Advertisment

সাব-ইনস্পেক্টর সঙ্গীতা বেরার মা হওয়া থেকে রাগবি মাঠে ফেরার গল্প

মা হওয়ার ঠিক তিন মাসের মাথায় সঙ্গীতা মাঠে ফিরে আসেন, এবং আঠারো মাসের মাথায় দলের জার্সি গায়ে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন আগামী ২ জুন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
rugby-2-759

Sangeeta Bera returned to the paddock three months after her baby’s birth.

'মা হতে গেলে বিশেষ যোগ্যতা লাগে না, খেলতে গেলে লাগে'

Advertisment

ইন্টারভিউয়ের শুরুতেই তিনি বলে উঠলেন, "আমার মা হওয়ার অভিজ্ঞতা কিন্তু আর পাঁচটা মেয়ের চাইতে বেশ খানিকটা আলাদা। অন্য মেয়েদের মত মা হওয়ার উত্তেজনার বদলে আমি বরং একটানা বাড়িতে বসে ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলাম।" তার ঠিক আগেই তিনি ব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছিলেন ভারতের রাগবি সেভেন টিমের প্রপস হিসাবে। ততদিনে কলকাতার স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার স্প্রিন্টের ময়দান ছাড়িয়ে রাগবির মাঠই হয়ে উঠেছে তাঁর ধ্যানজ্ঞান।

তিনি কলকাতা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর সঙ্গীতা বেরা। ২০১৫ সালের প্রি-অলিম্পিক কোয়ালিফায়ারে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাওয়া এবং অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর সঙ্গীতার কানে পৌঁছয় প্রায় একইসঙ্গে। স্মৃতি হাতড়ে সঙ্গীতা বললেন, "একদিন ডাক্তার ডেকে বললেন, বাচ্চার ওজন অন্তত চার কেজি, তাই নর্ম্যাল ডেলিভারির ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। সেসময় প্রথম এসিয়ান লেভেল খেলতে সিঙ্গাপুর পাড়ি দিয়েছে গোটা দল।"

ভারতীয় রাগবি দলের লক সঙ্গীতা সেসময় ডাক্তারের সিদ্ধান্তে যথেষ্টই বিরক্ত হয়েছিলেন। "বাচ্চার ওজন চার কিলো হবার দরুণ ডাক্তার নর্ম্যাল ডেলিভারির ঝুঁকি নিতে চাননি। তাঁর মত ছিল, ৩৫ বছর বয়সে আমি হয়ত প্রসূতি যন্ত্রনা সহ্য করতে পারব না। শেষে বেশ বিরক্ত হয়েই আমি জানাই যে আমি একজন আর্ন্তজাতিক রাগবি খেলোয়াড়, তাই এই যুক্তি হয়ত আমার ক্ষেত্রে ততটা প্রাসঙ্গিক নয়।"

"তারপরও ডাক্তাররা আমাকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের মত ছিল এই বয়সে এরকম ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। কিন্তু আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী এবং ফিট ছিলাম। রাগবি মাঠে ফিরতে হলে আমারও নর্ম্যাল ডেলিভারি ছাড়া উপায় ছিলনা কোনও," মৃদু হেসে বলেন সঙ্গীতা।

publive-image সন্তানের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে সাব-ইন্সপেক্টর সঙ্গীতা বেরা

সন্তান জন্মাবার পর ডাক্তার তাঁর হাতে একটি সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেন। "তাঁরা নর্ম্যাল ডেলিভারি লেখাটির নিচে দাগ দিয়ে দিয়েছিলেন। আমি খুব একটা গর্বিত হইনি কারণ মা হওয়ার চেয়ে আমার কাছে বেশি প্রয়োজনীয় ছিল রাগবির মাঠে ঘুরে দাঁড়ানো," হাসতে হাসতে বলেন তিনি।

মা হওয়ার ঠিক তিন মাসের মাথায় সঙ্গীতা মাঠে ফিরে আসেন, এবং আঠারো মাসের মাথায় দলের জার্সি গায়ে সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন আগামী ২ জুন। সেরেনা উইলিয়ামস এবং এমসি মেরী কমের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "মা হতে কোন বিশেষ যোগ্যতা লাগে না। কিন্তু খেলার মাঠে টিকে থাকতে গেলে প্রয়োজন শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন। প্রেগন্যান্সির সময় আমার ওজন হয়েছিল প্রায় ৯৫ কেজি, আর এখন ৬০।"

২০১০ সালে জঙ্গল ক্রো-র কোচ পল ওয়ালশের নেতৃত্বে তিনি স্কাউট করাকালীন রাগবির বল ছুঁয়েই দেখেননি। "তখন আমার জীবন জুড়ে ছিল শুধুই স্প্রিন্টের ময়দান। তারপর একসময় ১০০ মিটারের মাঠ আমাকে আর তত ছুঁত না। ততদিনে আমার জীবনে চলে এসেছে রাগবি। এই মাঠে আমি প্রতিদিন নতুন কিছু শিখি," বলেন তিনি।

সঙ্গীতার স্বামী মুম্বইবাসী রামকৃষ্ণ পরিদা বম্বে জিমখানায় কোচিং করালেও সঙ্গীতা ক্যাম্পে গেলে সন্তানের দেখভালের জন্য তিনি কলকাতায় আসেন। "খুব কম মানুষই দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। খেলার মাঠে একবারও সন্তানের কথা ভাবি না আমি। যখন বল হাতে ট্রাই-লাইনের দিকে এগোই তখন মনে হয় আমার মধ্যে কোন সুপারপাওয়ার আছে। তবে বল সমেত লাইন পার না হওয়া অবধি কোনদিন ওভারকনফিডেন্ট হইনা," একটানা বলে আবার হাসেন সঙ্গীতা।

রাগবি মাঠের অভিজ্ঞতাই তাঁকে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগায়। সঙ্গীতার ভাষায়, "আমি জুনিয়রদের বলি, চাকরি, প্রোমোশন, বিয়ে, বাচ্চা এগুলোই জীবনের সবটা নয়। দেশের হয়ে না খেললে আমি কোনদিন নিজেকে খুঁজে পেতাম না।"

kolkata police Rugby
Advertisment