বিকাশ পাঁজি
কৃশানু এমন একজন প্লেয়ার যাকে ভারতীয় ফুটবল মিস করে। চলে যাওয়াটা তো আমাদের হাতে নেই। এখনও এতদিন বাদে এখনও যখন কোনও আমরা মানে প্রাক্তন ফুটবলাররা বসি, ওঁর প্রসঙ্গ উঠবেই। ও বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেল।
কৃশানুর জন্মদিনে কত স্মৃতি ভিড় করে আসছে। দলবদল থেকে একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া- ওঁর সঙ্গে আমার অজস্র স্মৃতি রয়েছে। কেরিয়ারের শুরুতেই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে ক্লাবে খেলব, সেই ক্লাবে দুজনে একসঙ্গেই সই করব। দলবদলের বাজারে কোনও ক্লাবের প্রস্তাব থাকলেই আমাদের শর্ত থাকত, নিলে দুজনকেই একসঙ্গে নিতে হবে।
আমাদের রসায়ন নিয়ে ভারতীয় ফুটবলে এখনও চর্চা হয়। আসলে আমরা দিনের ১২-১৩ ঘন্টা একসঙ্গেই কাটাতাম। শুধু অনুশীলনই নয়, প্র্যাকটিসের পরে দুজনের চাকরি বা আড্ডা- সবসময়েই আমরা জুড়ি বেঁধে থাকতাম। আমি গ্রামের ছেলে। গোটা দিন কলকাতায় কাটত রন্টুর সঙ্গে। সুদীপ চট্টোপাধ্যায় সেই সময়ে চৌরঙ্গীর এক ব্যাংকে কাজ করত। সেই সময় ওঁর অফিসে কত আড্ডায় মেতেছি আমরা!
আরও পড়ুন: কৃশানুর সেই ছেঁড়া কার্টিলেজ এখনও রেখেছেন সঙ্গে, প্রেমদিবসে নস্ট্যালজিক স্ত্রী পনি
মাঠের বাইরের এই সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটত খেলায়। ও যেমন আমার প্রতিটা মুভ আগে থেকে আগাম পড়ে নিতে পারত, আমিও ওঁর প্রত্যেকটা টার্ন, ও ডান দিকে ঢুকবে না বাঁ দিক থেকে অপারেট করবে, আগাম আঁচ করে ফেলতাম।
কৃশানুকে সেই সময় সতীর্থ তো বটেই প্রতিপক্ষ ফুটবলাররাও সমীহ করে চলত। সবাই ওঁকে স্নেহ করত, ভালবাসত। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার হলে যদি বাসে একটা সিট থাকত, যে যত বড় ফুটবলারই হোক না কেন, সেই সিট সবসময় কৃশানুর জন্য বরাদ্দ রাখত।
কোনও সন্দেহ নেই কৃশানু আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলার। ইউরোপ বটেই বিশ্বের যে কোনও দল ওঁকে অনায়াসে নিয়ে নেবে। মারডেকায় তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওঁর হ্যাটট্রিকও রয়েছে।
পুরস্কার নিয়ে আজকাল অনেক আলোচনা হচ্ছে। শুধু কৃশানুই নয়, বাংলার অনেক ফুটবলারই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। তবে এটা আমার মনে হয় অনেকটাই ভাগ্যের বিষয়। রন্টু তো তাড়াতাড়ি চলে গেল। হয়ত ওঁরও আশা ছিল কোনও স্বীকৃতি জুটবে। মৃত্যুর সঙ্গেসঙ্গে যদি ওঁকে পুরস্কার দেওয়া হত, তাহলে যোগ্য সম্মান পেত ও। রাজ্য সরকারের তরফে যদিও অনেক করা হয়েছে। তবে রন্টুর জন্য কোনও পুরস্কার থাকলে আমরা প্রাক্তনদের আরও ভাল লাগত।
কৃশানুর পরিবারের সঙ্গে আমার এখনও যোগাযোগ রয়েছে। এখনও ওঁর স্ত্রী পনিকে ফোন করে খোঁজখবর নিই মাঝে মধ্যে।