"ও দাদা! কেকেআরের জার্সি কত?" গ্র্যান্ড হোটেলের উল্টো ফুটে বিধান মার্কেটের দেওয়ালে লাইন দিয়ে আইপিএলের জার্সির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। সেরকমই একটা দোকানকে বেছে নিয়েছিলেন নাইট রাইডার্সের এক ফ্যান। তিনিই প্রশ্নটা করেছিলেন জার্সি বিক্রেতা সিদ্দিকি নস্করকে। সিদ্দিকি বললেন, "২৫০ টাকা।" কেকেআরের সেই ফ্যান বিস্মিত হয়ে বললেন, "সে কী! এই ক'দিন আগেও তো আপনি দেড়শো টাকায় এই কেকেআরের জার্সি বিক্রি করছিলেন, এক লাফে ১০০ টাকা বেড়ে গেল?" সিদ্দিকি উত্তরে যে বাউন্সারটা দিলেন সেটা ওই ফ্যানের কাছেও প্রত্যাশিত ছিল না। জানালেন, "আরে ধোনি-রাসেলদের ফর্ম দেখুন, যা খেলছে, দাম বাড়বে না তো কি কমবে?" উত্তর শুনে ফ্যান সোজা হাঁটা দিলেন অন্য দোকানের উদ্দেশ্যে।
ওপরের কথোপকথন পড়ে এটা বুঝে নিতে অসুবিধে হবে না, যে রবিবাসরীয় ইডেনের গ্য়ালারি দেখতে চলেছে শুধু হলুদ আর বেগুনি রঙের ছটা। আফটার অল, 'কলকাতার জামাই' মহেন্দ্র সিং ধোনি তাঁর দলবল নিয়ে খেলতে নামছেন ক্রিকেটের নন্দন কাননে। ধর্মতলায় অস্তগামী চৈত্র সেলের বাজারে বৈশাখের আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছে ক্রিকেট আর বিনোদনের সেরা ককটেল। নেশাতুর শহরবাসী ডুবে রয়েছেন রাসেল-ধোনি ম্যানিয়ায়।
ফি-বছরের মতো এবারও জার্সি আর পতাকার একটা আলাদাই চাহিদা রয়েছে। ফেসবুকের ভাষায়, "হ্য়াজ আ ডিফারেন্ট ফ্যান বেস।" এবার প্রিয় দলের লোগো দেওয়া শর্টস আর টুপিও চোখ টানছে অনেকের। শনিবারের ভরা দুপুরের কাঠফাটা রোদকে উপেক্ষা করেই কলকাতা ও চেন্নাইয়ের ফ্যানেরা কিন্তু জার্সি আর মার্চেন্ডাইজের খোঁজে চলে এসেছিলেন শহরের প্রিয় ক্রীড়া সরঞ্জামের বাজারে। ম্যাচের আগের দিন মার্কেটে ঢুঁ মেরেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
আরও পড়ুন: কালোবাজারিদের স্বর্গোদ্যান! কলকাতায় চারগুণ দামে বিকোচ্ছে টিকিট
সিদ্দিকিই বললেন, "কলকাতার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বিক্রি হচ্ছে চেন্নাইয়ের জার্সি। কলকাতা হোম টিম, বিক্রি তো হবেই। কিন্তু ধোনির জার্সির অসম্ভব চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে আরসিবি-র ফর্ম যেমনই থাকুক না কেন, বিরাটের প্রচুর ফ্যান রয়েছে কলকাতায়। ফলে আরসিবি-র জার্সিরও একটা চাহিদা আছে।" আরেক জার্সির দোকানদার ওমর আসিফ বলছেন, "আমরা ১৫০ টাকা করেই কলকাতা-চেন্নাইয়ের জার্সি বিক্রি করছি এখনও। সব জার্সির ওই একটাই দাম। যাঁদের কাছে ভাল কোয়ালিটির আর রাবার প্রিন্টের জার্সি আছে তাঁরা বেশি দামে বিক্রি করছেন। আইপিএলের সময় প্রতিবারই জার্সির ভাল চাহিদা থাকে। নাহলে সারা বছর টুকটাক বিক্রি হয় আমাদের।"
ফ্যানেরা শুধু জার্সি কিনেই চলে যান না, তাঁরা বিধান মার্কেটের ভেতরে ঢুকেই জার্সির পিছনে প্রিয় খেলোয়াড়ের নাম ও নম্বর লিখিয়ে আলাদা তৃপ্তি অনুভব করেন। এরকম বেশ কয়েকটা দোকানই রয়েছে ওখানে। যেমন সিং স্পোর্টস। জার্সিতে নাম আর নম্বর ছাপানোর ফাঁকেই রাহুল পোদ্দার বললেন, "ধোনি আর রাসেলের খুব ডিমান্ড রয়েছে। আমরা দাম বাড়াইনি। লেটার পিছু পাঁচ টাকা করেই রেখেছি। এই আইপিএলে ২০০-র ওপর জার্সি ছাপিয়ে ফেললাম। ম্যাচের আগের দিন ডিমান্ড সবচেয়ে বেশি থাকে।"
বাবি স্পোর্টসের বাচচু দে ময়দান মার্কেটে পরিচিত মুখ। শুধু জার্সিই নয়, কেকেআরের ফ্ল্যাগ ছাপানোর কাজও করেন তিনি। বাচচু বললেন, "৬০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত দামের ফ্ল্যাগ রয়েছে। কেউ অর্ডার দিয়ে বড়ও বানান। তার দাম অবশ্যই আলাদা হয়। এবারও অনেকেই ফ্ল্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন। এতগুলো বছরে আইপিএলের মার্কেট মোটামুটি একই আছে।"
ময়দান মার্কেট আর তার আশেপাশের চত্বর ঘুরে দামের একটা আন্দাজ পাওয়া গেল। মোটামুটি জার্সি শুরু ১৫০ টাকা থেকে। সর্বোচ্চ ৩৫০। এছাড়াও টুপি পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকায়। শর্টস ১০০ টাকা। যাঁরা অনলাইনে হাজার হাজার টাকা দিয়ে অফিসিয়াল জার্সি বা মার্চেন্ডাইজ কেনেন না, তাঁরা বেছে নেন এই মার্কেটকেই। বছরের পর বছর বিধান মার্কেটই তাঁদের ফ্যানসত্বায় জ্বালানি ভরছে।