Lionel Messi in friendly pre-season tournament in Hong Kong: গোটা কেরিয়ার জুড়েই বিতর্ক থেকে শতভাগ দূরে রেখেছেন নিজেকে। গত রবিবার পর্যন্ত মোটামুটি নিষ্কলঙ্কই ছিলেন তিনি। তবে হংকংয়ে গিয়ে মেসি, ডেভিড বেকহ্যাম সহ গোটা ইন্টার মিয়ামি স্কোয়াড প্রবলভাবে বিদ্রুপের মুখে পড়লেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। স্থানীয় এক ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচে নেমেছিল মেজর লিগ সকারের তারকাখচিত দল। সেই ম্যাচেই মাঠে মেসি না নামায় চিনা সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠল। কয়েক দিন আগেই মেসি নিজের বার্সা সতীর্থ ইনিয়েস্তার সদ্য প্রাক্তন জাপানি ক্লাব ভিসেল কোবের বিরুদ্ধে নেমেছিলেন। আর চিনে গিয়ে মাঠে না নামতেই বিতর্ক দানা বাঁধল আচমকা।
হংকংয়ে কেন মাঠে নামলেন না মেসি?
ইন্টার মিয়ামির আর্জেন্তিনীয় কোচ জেরার্ডো টাটা মার্টিনোর দাবি অনুযায়ী, ম্যাচে নামার জন্য মেসি পর্যাপ্ত ফিট ছিলেন না। আল নাসেরের বিরুদ্ধে মেসি ইন্টার মিয়ামির জার্সিতে নামেননি। সেই ম্যাচে মার্কিন ক্লাবটি ০-৬ গোলে হার হজম করেছিল। সেই ম্যাচের পর এই নিয়ে দ্বিতীয় ফ্রেন্ডলি ম্যাচে নিজেকে সরিয়ে রাখলেন মেসি।
হংকংয়ে প্রীতি ম্যাচে মেসি না নামায় কী প্রতিক্রিয়া দেখা গেল?
লিওনেল মেসির অফিসিয়াল উইবো একাউন্টের তরফে ইতিমধ্যেই ম্যাচে না নামার জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়েছে চিনা সমর্থকদের কাছে। "যাঁরা আমাকে চেনেন তাঁরা ভালোই জানেন, আমি মাঠে নামার জন্য কতটা মুখিয়ে থাকি, বিশেষ করে এই সমস্ত ম্যাচে যেখানে আমরা দূর থেকে ট্র্যাভেল করে খেলতে আসি এবং আমাদের জন্য প্রতীক্ষায় থাকেন সমর্থকরা। আশা করি, হংকংয়ে এসে আবার-ও ম্যাচ খেলতে পারব কোনও এক সময়।" বলা হয়েছে সেই পোস্টে।
আরও পড়ুন: ধোনিকে এই পকেটে রাখি, প্রকাশ্যেই মাহিকে চরম অপমান পিটারসেনের! শুনেই ফুঁসলেন জাহির
এই বিতর্কে চিন সরকারের প্রতিক্রিয়া কী?
চিনা সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন 'গ্লোবাল টাইমস' মেসির কড়া সমালোচনা করেছে। হংকং সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব পোষণ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে মেসি এবং ইন্টার মিয়ামির বিরুদ্ধে।
নিজেদের প্রতিবেদনে মেসিকে একহাত নিয়ে লেখা হয়েছে, "এই সফরে মেসির ছয়টি প্রাক-মরসুম প্রীতি ম্যাচের মধ্যে হংকংয়ের ম্যাচটিই একমাত্র ছিল, যেখানে তিনি অনুপস্থিত রইলেন। এই পরিস্থিতিতে ইন্টার মিয়ামি এবং মেসির সততা নিয়ে সন্দেহ ও সংশয়কে আরও বেড়েছে। কিছু মূল ভূখণ্ডের সমর্থক জিনজিয়াং থেকে হংকং পর্যন্ত ১২ ঘন্টা ভ্রমণ করেছিলেন মেসিকে দেখার বাসনা নিয়ে। এই ঘটনায় সরকার এবং সমর্থকদের হতাশ হওয়া পুরোপুরি বোধগম্য। এই ঘটনার প্রভাব খেলাধুলার পরিমণ্ডল ছড়িয়ে গিয়েছে।"
চিনের ক্রীড়া নীতি প্ৰণয়নের মন্ত্রী কেনেথ ফোক জানিয়েছেন, এই ঘটনা সমর্থকদের 'কাটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে' দিয়েছে। এমনকি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা রেজিনা আইপি আরও একধাপ এগিয়ে লিখেছেন, "হংকংয়ের মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এই ঘটনায় মেসি, ইন্টার মিয়ামি এবং সমস্ত ষড়যন্ত্রের চক্রান্তকারীদের কালো হাতকে ঘৃণা করে। হংকংয়ে মেসিকে আর ফিরতে দেওয়া ঠিক হবে না। ওঁর মিথ্যা, দ্বিচারিতা স্রেফ অসহনীয়।"
এই বিতর্কের পরবর্তী ধাপ কী?
ইভেন্টে টিকিটের দাম ছিল চড়া। প্রতিটি টিকিট বিক্রি হয়েছে HK$5,000 ($640) মূল্যে।
৪০ হাজারের বেশি ভক্তরা তাঁদের টিকিটের মূল্য ফেরত না পাওয়ার পাশাপাশি পিচে মেসির অনুপস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে Tatler Asia, যারা ইভেন্টের মূল আয়োজক। তাঁদের HK$16 মিলিয়ন ($2 মিলিয়ন) মূল্য সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে।
বিতর্কে মুখ খুলেছে Tatler CEO মিশেল ল্যুমিয়ের। তিনি টাইম-এ জানিয়েছেন, ইন্টার মিয়ামি প্রাথমিকভাবে তাঁদের জানিয়েছিল মেসি খেলার জন্য ফিট। তবে ম্যাচের সময় টাইম-য়ের অনুরোধ অবজ্ঞা করে মেসিকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
আরও পড়ুন: ইংরেজ তারকার কুনজরে ধোনির স্ত্রী! ১১ বছরের পুরনো রসালো মন্তব্য ঝড় তুলল আবার
পশ্চিমি ফুটবল ক্লাবগুলি কি এশীয় ফুটবল বাজারকে স্রেফ অর্থের জন্য ব্যবহার করছে?
গত একদশকে ফুটবলের চালচিত্র বদলে গিয়েছে এশিয়ায়। অনেকেই উপলব্ধি করতে পারছেন, পশ্চিমের নামি ক্লাবগুলি স্রেফ অর্থ কমানোর বাসনায় প্রি-সিজন ট্যুরের নামে আসছেন অর্ধেক শক্তির দল নিয়ে। এশিয়া ফুটবলের উন্নতিতে তাঁদের কোনও সদর্থক ভূমিকাই নেই। সমর্থকদের এই উপলব্ধির সার্থক উদাহরণ, ইন্টার মিয়ামি বনাম জে লিগের নামি ক্লাব ভিসেল কোবে ম্যাচ। সেই ম্যাচে জাপানের জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়ামে মাত্র ২৮,৬১৪ টিকিট বিক্রি হয়েছিল। প্রায় গোটা স্টেডিয়ামে ফাঁকাই ছিল।
মেসি বিতর্কে জাপান-চিন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কী প্রভাব ফেলেছে?
চিনের সঙ্গে জাপানের পারস্পরিক সম্পর্ক সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই বিষময়। পূর্ব চিন সাগরের দ্বীপের দখল নিয়ে চিনের সঙ্গে জাপানের দ্বৈরথ চলছে এখনও। এমন আবহে মেসি জাপানে তিরিশ মিনিট খেলে এসেছেন। তারপরে হংকংয়ে এসে না খেলার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সমীকরণ খুঁচিয়ে দিয়েছে।
টাইম-এ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইবো-য় নাকি সমর্থকরা বলেছেন, "মেসি জাপানে হাসছেন আর হংকংয়ে এসে মুখ গোমড়া করে রয়েছেন। এতেই স্পষ্ট মেসি কোন দেশের পক্ষে। নিজের রাজনীতির মতাদর্শ বেছে নিয়েছে ও। এখন চিনে ওঁর আর না আসাই ভালো।"
মেসি এবং ইন্টার মিয়ামির পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
প্রাক-মরশুম প্রস্তুতিতে ইন্টার মিয়ামি শেষ ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলবে মেসির শৈশবের ক্লাব নেওয়েলস ওল্ড বয়েজ-এর বিপক্ষে। তারপর মেজর লিগ সকার চালু হয়ে যাবে। ইন্টার মিয়ামির প্ৰথম ম্যাচ রিয়েল সল্ট লেকের বিপক্ষে, ২২ ফেব্রুয়ারি।