বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত আজ বাংলাদেশের মুখোমুখি। অপরাজেয় থেকে ফাইনালে খেলতে নামছে ভারত। আর ভারতকে কার্যত সেরা দল হিসেবে ফাইনালে তোলার অন্যতম নায়ক কার্তিক ত্যাগী। ভারতীয় পেস লাইন আপে আগামী দিনের তারকা হিসেবে অনেকেই চিহ্নিত করে ফেলেছেন কার্তিককে।
সেই কার্তিকই বোলিং বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে দলকে তুলেছেন ফাইনালে। সাফল্যের এই রংমশালের পিছনের কাহিনী কিন্তু অনেকেরই অজানা। বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখতেন শৈশব থেকে। ক্রিকেট পাগল ছেলের স্বপ্নপূরণ করতে কার্পণ্য করেননি পিতা। নিজের বসত জমিটাই বিক্রি করে দিয়েছিলেন তিনি ছেলের ক্রিকেটের কেরিয়ারে অর্থ যাতে কোনও সমস্যা না হয়।
পূর্ব উত্তরপ্রদেশের ধানোয়ায় নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে কার্তিক। শৈশবেই বাড়ি থেকে ছেলের লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। পড়াশুনোয় মাঝারিমানের। তাই ক্রিকেটার হিসেবে যাতে কার্তিক স্বপ্নের কেরিয়ার গড়তে পারে, তাই পুরো পরিবারই কার্তিকের পাশে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন দ্রাবিড় শিষ্যকে আজ ফাইনালে আউট করাই চ্য়ালেঞ্জ ভারতীয়দের
পেসার হওয়াটা ছোট থেকেই টানত কার্তিককে। মেরুটের একটি ক্রিকেটের অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। শৈশবের কোচেরা বলে থাকেন, কার্তিকের সবথেকে বড় গুন দ্রুত শিখতে পারেন। এই শেখার গুনের জোরেই অচিরেই ক্লাব ক্রিকেটে নজর কেড়ে নিয়েছিলেন কার্তিক। তারপরে ধীরে ধীরে উত্তরপ্রদেশের অনুর্ধ্ব-১৪ দলেও নিয়মিত সদস্য হয়ে গিয়েছিল।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল মাত্র ১৬ বছরে। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পাখা মেলার সময়েই আচমকা ধাক্কা নেমে এসেছিল কার্তিকের কেরিয়ারে। চোটে জর্জরিত হতে হয়েছিল। প্রায় ছমাস মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন বিশ্বকাপে ফাইনালে ভারত বনাম বাংলাদেশ! কোন চ্যানেলে কখন চোখ রাখবেন
সেই দুঃসময়ে আর্থিক সমস্যায় প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল। বাবা কাল বিলম্ব না করে নিজের বসত জমির কিছুটা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কার্তিক একবার বলেছিলেন, "ওয়ার্ম আপ ম্যাচে ফুটবল খেলতে গিয়ে চোট পেয়েছিলাম। তারপরে কোমড়ের হাড়েও চোট হয়ে যায়। আমার চিকিৎসার পিছনে জলের মতো অর্থ খরচ হয়ে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে সঞ্চিত অর্থও ফুরিয়ে আসছিল। পাঁচ মাস পরে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার কাছে আবেদন করি যাতে এনসিএ-তে আমার চিকিৎসার নাম প্রস্তাব করা হয়। তারও ছয় মাস পরে সেই সুযোগ এসেছিল। ততদিনে আমার বাবা জমি বিক্রি করে দিয়েছিল।"
চলতি টুর্নামেন্টে বল হাতে বিধ্বংসী মেজাজে রয়েছেন এই তারকা ক্রিকেটার। কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার ৪জনকেই আউট করেছিলেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত কার্তিকের পকেটে ১১ উইকেট।
সামনে একটাই হার্ডল বাংলাদেশ! সেই বাধা পেরোলেই ট্রফি নিয়ে উল্লাস করার স্বপ্নপূরণ হবে। কঠিন চোট সারিয়ে যিনি প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রেখেছেন, তাঁর কাছে এটা কীই বা বাধা!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
https://t.me/iebangla