রাউন্ডগ্লাস) মত কঠিন দলের চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই এটিকে মোহনবাগানের মুখোমুখি হই আমরা।"
আরও পড়ুন: ইস্ট-মোহনে খেলা সুপার ফরোয়ার্ড এবার টালিগঞ্জে! ঝড় উঠবে আসন্ন কলকাতা লিগে
"এটিকে মোহনবাগানের বিদেশিদের শীর্ষ পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে আমাদের বিদেশিদেরও কম যায় না- শরিফ আফগানিস্তানের জাতীয় দলের হয়ে খেলছে। লুকা মাজসেন স্লোভেনিয়ার ন্যাশনাল টিমের অংশ ছিল। বৌবা ক্যামেরুন, ড্যারেন ফ্লেচার জামাইকার জাতীয় দলের ফুটবলার। আসলে সেই ম্যাচে বিশাল সংখ্যক সমর্থকদের উপস্থিতি আমাদের চাগিয়ে দিয়েছিল।"
এটিকে মোহনবাগান বধ হয়েছে তাঁদের হাতে। তবে শেষমেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই এএফসির পরের পর্বে পা রেখেছে সবুজ মেরুন শিবির। ফেরান্দোর দলকে এশিয়ান পর্যায়ে ভালো করতে হলে ডিফেন্সে অনেক উন্নতি করতে হবে, মনে করছেন ভিনসেনজো। তাঁর বিশ্লেষণ, "আক্রমনাত্নক দল হিসেবে এটিকে মোহনবাগান সত্যি অপ্রতিরোধ্য। তবে রক্ষণ সংগঠনে ওঁদের অনেক উন্নতি করতে হবে। আমরা চার গোল দিয়েছিলাম। তবে স্কোরলাইন আমাদের পক্ষে ৫, ৬-ও হতে পারত। আক্রমণে এটিকে মোহনবাগান বেশ সাবলীল। তবে রক্ষণে উন্নতি করতেই হবে।"