ইস্টবেঙ্গলে এখন সাজো সাজো রব। প্রাক শতবর্ষ উদযাপনের গন্ধে ম..ম করছে লাল-হলুদ তাঁবু। তিন বছর ধরে চলবে ক্লাবের ১০০ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠান। ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে আগেই। ঐতিহাসিক এই বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে কোনও রকম খামতি রাখছে না কলকাতা ময়দানের এই বটবৃক্ষ। "আগে আগে দেখো, হোত হ্য়ায় কেয়া"! এমনটাই ক্লাব কর্তাদের হাবভাব।
বুধবার বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে শতবর্ষে উপলক্ষে প্রথম 'মিট দ্য় প্রেস' করল ইস্টবেঙ্গল। সামনেই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা দিবস। বিশেষ এই দিনের কথা মাথায় রেখেই সেঞ্চুরি বছরের অনুষ্ঠান সাজিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। চলতি মাসের শেষ থেকে পরের মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত একাধিক ইভেন্ট রয়েছে তাদের। সেন্টেনারি সেলিব্রেশনে কী কী অনুষ্ঠান থাকতে চলেছে তা জানিয়ে দিল ইস্টবেঙ্গল।
আরও পড়ুন: দলবদলের সবচেয়ে বড় চমক! ফের ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে বাইচুং ভুটিয়া
ক্লাবের কর্মকর্তা থেকে একঝাঁক প্রাক্তন ফুটবলারও সভ্য়সমর্থকদের উপস্থিতিতে এই অনুষ্ঠান এক অন্য় মাত্রা নিয়েছিল। একেবারে চাঁদের হাট বসে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলে। সুরজিত সেনগুপ্ত থেকে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্য়ায়, স্বপন সেনগুপ্ত থেকে মিহির বসু, রঞ্জিত মুখোপাধ্য়ায়, প্রসেনজিত বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, অ্য়ালভিটো ডি-কুনহা, বাইচুং ভুটিয়া কে না ছিলেন এদিন।
ক্লাবকর্তাদের মধ্য়ে মঞ্চে পাওয়া গেল সভাপতি ডাক্তার প্রণবরঞ্জন দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক কল্য়াণ মজুমদার, সহসচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত ও কর্মকমিতির সদস্য় দেবব্রত সরকারকে। তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন ক্লাবের তিন প্রাক্তন কিংবদন্তি ফুটবলার মনোরঞ্জন-ভাস্কর ও বাইচুং। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ক্লাবের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে তৈরি করা বিশেষ লোগোর উন্মোচন করলেন প্রণবরঞ্জন দাশগুপ্ত। বিশেষ একটি কেক কেটেই শতবর্ষ উদযাপনের দামামা বাজিয়ে দেওয়া হলো।
আগামী ২৮ জুলাই এক অন্য়রকম রবিবাসরীয় সকালের সাক্ষী থাকতে চলেছে তিলোত্তমা। ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ চন্দ্র চৌধুরির কুমোরটুলি পার্কের বাড়ির সামনে থেকে সকাল ৯টায় মশাল মিছিল শুরু হবে সুকুমার সমাজপতির নেতৃত্বে। গ্রে স্ট্রিট থেকে বিধান সরণী হয়ে গণেশ চন্দ্র অ্য়াভিনিউ ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে সেই মিছিল আসবে ক্লাবে। সুকুমারবাবু মশাল তুলে দেবেন বাইচুং ভুটিয়ার হাতে। ক্লাবেই সেই জ্বলন্ত মশাল রেখে দেওয়া হবে।
এরপর পয়লা অগাস্ট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা দিবসে বিশ্বের ২০০টি দেশে ক্লাবের পতাকা উত্তোলন করবেন ইস্টবেঙ্গল ফ্য়ানেরা। এরপর বিকেল পাঁচটায় নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়াম দেখবে নক্ষত্র সমাবেশ। শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গলের চিফ প্য়াট্রন হয়েছেন রাজ্য়ের মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তাঁর সঙ্গেই শহরের মেয়র ববি ফিরাদ হাকিম ও রাজ্য়ের ক্রীড়া মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে সম্মানিত করা হবে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে। ইস্টবেঙ্গল একই সঙ্গে সম্মান জানাবে দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক ও সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়কে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসনে থাকবেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়।
এদিন শুধুই সৌরভ নন, থাকছেন দেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কপিল দেবও। ৮৩-র মহানায়ককে এবার ভারত গৌরব সম্মানে ভূষিত করছে ইস্টবেঙ্গল। জীবনকৃতী সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন লাল-হলুদের দুই প্রাক্তন কিংবদন্তি ফুটবলার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্য়ায় ও মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। বর্ষসেরা ফুটবলারের (২০১৮-১৯) পুরস্কার পাচ্ছেন লালডানমাওয়াইয়া রালতে। কোচ অফ কোচেস এর পুরস্কার পেতে চলেছেন পিকে বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। এবছর ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ‘আইডেন্টিফাইং অ্য়ান্ড নারচারিং দ্য় আইকন’-এর পুরস্কার তুলে দিচ্ছে বাইচুংয়ের হাতে।
১৩ অগস্ট হবে শেষ দফার অনুষ্ঠান। সেদিন সকাল দশটায় রক্তদান শিবির ও ফ্রি মেডিক্য়াল চেক-আপ হবে ক্ষুদীরাম অনুশীলন কেন্দ্রে। এদিনই বিকেল পাঁচটা থেকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হবে অপর অনুষ্ঠানটি। সেখানে সাহিত্য়িক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্য়ায় ও অভিনেতা রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বিশেষ অতিথি হয়ে আসছেন। এই মঞ্চেই ইস্টবেঙ্গলের জীবিত সব অধিনায়কদের সম্মানিত করবে ইস্টবেঙ্গল। ক্লাবকর্তা দেবব্রত সরকার জানিয়েছেন বিদেশি ক্য়াপ্টেনদেরও আনার চেষ্টা চলছে। মজিদ বিসকরের আসার বিষয়ও তাঁরা চার-পাঁচদিনের মধ্য়ে চূড়ান্ত ঘোষণা করে দেবেন।
বাইচুং এই অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন যে, শেষ ১০০ বছরে ভারতীয় ফুটবলের অন্য়তম সাপ্লাই লাইন ছিল ইস্টবেঙ্গল। এই ক্লাবের জন্য়ই ভারতীয় ফুটবল এই জায়গায় আসতে পেরেছে।