ইস্টবেঙ্গল: ৩ (নন্দকুমার, ক্রেসপো, ক্লেইটন)
ওড়িশা: ২ (মরিসিও, জাহু )
East Bengal vs Odisha FC: শেষবার ট্রফি জয়ের মঞ্চে লাল-হলুদ গর্বের মশাল দেখেছিল ২০১১। তারপর কেটে গিয়েছিল আস্ত একদশক। আইলিগ, আইএসএল, ফেডারেশন কাপ গিয়েছে। তবে ট্রফি ঢোকেনি লেসলি ক্লডিয়াস সরণিতে। সেই আক্ষেপের খরা পূর্ণ হল অবশেষে। ওড়িশাকে হারিয়ে দীর্ঘ বারো বছর পর ট্রফি-শূন্যতা কাটাল ইস্টবেঙ্গল। সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন এবার লাল-হলুদ ব্রিগেড। কার্লেস কুয়াদ্রাতের হাত ধরেই স্বপ্নপূরণ হল শেষে। ওড়িশাকে ঘরের মাঠে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাঙালরা।
East Bengal vs Odisha FC Match Highlights
আর ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন-ও হল নাটকীয়ভাবে থ্রিলারে জিতে। প্ৰথমার্ধের দিয়েগো মরিসিওর গোলে পিছিয়ে পড়েছিল ইস্টবেঙ্গল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ১০ মিনিটের ব্যবধানে নন্দকুমার এবং ক্রেসপো জোড়া গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন। এরপরে ম্যাচ যখন প্রায় শেষ, ইস্টবেঙ্গলের হাতের মুঠোয় কাপ। সেই সময়েই ফের টুইস্ট। আহমেদ জাহু ৯৮ মিনিটে, অতিরিক্ত সময়ে গোলশোধ করে ম্যাচ নিয়ে যান এক্সট্রা টাইমে। এক্সট্রা টাইমের দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নির্ণায়ক গোল করে যান ক্যাপ্টেন ক্লেইটন।
আরও পড়ুন: মহিলা ফুটবলে এগিয়ে বাংলাদেশ-ই! ইস্টবেঙ্গলের জয়ের জন্য আকুল প্রার্থনায় লাল-হলুদের বাংলাদেশি কন্যে
ঘরের মাঠের সমর্থকদের সামনে খেলতে নেমেছিল ওড়িশা। প্ৰথম থেকেই সেয়ানে সেয়ানে দুই দল লড়াই চালাচ্ছিল। ৪ মিনিটে প্ৰথম সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল। মাঝমাঠে ওড়িশা ফাউল করার পর ফ্রিকিক নেন পারদো। সেই শট প্রাথমিকভাবে ক্লিয়ার করলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় নন্দকুমার শট নেন বক্সের বাইরে থেকে। যা সেভ করে যান রালতে।
East Bengal vs Odisha FC Head-to-Head Record
১২ মিনিটে রয় কৃষ্ণ ডানপ্রান্তিক আক্রমণে উঠে জোরালো শট নেন বক্সের বাইরে থেকে। যা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ঠিক তিন মিনিট পর ওড়িশা আরও একটি গোলের সুযোগ পায়। সুযোগ তৈরির কারিগর ছিলেন রয় কৃষ্ণ। কৃষ্ণের পাস ধরে ক্রস রাখেন গদার্দ। তবে মরিসিও জালে বল জড়াতে পারেননি।
৩২ এবং ৩৩ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের জোড়া ফ্রিকিক দারুণভাবে সেভ করেন ওড়িশা গোলকিপার। প্ৰথমে পারদোর শট ফিস্ট করে দেন রালতে। ঠিক পরের মুহুর্তেই ক্লেইটনের ফ্রিকিক থেকে হেডে প্রায় বল জালে জড়িয়ে দিয়েছিলেন সিভেরিও। তবে অনবদ্য রিফ্লেক্স সেভে নিশ্চিত গোলের সুযোগ বাঁচিয়ে দেন সেই রালতে।
তবে গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ওড়িশাকে। কৃষ্ণ-এর পা থেকেই আসে গোলের সুযোগ। জাহুর ফ্রিকিক থেকে বল রিসিভ করে কৃষ্ণ ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারদের নাস্তানাবুদ করে পাস বাড়ান মরিসিওর উদ্দেশ্যে। তারপরেই ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার গ্যালারিতে হিল্লোল তুলে ম্যাচের প্ৰথম গোল করে যান।
বিরতিতে ইস্টবেঙ্গল কোচ জোড়া বদল ঘটান। সিভেরিও এবং মন্দারকে তুলে কুয়াদ্রাত নামিয়ে দেন মহেশ এবং নুঙ্গাকে। আর পরিবর্ত হিসাবে নেমেই ম্যাজিক দেখান মহেশ। মহেশের দুর্দান্ত পাস ধরেই ইস্টবেঙ্গলের হয়ে সমতা ফেরান নন্দকুমার। সমতা ফেরানোর ঠিক ১০ মিনিট পর ইস্টবেঙ্গলকে ২-১'এ এগিয়ে দেন ক্রেসপো। বক্সের মধ্যে বোরহাকে ফাউল করেছিলেন মুর্তাদা ফল। সেই পেনাল্টি ধরেই ইস্টবেঙ্গল লিড নেয় ক্রেসপোর গোলে।
আরও পড়ুন: ৪ ইস্যুতে টলে গেল কোচ স্টিম্যাচের চাকরি! ভারতীয় ফুটবলের বেনজির বিদ্রোহ প্রকাশ্যে
এরপর টানা ইস্টবেঙ্গল নিজেদের দখলে বল রেখে আক্রমণ শানিয়ে গেলেও চীনের প্রাচীর হয়ে উঠেছিলেন গোলকিপার রালতে। আক্রমণে গতি আনতে বিষ্ণুকে তুলে সুপার কাপে ইস্টবেঙ্গলের আবিষ্কার সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নামিয়ে দেন কোচ কুয়াদ্রাত। শেষদিকে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের গতি স্লো করার নীতি নিয়েছিল। তবে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে মোড় ঘুরিয়ে দেয় পেনাল্টি। মরিসিওকে বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন প্রভসুখন গিল। সেই পেনাল্টি থেকেই আহমেদ জাহুর গোল এবং ম্যাচের এক্সট্রা টাইমে গমন!
বাকিটা স্রেফ ইতিহাসে। প্রথমার্ধ গোলশূন্য ছিল ম্যাচ। সৌভিক চক্রবর্তী নিজের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পর ১০ জনে হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। এক্সট্রা টাইমের দ্বিতীয়ার্ধে নরিন্দর সিংয়ের ভুলে ক্লেইটন জয়সূচক গোল করে যান।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন গিল, রাকিপ, পারদো, হিজাজি মাহের, মন্দার রাও দেশাই, সৌভিক, সাউল ক্রেসপো, বোরহা, ক্লেইটন, নন্দকুমার, সিভেরিও
ওড়িশা এফসি: রালতে, এমে রানওয়েদে, মুর্তাদা ফল, ডেলগাদো, জেরি, পুইতিয়া, আহমেদ জাহু, ঈশাক, সিওয়াই গদার্দ, রয় কৃষ্ণ, দিয়েগো মরিসিও