টালির চালের বাড়ি। ঝড় উঠলে এখনও বুক শনশন করে। এই বুঝি যায় যায়। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আর পুত্রের চোখে অফুরান স্বপ্ন। স্বপ্ন অনেক বড় হওয়ার। মনোতোষ চাকলাদার বাংলা ফুটবলের চিরন্তন মহাকাব্যে এখনও ফুটনোট হিসাবেও হয়ত ঠাঁই পাবেন না। তবে অচেনা থেকে নামিদের বৃত্তে ঝাঁপ দেওয়ার ঠিক আগের প্ল্যাটফর্মেই যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি, তা নিয়ে দ্বিমত নেই।
সন্তোষ ট্রফির সর্বভারতীয় পরিচিতিই মনোতোষকে হঠাৎ দলবদলের বাজারে ভীষণ ভীষণ প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। বাংলা-কে চ্যাম্পিয়ন করতে পারেননি মনোতোষ। তবে তাঁর চোয়ালচাপা জেদ কুর্নিশ কুড়িয়ে নিয়েছে ফুটবল মহলে। বাংলা-কে ফাইনালে তোলার অন্যতম নায়ক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "আইএসএল খেলার জন্য ডাকের অপেক্ষায়। তবে এখনও কোনও দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি কেউ। এই মুহূর্তে কোনও ক্লাবের সঙ্গেই চুক্তি নেই।" গলায় অসহায়তা নিয়ে বলে চলেছিলেন ইউনাইটেডের বেগুনি জার্সিতে উত্থান হওয়া এই সম্ভবনাময় এই প্রতিভা। বাবার বয়স হয়েছে। আর কতদিন টানবেন সংসারের জোয়াল! সংসারের হাল ফেরানোর আশায় দিন গুনছেন বছর চব্বিশের এই ডিফেন্ডার।
আরও পড়ুন: ডার্বি খেললেই বুঝবে কলকাতা কী! বন্ধু ইভানকে বলে দিলেন লাল হলুদের প্রাক্তন স্প্যানিশ
সন্তোষে বাংলার কোচ হয়ে কেরলে গিয়েছিলেন রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "মনোতোষ আইএসএলের মত বড় পর্যায়ের টুর্নামেন্টে খেলতেই পারে। ওঁর মধ্যে ভাল রাইট ব্যাক হওয়ার সব গুণ রয়েছে। নতুন ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়া হয়েছিল বাংলার। সন্তোষে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল মনোতোষের। তাই ওঁকে অধিনায়ক বাছাই করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গন্ধ ধরে রাখতে চেয়েছিলাম। নিজের খেলাতেও ও দক্ষতা প্রমাণ করেছে। যে কোনও আইএসএল দলে ও রাইট ব্যাক হিসাবে খেলতেই পারে।"
সূত্রের খবর, বাংলার হয়ে সন্তোষে খেলতে কেরালা রওনা আগে প্রস্তুতির সময়েই ইস্টবেঙ্গলের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল মনোতোষকে। ময়দানের এক তারকা কোচের পরামর্শে ইস্টবেঙ্গল নিতে চেয়েছিল মনোতোষকে। তবে লাল হলুদের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। কারণ, আইএসএল দল নয়, মনোতোষের কাছে ইস্টবেঙ্গল 'বি' টিমের হয়ে খেলার প্রস্তাব গিয়েছিল। যে টিম এবার খেলবে কলকাতা লিগ, শিল্ড টুর্নামেন্টে। তবে আইএসএলকে পাখির চোখ করা মনোতোষ সেই কন্ট্র্যাক্ট প্রত্যাখ্যান করেন তৎক্ষণাৎ। এর আগে অবশ্য ইস্টবেঙ্গলে খেলেছিলেন লোনে। এবার মূল টিমের ডাকের জন্য প্রতীক্ষায় তিনি। আইএসএলের জন্য এবার পৃথক দল গড়া ইস্টবেঙ্গলের ভাবনায় রয়েছে। সেই দলের চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন বাংলার মনোতোষ।
কেরালায় ফুটবল ক্রেজ চাক্ষুস করেছেন মনোতোষ। ভরা গ্যালারির সামনে পুরোপুরি স্বপ্নপূরণ না হলেও হৃদয় জিতে নিয়েছেন চুঁচুড়ার শরৎচন্দ্র সরণীর বাসিন্দা। কেরালার মাঠ এবং ফুটবল পরিকাঠামো দেখে এখনও তাঁর গলায় মুগ্ধতার রেশ। নিজের খেলাতেও এবার সেই রেশ ছুঁইয়ে দিতে চান দেশের সামনে, আইএসএল খেলে। বড় দলের ডাক কবে আসবে?