ব্রাজিল ম্যাচে স্টেডিয়ামের পরিস্থিতি যখন ক্রমশই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে লিওনেল মেসি ঠিক করে ফেলেন আর মাঠে থাকবেন না। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের কোয়ালিফায়ারে খেলতে ব্রাজিলে এসেছিলেন মহারথী। তবে সেখানে এসেই যে এরকম অপ্রীতিকর ঘটনার মুখে পড়বেন, আঁচ-ও পাননি।
দুই দলের সমর্থকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ। তারপর সেই অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ব্রাজিল পুলিশের বিরুদ্ধে।
আর স্টেডিয়ামে নিজেদের সমর্থককে আক্রান্ত হতে দেখে চুপ থাকেননি মেসি। সটান দল নিয়ে মাঠ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মহাতারকা। ব্রাজিল পুলিশকে মেসি ক্রুদ্ধভাবে বলে দিয়েছেন, গ্যালারি শান্ত না করতে পারলে আর মাঠেই নামবেন না তাঁরা।
মেসিরা লকার রুমে গিয়ে ২৭ মিনিট কাটান। তারপর আবার ম্যাচ খেলতে নামেন। ব্রাজিল অবশ্য মাঠ ছাড়েনি। আর্জেন্টিনার ফিরে আসার অপেক্ষা করেছে। ম্যাচের পর মেসি বলে দিয়েছেন, "আমরা দেখছিলাম ওঁরা আমাদের সমর্থকদের মেরেই চলেছিল। লিবার্তাডোরেস ফাইনালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ম্যাচে খেলার তুলনায় ওঁরা আমাদের সমর্থকদের পেটানোর ব্যাপারে বেশি ফোকাস করেছিল। আমরা লকার রুমে ফিরে গিয়েছিলাম। কারণ পরিস্থিতি শান্ত করার এটাই ছিল সেরা উপায়। যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। আমাদের দল ইতিহাস গড়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।"
এমনকি গ্যালারির উত্তপ্ত পরিস্থিতি নেমে আসে মাঠেও। মেসির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান ব্রাজিলিয়ান তারকা রদ্রিগো। কী হয়েছিল মেসি বনাম রদ্রিগোর মধ্যে? টিওয়াইসি স্পোর্টস জানিয়েছে, লকার রুম থেকে আর্জেন্টিনা দল পরে ম্যাচ খেলতে নামার সঙ্গে সঙ্গেই রদ্রিগো মেসিদের ভীতু বলে ব্যঙ্গ করতে থাকেন। মেসি তাঁকে নাকি পাল্টা বলে দেন, “আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আমরা ভীতু হতে যাব কেন? নিজের মুখের দিকে ভালো করে তাকাও।”
ম্যাচেই তাঁর জবাব দেয় আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলকে হারিয়ে মেসিরা সমর্থকদের সঙ্গেই ব্রাজিলের স্টেডিয়ামে সেলিব্রেশনে মেতে ওঠেন। একসঙ্গে গান গাইতে শোনা যায়, "ব্রাজিলের জন্য এক মিনিটের নিস্তব্ধতা, যারা মরেই গেল…"
আরও পড়ুন: বিশাল মারামারি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে! সাম্বা-অসভ্যতায় মাঠ ছাড়লেন মেসিরা
ম্যাচে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে জয় পায় ব্রাজিলের বিপক্ষে। ৬৩ মিনিটে জিওভানি লো সেলসোর ক্রস থেকে ম্যাচের একমাত্র গোল করে যান নিকোলাস ওটামেন্দি। গোটা ম্যাচে সেটাই ছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে নেওয়া একমাত্র শট। উত্তপ্ত ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে ৮২ জোয়েলিংটন লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন রদ্রিগো ডি পলের মুখে ঘুষি চালিয়ে। এরপরে আরও চাপে পড়ে সাম্বা ফুটবলাররা।
ওয়ার্ল্ড কাপের কোয়ালিফায়ারের ইতিহাসে প্ৰথমবার টানা দুটো ম্যাচে হার হজম করে ব্রাজিল খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। আর আর্জেন্টিনার বিপক্ষেও জয় অধরা থাকল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। এই নিয়ে মেসিদের বিপক্ষে শেষ তিনটে মুখোমুখি সাক্ষাতেই হারতে হল ব্রাজিলকে।
ল্যাটিন আমেরিকার ১০ দলের লড়াইয়ে রাউন্ড রবিন পর্বে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল দুই দলই আগের ম্যাচে হার হজম করেছিল। তবে ৫ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে এখনও শীর্ষে আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে, ব্রাজিল রয়েছে পঞ্চম স্থানে। আর একধাপ নিচে থাকলেই বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার স্বপ্ন বিলীন হয়ে যাবে ব্রাজিলের।