আর একটু পরেই লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনাল। হোম অফ ক্রিকেট পাবে বাইশ গজের নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে। ক্রিকেটের মক্কায় কে করবে বাজিমাত? ইংল্যান্ড না নিউজিল্য়ান্ড? আর কয়েক ঘণ্টা পরেই সেই উত্তর পাওয়া যাবে।
চলতি বিশ্বকাপে দু'জন ক্রিকেটার ব্য়াট হাতে ত্রাসের সঞ্চার করেছেন। দেখতে গেলে তাঁরা রেয়াত করেননি কোনও বোলারকেই। ইংল্যান্ডের ব্য়াটিং লাইনআপের দুই প্রাণভোমরা- জনি বেয়ারস্টো এবং জেসন রয়। এই দুই ক্রিকেটারের সৌজন্য়েই ইংল্যান্ড আজ ওয়ান-ডে ক্রিকেটের শৃঙ্গে আরোহণ করেছে।
আজকের ম্য়াচেও তাঁরাই হতে চলেছেন ইংল্য়ান্ডের চালিকা শক্তি। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ওপেনিং জুটি তাঁরা। বলা হচ্ছে তাঁদের সর্বকালের সেরা ওয়ান-ডে ওপেনারও। কিন্তু কেন? এই প্রতিবেদনে রইল রয়-বেয়ারস্টোর ধ্বংসলীলার কিছু পরিসংখ্যান। যা তাঁদের মাহাত্ম্য় বর্ণনার জন্য় যথেষ্ট।
১) বেয়ারস্টো-রয় জুটি বেঁধে এই বিশ্বকাপে হাফ ডজন ইনিংস খেলেছেন। করেছেন ৫৪৮ রান। পার্টনারশিপের গড় ও স্ট্রাইক রেট যথাক্রমে ৯১.৩৩ ও ১১৪.৩৩। বিশ্বকাপে পরপর চারটি শতরানের পার্টনারশিপ এসেছে তাঁদের ব্য়াট থেকে। এর আগে একক বিশ্বকাপে যা কোনও দলের কোনও ওপেনার করে দেখাতে পারেননি। এটাই ওপেনিং এবং যে কোনও উইকেটেই পার্টনারশিপের বিশ্বরেকর্ড।
বিশ্বকাপ ফাইনালের লাইভ আপডেট জানুন এক ক্লিকে
২) অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার এবং অ্য়ারন ফিঞ্চের সঙ্গেই যদি ভারতের রোহিত শর্মা আর লোকেশ রাহুলের কথা বলা হয়, তাহলে দেখা যাবে তাঁরা একসঙ্গে বেশি ইনিংস খেলে বেশি রান যোগ করেছেন ঠিকই। কিন্তু তাঁদের পার্টনারশিপের গড় ও স্ট্রাইক রেট বেয়ারস্টো-রয়ের থেকে অনেকটাই কম। ওয়ার্নার-ফিঞ্চের পার্টনারশিপ গড় ৬৬.৬ এবং রোহিত-রাহুলের ৬৬.৭৯। সেখানে বেয়ারস্টো-রয়ের ৯১.৩৩। ওয়ার্নার-ফিঞ্চের পার্টনারশিপ স্ট্রাইক রেট ৯০.৮৩, রোহিত-রাহুলের ৯৪.৩৩। বেয়ারস্টো-রয়ের ১১৪.৩৩।
৩) বেয়ারস্টো-রয় চলতি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্য়াটসম্য়ানদের তালিকায় রয়েছেন প্রথম দশে। ১০ ইনিংস খেলে ৪৯.৬-এর গড়ে বেয়ারস্টোর ব্য়াট থেকে এসেছে ৪৯৬ রান। স্ট্রাইক রেট ৯৫.৭৫। দু'টি শতরান ও দু'টি অর্ধ শতরান রয়েছে তাঁর। অন্য়দিকে রয় ৭১-এর গড়ে হাফ ডজন ইনিংস খেলে ৪২৬ রান যোগ করেছেন। তাঁর স্ট্রাইক রেট ১১৭.০৩। একটি শতরান ও চারটি অর্ধ-শতরান করেছেন তিনি। দেখতে গেলে তাঁরা দু'জনেই সিংহভাগ রান করেছেন চার-ছক্কা হাঁকিয়ে। রয়ের রানের ৬১.৯৭ শতাংশই চারের সৌজন্য়ে। অন্য়দিকে বেয়ারস্টোর রানের ৬১.৬৯ শতাংশ এসেছে চার থেকেই।
৪) বেয়ারস্টো-রয়ের জুটি বেঁধে এখনও পর্যন্ত ৩২টি ইনিংস খেলেছেন। তাঁদের যৌথ প্রয়াসে এসেছে ২২২৩ রান। তাঁদের গড় ৬৯.৪৬। ওপেনিং জুটিতে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট ইতিহাসে (ন্য়ূনতম ৩০টি ওয়ানডে) এটাই সর্বোচ্চ গড়ের পরিসংখ্য়ান। এরপরেই রয়েছেন কিংবদন্তি ওপেনিং জুটি গর্ডন গ্রিনিজ-ডেসমন্ড হেইনজ। তাঁদের ওপেনিং গড় ৫২.৫৫। প্রায় ১৭ পয়েন্টের ফারাক। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলা যায় ভারতের বিখ্যাত ওপেনিং জুটি রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান কিন্তু এই তালিকায় রয়েছেন ১১ নম্বরে। তাঁদের গড় ৪৫.৮৯। বোঝাই যাচ্ছে মগডালে বিরাজমান এই ব্রিটিশ ওপেনিং জুটি কত'টা ভাল।
৫) বেয়ারস্টো-রয় ৩২ ইনিংসে ১১টি শতরানের পার্টনারশিপ খেলেছেন। এরমধ্য়ে ১০বারই ইংল্যান্ড জিতেছে। তাঁদের পার্টনারশিপে ইংল্য়ান্ডের জয়ের শতকরা হার ৭২.১৮। দেখতে গেলে গড়ে প্রতি ২.৯ ইনিংসেই তাঁরা এই ধারাবাহিকতা দেখিয়ে ইংল্য়ান্ডকে বড় রানের মঞ্চ গড়ে দিয়েছেন। ওয়ান-ডে ক্রিকেটের ইতিহাসে (ন্যূনতম ৩০টি ওয়ানডে) আর কোনও ওপেনিং জুটি তাঁদের ধারেকাছে নেই। রোহিত-ধাওয়ান (৬.৪৪ ইনিংস অন্তর সেঞ্চুরি), শচীন তেন্ডুলকর-সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায় (৬.৪৮ ইনিংস অন্তর সেঞ্চুরি)। বেয়ারস্টো-রয়ের পার্টনারশিপ রেট ৭.১১। পঞ্চাশ ওভারের ইতিহাসে ওপেনিং জুটিতে এটাই সর্বোচ্চ। রয়-বেয়ারস্টো বাদে অন্য় উইকেটে জুটি বেঁধে বেশি স্ট্রাইক রেট ও গড়ের নজির রয়েছে আরও কয়েক'জন ক্রিকেটারের। দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা-এবি ডিভিলিয়ার্স (৭২.৩৪) এবং ভারতের বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মা (৬৫.৬) এগিয়ে রয়েছেন। স্ট্রাইক রেটের বিচারে এগিয়ে থাকবেন রয়-বেয়ার স্টোরই সতীর্থ জস বাটলার-ইয়ন মর্গ্য়ান (৭.৭৮)। (এই পরিসংখ্য়ান ন্যূনতম ৩০ ইনিংস ও ১০০০ রানের ভিত্তিতে)
৬) শেষ বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত ওপেনার হিসেবে রোহিতের পর গড়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান রয়ের। রয় ছাড়া কোনও ওপেনিং ব্য়াটসম্য়ান এত দ্রুত রেটে (স্ট্রাইক রেট ১১০.৭২) রান করতে পারেননি। এই সময়ের মধ্য়ে একমাত্র নিউজিল্য়ান্ডের কলিন মানরো ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলের ভাল স্ট্রাইক রেট (১০৭.৫৪) রয়েছে রয়ের থেকে। অন্যদিকে বেয়ারস্টোকে নিয়ে মাত্র পাঁচজন ওপেনারই এই সময়ের মধ্যে গড় ৫০ ছুঁয়েছেন।
আজ কি লর্ডসের লর্ড হয়ে উঠবেন বেয়ারস্টো-রয়? অধীর আগ্রহে ক্রিকেট ফ্য়ানেরা।