অনিকেত কেশরীর স্মৃতি ফিরিয়ে এনে আবারও খেলার মাঠেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল আরেক অনিকেত। ২১ বছরের উদীয়মান ক্রিকেটার অনিকেত শর্মা। ইতিমধ্যেই বাংলার ক্রিকেট মহলে বেশ পরিচিত নাম। রোজকার মত মঙ্গলবার সকালে টালা পার্কের মাঠে গিয়েছিলেন অনুশীলন করতে। বুধবার ক্লাব ক্রিকেটে মিলন সমিতি বনাম পাইকপাড়া ক্লাবের খেলা ছিল। সেই ম্যাচের কথা মাথায় রেখেই পাইকপাড়ার সতীর্থদের সঙ্গে মাঠে নেমেছিলেন অনিকেত।
কিছুক্ষণ অনুশীলনের পরে মূলত অনিকেতের উদ্যোগেই ফুটবল খেলার প্রস্তুতি নেয় টিম। সেই উদ্দেশ্যে শুরু হয় ওয়ার্ম আপ। ওয়ার্ম আপ ঠিক করে শুরু হওয়ার আগেই হঠাৎই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অনিকেত। সতীর্থরা কাছাকাছি আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অনিকেতকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে হৃদরোগই মৃত্যুর কারণ, তবে ময়নাতদন্তের পরেই সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যাবে।
আদতে মেদিনীপুরের বাসিন্দা অনিকেত গত ১১ মাস ধরে পাইকপাড়ার হয়ে খেলছিলেন। খেলার সূত্রেই কলকাতায় থাকতে শুরু করেন তিনি। প্রাক্তন ক্রিকেটার সুশীল শিকারিয়ার হাত ধরে মেদিনীপুর থেকে ময়দানে খেলতে এসেছিলেন অনিকেত। মূলত ডানহাতি ব্যাটসম্যান হলেও অফব্রেক বোলিংও করতেন। অলরাউন্ডার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন ক্রিকেট মহলে। বাংলার পরবর্তী উঠতি তারকা মনে করা হচ্ছিল তাঁকে। শোকস্তব্ধ সুশীলবাবুর মতে, "একজন প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটারের এভাবে মৃত্যু ভাবতেই পারি না।" সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অনিকেতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সিএবি-র যুগ্ম সেক্রেটারি অভিষেক ডালমিয়া জানিয়েছেন, সিএবির সকলেই এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ। বুধবারের ম্যাচটি আপাতত পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘটনার আকস্মিকতায় মর্মাহত।
সতীর্থরা প্রথমে ভেবেছিলেন, মজা করছেন অনিকেত। তারপর দু তিনবার ডেকেও সাড়া না পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। “তখনই অ্যাপ ক্যাব ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না।" পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোনোরকম শারীরিক অসুস্থতা ছিল না তাঁদের ছেলের। বাবা কমল শর্মা ও মা নিপা দেবীর ভরসা ছিল ছেলের ওপর। জানতেন, একদিন বড় ক্রিকেটার হবেন তাঁদের একমাত্র সন্তান। বাবা মায়ের এই স্বপ্ন আর পূরণ করা হল না অনিকেতের। একইসঙ্গে ময়দানের পরিকাঠামো নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল অনিকেতের মৃত্যু।