ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (BCCI) সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন যে কোনও 'জনপ্রিয়' ব্যক্তিত্বের ক্রিকেট প্রশাসনে যোগ দেওয়াতে কোনও ক্ষতি নেই, এবং আমাদের উচিত, শুধুমাত্র পদবী দিয়ে কাউকে বিচার না করা।
ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভ ২০১৯-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে সৌরভ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র জয় শাহের বিসিসিআই সম্পাদক পদে মনোনীত হওয়ার যে সমালোচনা হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া দেন। তাঁর বক্তব্য, "দেখুন, ভারতে আমাদের একটা দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনি যদি কোনও খুব প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলে বা মেয়ে হন, তাহলে আপনি কোনোকিছুতেই জড়িত থাকতে পারবেন না। এই তো সেদিন শচীনকে বলতে হয়েছে যে, আমার ছেলেকে স্রেফ একজন ক্রিকেটার হিসেবে দেখুন। শচীন তেন্ডুলকর হিসেবে নয়। পদবী ভুলে গিয়ে ভালো খারাপের বিচার করুন।"
আন্তর্জাতিক কিছু উদাহরণ দিয়ে সৌরভ বলেন, "স্রেফ তেন্ডুলকরের ছেলে বলেই ও খেলতে পারবে না, তা কেন হবে? অস্ট্রেলিয়ায় তো এরকম হয় না, ইংল্যান্ডে হয় না। মার্ক ও, স্টিভ ও অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছেন। ভাই হওয়া সত্ত্বেও দুজনে ১০০ টার ওপর টেস্ট খেলেছেন। টম কারান এবং স্যাম কারান ইংল্যান্ডে খেলছেন। আমি কিন্তু এটাকে একটা ইস্যু বলে মনে করি। সবাইকেই ব্যক্তি হিসেবে বিচার করতে হবে।"
এরপর হালকা সুরেই তিনি বলেন, "সৌভাগ্যক্রমে আমার ছেলে নেই। কাল যদি রাহুল দ্রাবিড়ের ছেলেরা ক্রিকেট খেলতে চায় - ওরা অত্যন্ত ভালবাসে ক্রিকেট খেলতে, কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন লীগে নিয়মিত সেঞ্চুরি করে - এবং যদি ভালো খেলে, তবে ভারতের হয়ে খেলা উচিত।"
"জয় শাহ সম্পর্কেও একই কথা বলতে চাই। অমিত শাহের ছেলে তো কী হয়েছে? উনি নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। গত ছ-সাত বছর ধরে উনি গুজরাট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে জড়িত। ওঁকে ওঁর মতো থাকতে দেওয়া উচিত। ওঁর বাবা রাজনীতির লোক, উনি নন। ওঁকে স্বাধীনভাবে বিচার করা উচিত," বলেন সৌরভ। সঙ্গে যোগ করেন, "স্রেফ একমাস হয়েছে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। উনি যথেষ্ট অ্যাডজাস্ট করতে পারেন, দারুণ লোক, ভারতীয় ক্রিকেটের ভালো করতে চান।"
বিসিসিআই-তে যে গত ৩০-৪০ বছর ধরেই রাজনীতিকরা প্রশাসনিক পদে থেকেছেন, সেকথাও মনে করিয়ে দেন সৌরভ। তাঁর কথায়, "মিঃ ডালমিয়া যখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন অরুণ জেটলি খেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, শরদ পাওয়ার ছিলেন। মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্রিকেট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে আরও অনেকেই জড়িত থাকবেন।
"এই প্রথম এবং শেষবার নয় যে ক্রিকেট পরিচালনার দায়িত্বে প্রভাবশালীরা থাকবেন। কারণ এদেশে ক্রিকেটের বৃত্ত এত বড়। পৃথিবীর এই অঞ্চলে ক্রিকেটের কোনও মার নেই। সেদিক থেকে দেখলে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আকর্ষিত হবেনই। অনেকেই খেলাটা ভালবেসেও আসবেন, স্রেফ তাঁরা ক্ষমতাশালী বলে নয়।"
এই প্রসঙ্গে ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি সমেত আরও কিছু ক্রিকেটারের নাম করেন সৌরভ, যাঁরা দিল্লির ক্রিকেটে অরুণ জেটলির অবদানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। "আমি মিঃ অরুণ জেটলিকে চিনতাম। বোর্ডে একজন কেউকেটা হওয়ার ক্ষমতা ওঁর ছিল, কিন্তু উনি তা হন নি। খেলাটাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন। দিল্লির ক্রিকেটারদের জন্য অনেক করেছেন। বিরাট বা ইশান্তকে জিজ্ঞেস করুন। ওরা ওঁকে নিয়ে কী পরিমাণ আপ্লুত," বলেন সৌরভ।