এশিয়া কাপে খেলছে বাঙালি কিশোর। আর তাঁর পেস সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিপক্ষ ব্য়াটসম্যানরা। শ্রীলঙ্কায় অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ মাতিয়ে রাখছেন বঙ্গতনয়। উঠতি প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটারের পরিচয় জানলে অবশ্য কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা চমকে উঠতে পারেন। ময়দানি কিংবদন্তি গৌতম সরকারের নাতি ঋষভ মুখোপাধ্য়ায় অবশ্য ফুটবল নয়, ক্রিকেট পরিচয় নিয়েই বেড়ে উঠতে চান। ভারত নয়, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর জার্সিতে ঋষভ নজর কেড়ে নিয়েছেন ক্রিকেট বিশ্বের।
প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। আর রবিবারে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাইশ গজে আগুনে বোলিং করেছেন বাঙালি ক্রিকেটার। ঝুলিতে পুরেছেন ৩ উইকেট। দুই ম্যাচেই ৫ উইকেট নিয়ে তিনিই আপাতত আরব আমিরশাহীর সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স হীরের দ্যুতিতে ধাঁধানো হলে কী হবে, দলগত পারফরম্যান্সে অবশ্য ইউএই রং ছড়াতে পারেনি। দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে ঋষভের দল।
আরও পড়ুন ICC Cricket World Cup: ধোনির সাহচর্যে বিশ্বকাপে বাঙালি কিংবদন্তির নাতি, মরুদেশে রূপকথা অন্য ঋষভের
ঋষভের পিতা প্রদীপ্তবাবু শ্রীলঙ্কা থেকে হোয়্যাটসঅ্যাপ কলে বললেন, "প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ায় চাপ তৈরি হয়েছিল। সেখান থেকে আর দল বেরোতে পারেনি।" তবে শ্রীলঙ্কা ম্যাচ নিয়ে বিস্তর আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে ঋষভদের। প্রদীপ্তবাবু বলছিলেন, "শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফিল্ডিং ফ্যাক্টর হয়ে গেল। আমাদের দলের ফিল্ডাররা প্রত্যাশামতো খেলতে পারেনি। ব্য়াটে-বলে সমানে সমানে শ্রীলঙ্কাকে টক্কর দিলেও ফিল্ডিংয়ে আমরা স্রেফ পারিনি।"
ঋষভের শ্রীলঙ্কা বিজয়ে অবশ্য সবথেকে খুশি 'ভারতীয় বেকেনবাওয়ার' গৌতম সরকার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে ফোনে জানিয়ে দিলেন, "জগত জোড়া নাম হবে ঋষভের এটুকু বলে রাখছি।" নাতিকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে গদগদ। খুশি উপচে পড়া গলায় লাল-হলুদের কিংবদন্তি বলেই যাচ্ছিলেন, "ঋষভ ক্রিকেট বিশ্ব মাতাবে। এটা মিলিয়ে নেবেন। ওর মধ্যে অবিশ্বাস্য জেতার খিদে রয়েছে। বডি ল্যাঙ্গোয়েজ, বোলিং ডেলিভারি যেটুকু দেখেছি, বলতে পারি, অন্যদের থেকে আলাদা। সবসময় স্বপ্ন দেখে ও।"
নাতির টানেই দু-বার দুবাই ঘুরে এসেছেন। সেই নাতিই এবার পারফরম্যান্সে রংমশাল জ্বালছেন। ঋষভের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ কিংবদন্তির মনে পড়ে যাচ্ছে দ্য গ্রেট মহম্মদ আলির কথাও। "ক্যাসিয়াস ক্লে, যাঁকে আমরা মহম্মদ আলি নামে চিনি, ওঁর একটা বিখ্যাত প্রবাদ রয়েছে, চ্যাম্পিয়নরা কখনও জিমে তৈরি হয় না। তাঁদের মননের গভীরে তিনটে জিনিস থাকে- স্বপ্ন, প্রবল ইচ্ছা এবং দৃষ্টিভঙ্গি। এটাই কাউকে চ্যাম্পিয়ন বানায়। ঋষভের মধ্যে আগুন রয়েছে।" ফুটবলের মহাতারকা বলছিলেন তাঁর নতুন স্বপ্নকে নিয়ে।
গৌতম সরকারের ভাগ্নে প্রদীপ্তবাবু দেড়দশক ধরে কর্মসূত্রে দুবাইবাসী। ঋষভের জন্ম এ শহরেই। ছোট্ট ঋষভ মাত্র পাঁচ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে পাড়ি দিয়েছিলেন দুবাইতে। শৈশব থেকেই বাইশ গজের প্রতি আকর্ষণ ঋষভের। ক্রিকেটের প্রতি উৎসাহ দেখেই প্রদীপ্তবাবু স্থানীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। তারপর পুরোটাই ইতিহাস।
মঙ্গলবারেই এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বে শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ নেপাল। সেই নেপালকে হারানোই আপাতত পাখির চোখ ইউএই দলের। সেই ম্যাচে খেলতে নামার আগে ঋষভ বলছিলেন, "আমি দাদুর খেলা কখনও দেখিনি। তবে, কলকাতা গেলে দাদুর বাড়িতে যাই। জানি উনি কত বড় ফুটবলার ছিলেন। পুরনো দিনের অনেক গল্প বলেন উনি। সেটাই আমাকে অনুপ্রেরণা জোগায়।" প্রবাদপ্রতিম ফুটবলারের অনুপ্রেরণা নিয়েই বিশ্বক্রিকেটে আরও ঝড় তুলতে চাইছেন ঋষভ।
এশিয়া কাপ মাতানোর পরে ঋষভের পরবর্তী গন্তব্য অনুর্ধ্ব বিশ্বকাপ। নেপালের বিরুদ্ধে ম্যাচের পরেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে নেমে পড়তে চান বঙ্গ ক্রিকেটার। তাঁকে নিয়ে অনেক 'স্বপ্ন' বিখ্যাত দাদুর। আর ঋষভের স্বপ্ন একটাই দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপ খেলা। সৌরভের পরে কী ফের একবার শহর বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখবে নতুন চ্যাম্পিয়ন? সময়ই উত্তর দেবে।