/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/real-kashmir_cover.jpg)
টেনশনে ভূস্বর্গ, ডুরান্ডে খেলতে এসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন রিয়েল কাশ্মীরের (ডুরান্ড মিডিয়া)
যুদ্ধে বাতাস ভারী হয়। বারুদের গন্ধে আশঙ্কা জমে। আর টেনশনের স্রোতে নামে আশঙ্কার কার্ফু। প্যালেট গান, সেনা জওয়ান, যুদ্ধংদেহী মেজাজ আর জলপাই পোশাকের ভিড়ে অবশ্য ফুটবলটাও খেলা যায়। শেখাচ্ছে কাশ্মীর। জানছে বিশ্ব।
রিয়েল কাশ্মীর এফসি! ভূস্বর্গের উপত্যকায় ইতিহাস লিখেছিল দু-মরশুম আগেই। দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব থেকে যেদিন ভারতীয় ফুটবলের মূলস্রোতে নাম লিখিয়েছিল লেপার্ডরা। প্রথমবার খেলতে নেমে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি কাশ্মীর। তবে গোটা বিশ্বের কুর্নিশ কুড়িয়ে নিয়েছিল তাঁরা। আইলিগে প্রথমবার খেলতে নেমেই তৃতীয়স্থান অর্জন করে যদি চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম হার্ডল পেরিয়ে থাকে ডেভিড রবার্টসনের দল। তাহলে ভূস্বর্গের স্ট্যাটাস বদলে যাওয়ার পরেই শহরে খেলতে এসে নতুনভাবে 'চ্যাম্পিয়ন' রিয়েল কাশ্মীর এফসি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/real-kashmir_4.jpg)
৩৭০ ধারা রদ করার পরে সেনা জওয়ানদের ভারি বুটের শব্দে তোলপাড় যখন গোটা কাশ্মীর উপত্যকা, তখনই প্রাক মরশুম টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছিল রিয়েল কাশ্মীর এফসি। সেখানে দল গুছিয়ে নেওয়ার কাজে মোটামুটি সফল ডেভিড রবার্টসনের দল। গ্রুপ পর্বে শীর্ষস্থান দখল করে সেমিফাইনালে ওঠার পরে শেষ চারে অল্পের জন্য মোহনবাগানের বিরুদ্ধে হেরে ছিটকে যাওয়া।
আরও পড়ুন পায়ে হেঁটে, ইচ্ছেমতো নর্মদা (সপ্তম চরণ)
এতো গেল শুকনো পরিসংখ্যানের অঙ্ক, যা দিয়ে মাঠের মধ্যের পারফরম্যান্স মাপা যায় নিক্তিতে নিক্তিতে। তবে মাঠের বাইরে বৃহত্তর ক্ষেত্রে অগাস্টেই চ্যাম্পিয়ন কাশ্মীর। মহম্মদ হামাদের কথাই ধরা যাক। গত বছর থেকেই আইলিগে দেশের বিভিন্ন শহরে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলছেন তিনি। প্রতিটি ম্যাচে খেলতে নামার আগে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাঁর দাবি থাকত একটাই। তা হল, ক্লাবের জন্য় প্রার্থনা করা। তবে ডুরান্ডের সময়েই ব্যতিক্রম। কাশ্মীরকে কার্যত নিরাপত্তার জন্য মুড়ে ফেলার পরে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই হামাদ কলকাতায় খেলতে এসে একবুক অনিশ্চয়তা নিয়েই খেলে গিয়েছেন। যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবারের সঙ্গে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/real-kashmir_1.jpg)
হামাদ ব্রিটিশ প্রচার মাধ্যম গার্ডিয়ান-কে বলছিলেন, "যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার পরে পরিবারের সঙ্গে কার্যত কোনও কথাই হয়নি। প্রার্থনা করার কথাও জানাতে পারিনি। সকলের মতোই বাড়িতে বন্দি হয়ে রয়েছেন মা। জানি না, পরিবারের কাছে পর্যাপ্ত খাবার, ওষুধ রয়েছে কিনা, তা-ও জানি না।"
যাইহোক, কাশ্মীরের প্রথম ক্লাব হিসেবে ভারতীয় ফুটবলের মূলস্রোতে রিয়েল কাশ্মীরের ওঠার নেপথ্যে ডেভিড রবার্টসন। তিনি কোচ হিসেবে চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন ২০১৭-র জানুয়ারিতে। প্রায় দেড় বছর পরে তৈরি হয়েছিল নয়া ইতিহাস।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/real-kashmir_2.jpg)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় ফিনিক্সে দশ বছর ধরে একটি ক্লাবের দায়িত্বে ছিলেন রবার্টসন। ওখান থেকেই চ্যালেঞ্জ নেওয়া শুরু স্কটিশ কোচের। প্রস্তাব ছিল বিভিন্ন ক্লাবের। তবে চ্যালেঞ্জিং কোনও দায়িত্ব চাইছিলেন। তিনি এমন কোনও একদম নতুন ক্লাব খুঁজছিলেন, তখনই রিয়েল কাশ্মীরের অফার আসে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/david-robertson.jpg)
ডেভিড রবার্টসনের ফুটবল প্রোফাইল সত্যিই রত্নখচিত! কিন্তু ফুটবল বিশ্বের জনপ্রিয়তম বৃত্তের বাসিন্দা হয়েও ফুটবল-হীন কাশ্মীরে কেন? ৪৯ বছরের স্কটিশ ভদ্রলোক বলছিলেন, "কাশ্মীরে আসার আগে একবারও ভাবিনি। বলা ভাল, না আসার কথা মাথাতেই আনিনি। জানতাম ভারতের প্রতিটি কোণেই রোদ ঝলমলে। তবে এখানে আসার পর দ্বিতীয় দিনেই তুষারপাত দেখেছিলাম।" পাশাপাশি আরও জানিয়েছিলেন, "আমার মনে হয়, যে সমস্যার কথা বলা হয়, তা মিডিয়ায় একটু বেশি-ই লেখা হয়। শ্রীনগরের রাস্তায় যেকোনও সময়ে হাঁটতে বেরতে পারি। এখানকার স্থানীয়রাও বন্ধুবৎসল।"
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/08/real-kashmir_3.jpg)
কাশ্মীরে আসলে রূপকথা এনেছে রিয়েল কাশ্মীর। তবে রূপকথায় খলচরিত্রের মতোই আবির্ভাব ঘটেছে রাজনীতি। ভারতের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আজাদি স্লোগান দেওয়া এবং জওয়ানদের লক্ষ্য় করে পাথর ছোঁড়া তরুণরাই আশ্রয় নিয়েছেন ফুটবলে। আর ফুটবলেই বাঁচতে চাইছেন কাশ্মীরী যুবকরা। ভূস্বর্গে টেনশন বুকে নিয়ে কাশ্মীরী ফুটবলারদের শহরে খেলে ডুরান্ডে নতুন ইতিহাস লিখেছেন। এবার চ্যালেঞ্জ আরও বড়।