বিশ্বকাপের বিতর্কিত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ সেরাটা নিংড়ে বের করে নিয়েছিল লিওনেল মেসির। স্বভাববিরুদ্ধ আগ্রাসী ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষের ফুটবলার, স্টাফ এমনকি কোচ লুই ভ্যান গালের সঙ্গেও কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন মহাতারকা। বিশ্বকাপ জয়ের পর প্ৰথম সাক্ষাৎকার হয়ে দাঁড়াল মেসির আক্ষেপ প্রকাশের মঞ্চ।
ডিসেম্বরে ট্রফি জেতার পর মেসির প্ৰথম সাক্ষাৎকার দিলেন বুয়েন্স আয়ার্সের রেডিও আর্বানা প্লে-কে। সেই সাক্ষাৎকারেই মেসি নেদারল্যান্ডস ম্যাচের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, এরকমটা করা উচিত হয়নি তাঁর। রুদ্ধশ্বাস সেই ম্যাচে রেফারিকে ১৭টি কার্ড দেখাতে হয়। রেহাই পাননি মেসিও। তাঁকেও দেখানো হয় হলুদ কার্ড। সেই ম্যাচের টাইব্রেকার শ্যুট আউটে আর্জেন্টিনা জিতে যায়।
আরও পড়ুন: ‘মেসি-এমবাপে-নেইমারকে একসঙ্গে খেলানো অসম্ভব!’ PSG-র শোচনীয় ফর্মে নিশানায় তিন সুপারস্টারই
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেসি গোল করেই কানে হাত দিয়ে কোচ লুই ভ্যান গালকে দেখিয়ে দেখিয়ে উদযাপন করেছিলেন। সেই ম্যাচেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের একাধিক তারকা। ম্যাচের পর সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন মেসি। সেই সাক্ষাৎকার থামিয়ে মেসি অপমান করেন ডাচ স্ট্রাইকার ওয়েগহর্স্টকে। যিনি ম্যাচের শেষ লগ্নে জোড়া গোল করে ম্যাচ প্রায় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন মেসিদের মুখ থেকে।
সেই সব ঘটনা পেরিয়ে এখন মেসি জানাচ্ছেন, "যা করেছি তা মোটেই ঠিক করিনি। ম্যাচের পরে যা ঘটেছে, সেটাও করা উচিত হয়নি। এই মুহূর্ত গুলো এমনই যেখানে অনেক টেনশন, উত্তেজনা জড়িয়ে থাকে। সবকিছু দ্রুত ঘটছিল। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকারা সঙ্গেসঙ্গেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিল। কোনও কিছুই পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না। সবকিছুই ঘটে গিয়েছিল।"
আরও পড়ুন: রেকর্ড গড়ছেন মেসির বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্তিনীয় সতীর্থ! ট্রান্সফারে দাম উঠল ১১৬ কোটি টাকা
বিতর্কে জর্জরিত ছিল বিশ্বকাপের সেই কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। ম্যাচে নামার আগে তাতিয়ে দিয়েছিলেন ভ্যান গাল। বলে দিয়েছিলেন, তাঁর দল আর্জেন্টিনার থেকে প্রস্তুতিতে এগিয়ে। পেনাল্টি শ্যুট আউটের জন্যও তাঁরা প্রস্তুত। ২০১৪ সালের সেমিফাইনালে দুই দলের মধ্যে ম্যাচে মেসি নাকি বল-ই ছুঁতে পারেননি। ২০১৪-তেও আর্জেন্টিনা পেনাল্টি শ্যুট আউটে জিতে ফাইনালে পৌঁছয়। মেসি এখন জানাচ্ছেন, সতীর্থদের কাছ থেকে ভ্যান গালের বিবৃতি শুনে তিনি তেতে উঠেছিলেন।
ডাচ স্ট্রাইকার ওয়েগহর্স্টকে অপমান করার বিষয়টিও স্বাভাবিকভাবেই এসেছিল, বলে জানাচ্ছেন মেসি। " দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেলেছিলাম। প্লেয়ারদের সঙ্গে তো বটেই ম্যাচেও একাধিকবার টেনশনের আবহ তৈরি হয়েছিল। মিক্সড জোনে ছিলাম। সেই ঘটনা স্রেফ হয়ে গিয়েছে।"
আরও পড়ুন: মেসি-নেইমার-এমবাপের জন্যই ডুবছে PSG! পয়েন্ট নষ্ট করতেই এবার ‘কষিয়ে চড়’ ক্যাপ্টেনের
গোটা টুর্নামেন্টেই আর্জেন্টিনা বাকি দলের থেকে এগিয়ে ছিল। বলে জানাচ্ছেন মেসি।।গ্রুপে মেক্সিকোকে দ্বিতীয় শক্তিশালী দলের তকমা দিচ্ছেন মহাতারকা। মেক্সিকো ম্যাচের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কিংবদন্তি জানাচ্ছেন, "বাকি টুর্নামেন্টে এগোনোর জন্য সবকিছু নির্ভর করছিল মেক্সিকো ম্যাচের ফলাফলের ওপর। সবথেকে খারাপ ম্যাচ ছিল এটা।"
গ্রুপ পর্বে প্ৰথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে বসেছিল আর্জেন্টিনা। তারপরে মেক্সিকো ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে জেতে। ১৯৮৬-র পর প্ৰথমবার বিশ্বকাপ জয়ের সেই ফ্রান্স ম্যাচের রিপিট টেলিকাস্ট এখনও দেখেননি তিনি। "সেই ম্যাচের পর সবকিছুই বদলে গিয়েছে। আমরা এতদিন যা স্বপ্নে দেখেছিলাম, তা শেষমেশ সত্যি হয়েছে। গোটা কেরিয়ার জুড়েই এই ট্রফি চেয়ে এসেছি। এখন শেষ পর্যন্ত সেটা এল।" জানাচ্ছেন এলএমটেন।
আরও পড়ুন: ২০০ মিলিয়ন খরচ করে এই পারফরম্যান্স! রোনাল্ডোকে নিয়ে হতাশায় বিষ্ফোরক আল নাসের ডিরেক্টর
নিজের শৈশবের সত্ত্বাকে যদি পরামর্শ দিতে পারতেন। কী বলতেন। সেই প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন, "একটা অসাধারণ ঘটনা অপেক্ষায় রয়েছে। তুমি ভাবতেও পারবে না। খুব সুন্দর একটা পথে তুমি এগিয়ে যাবে। অবশ্যই কঠিন সময় আসবে। সেটা তোমাকে নিজেকেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে পেরোতে হবে। কিন্তু কখনও স্বপ্ন দেখা ছেড় না। কারণ দিনের শেষে বহু প্রতীক্ষিত সেই পুরস্কার তুমি পাবেই। তোমার সিনেমার শেষটা সুখের হবে।"
Read the full article in ENGLISH