শতবর্ষের রূপরেখা তৈরি হচ্ছিল কিংবদন্তিকে ঘিরে। আবেগ-নস্ট্যালজিয়ায় ভেসে যাওয়ার স্ক্রিপ্টও লেখা হচ্ছিল তলে তলে। লেসলি ক্লডিয়াস সরণির বিখ্যাত ক্লাবে অবশ্য বোধনের আগেই বিসর্জনের সুর বাজিয়ে দিলেন কিংবদন্তি স্বয়ং। মজিদ বিসকর ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে জানালেন, তিনি আসছেন না। প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন একেবারে সরাসরি।
বছর দু-য়েক আগে এক বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে শহরের ফুটবল ইভেন্টে মারাদোনা-র সঙ্গে হাজির থাকার কথা ছিল মজিদের। সেবারেও একইভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। যাইহোক, সেই সময়ে না এলেও মজিদকে শতবর্ষে নিয়ে আসার ভাবনা তখন থেকেই ছিল লাল-হলুদ কর্তাদের। জাদুকরকে নিয়ে একাধিক অনুষ্ঠানের নীল নকশাও তৈরি ছিল। সেই সঙ্গে জানা গিয়েছে, পরিকল্পনা ছিল, শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ক্লাবের যে তথ্যচিত্র বানানো হচ্ছে, তাতে মজিদকে রাখার। সেই সব-ই আপাতত বিশ-বাঁও জলে।
শতবর্ষের আগেই কী ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ ইস্টবেঙ্গল-কোয়েসের, জল্পনা তুঙ্গে
মজিদকে আনার বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের উপরে। প্রবাদপ্রতিম ডিফেন্ডারকে মজিদ ডাকতেন 'মনো' নামে। কলকাতা থেকে সাংবাদিকের ফোন গেলেই প্রিয় 'মনো'র বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নেবেন নিয়ম করে। যাইহোক, প্রাক্তন সতীর্থকে নিয়ে আনার জন্যই মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। মজিদকে যাওয়া-আসার সহ সমস্ত কিছু আনুষঙ্গিক খরচেরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তবে ঘনিষ্ঠ সতীর্থকে সরাসরি 'না' বলে দিয়েছেন মজিদ বিসকর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র তরফে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, "মজিদের সঙ্গে খুব বেশিক্ষণ কথা হয়নি। খুব ভাল ইংরেজি বুঝতেও পারে না। নিজের দেশে যে কাজ করে, সেই কাজ ছেড়ে ও ভারতে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে ঘোর সংশয় রয়েছে। আসার বিষয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি মজিদ।" খোরমশাহ-র কিংবদন্তির এমন প্রতিক্রিয়া জানার পরে ঘোর বিপাকে পড়েছেন ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ আয়োজক কমিটি। মজিদকে ঘিরেই যাবতীয় পরিকল্পনা সারা ছিল যে ইস্টবেঙ্গলের! হঠাৎ করে মজিদ বেঁকে বসায় সমস্যায় কর্তারা।
মজিদ কিন্তু এখনও ইস্টবেঙ্গলের প্রসঙ্গ উঠলে পুরনো দিনে ডুবে যান। পাগলপারা আবেগ উথাল পাথাল করে দেয় তাঁর হৃদয়। তাঁর বাঁ পায়ের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ ছিল লাখ লাখ ফুটবল প্রেমী। এখনও সেই কথা মনে করিয়ে দিলে, স্মৃতিতে ভর করে চার দশক আগের সেই কলকাতা ময়দানে পাড়ি দেন ময়দানি ফুটবলের রূপকথার নায়ক। তাহলে কেন ইস্টবেঙ্গলকে 'না' বললেন ইরানিয়ান রাজপুত্র? জানা গিয়েছে, অভিমানী মজিদ আর ফিরে আসতে চান না চেনা শহরে। যে শহর জানে তাঁর প্রথম সবকিছু, সেই শহরকেই তিনি ভুলে থাকতে চান। অভিমান ভুলে মজিদ যদি প্রিয় শহরে পা দেন আবার! সেই সম্ভবনা যদিও খুব কম।