Mehtab Hossain Exclusive Interview: এক-আধ বছর নয়, টানা ২১ বছর পর কেরিয়ারে ইতি টানছেন মেহতাব হোসেন। ১৯৯৮ সালে কালীঘাট ক্লাবে খেলতে আসা কিশোর প্রতিভাই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন ময়দানের ‘মিডফিল্ড জেনারেল’। সম্ভবত তিনিই এই বঙ্গের শেষ ফুটবলার, যিনি এতগুলো বছর দাপটের সঙ্গে মাঠ শাসন করেছেন।
আর কয়েকটা ঘণ্টা পরেই শেষ হতে চলেছে একটা অধ্য়ায়। অস্তাচলে ময়দানের রবি। ইন্ডিয়ান অ্যারোজের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের জার্সিতে শেষবার মাঠে নামতে চলেছেন মেহতাব।
২০০৩ সালে এই মোহনবাগানের জার্সিতেই বড় ক্লাবের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন এই প্রজন্মের অন্য়তম সেরা মিডফিল্ডার। আর আজ ১৬ বছর পর এই ক্লাবের জার্সিতেই তিনি গুডবাই বলবেন ফুটবলকে। ফেয়ারওয়েল ম্যাচে নামার আগে মেহতাবের সঙ্গে কথা বলল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। আবেগে আর স্মৃতিচারণার মোড়কে এ এক অন্য় মেহতাব।
একটু পরেই জীবনের শেষ ম্যাচ। এই অনুভূতিটা ঠিক কীরকম?
সারাটা জীবন মাঠকে দিয়েছি। চোখ-কান বন্ধ করে শুধু ফুটবলকে চিনেছি। সেই ছোট থেকে লড়াই করে আজ এখানে। সব শুরুর একটা শেষ থাকে। এটা মেনে নিয়েই অলবিদা বলছি। সিদ্ধান্তটা অনেক আগেই নিয়েছিলাম। অবেশেষে আজ সেই দিন।
আরও পড়ুন: আমার পুজো: মেহতাব হোসেন
এতগুলো বছর ফুটবল খেললেন? কতটা প্রাপ্তি আর কতটা খামতি?
অনেকগুলো বছর হয়ে গেল। সত্যি বলতে আমার কাছে প্রাপ্তি একটাই, মানুষের ভালবাসা আর আশীর্বাদ। যখন ময়দানে পা দিয়েছিলাম ভাবতেও পারিনি, এত ভালবাসা পাব। আর আজ সবাই বলছে, আরও একটা বছর খেলতে পারতে, কেন অবসর নিচ্ছ? আর কী চাওয়ার থাকে পারে আমার? যে মানুষ ভালবাসা পায় না, পরিচিতি পায় না, তার আক্ষেপ থাকতে পারে। আমার আবেগের ঝুলি ভরে গেছে। খেলোয়াড় হিসেবে প্রায় সব ট্রফিই জিতেছি। ন’বার কলকাতা লিগ পেয়েছি। শুধু আই-লিগটা পাওয়া হলো না। ওই একটা আক্ষেপই রয়ে যাবে।
মেহতাবের ফুটবল দর্শনটা ঠিক কী ছিল?
প্রশংসা হোক বা সমালোচনা, সব শুনেছি। মুখে কোনও উত্তর দিইনি। যা বলার মাঠে বলেছি। খেলার মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছি। এটাই আমার ফুটবল দর্শন।
জীবনের সেরা কোচ হিসেবে কাকে বাছবেন?
কোনও একজনের নাম বলব না। দু’জন কোচ আমার ফুটবলের দর্শন, চিন্তাভাবনা পুরোটাই বদলে দিয়েছেন। কোথায় আর কখন কীভাবে থাকা প্রয়োজন, তাঁরাই সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। রাইডার আর মর্গ্যান - এই দু’জন কোচই ফুটবলার মেহতাবকে বদলে দিয়েছে।
শেষ ম্যাচের আগে বিশেষ কারোর সঙ্গে কী কথা হয়েছে?
গতকালই রাইডার আর মর্গ্যানকে ফোন করেছিলাম। ওঁরা শুনে ভেঙে পড়েছেন। দু’জনেই বলছেন, আরও কয়েকটা বছর আমি আই-লিগে খেলতে পারতাম। কিন্তু আমি বললাম, একটা সময়ের পর থেমে যাওয়াই ভাল। এ ছাড়াও আরেকটা ফোনের কথা বলতেই হবে। একজন সাংবাদিক ফোন করে বলছিলেন, আর কোনও বাঙালি রইল না, যাকে নিয়ে তিনি লিখতে পারবেন। এটা শুনে আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। এত ভালবাস সত্যিই প্রত্যাশিত ছিল না।
মেহতাবকে দ্বিতীয় ইনিংসে কোন ভূমিকায় পাব?
আমি ছোট ছোট বাচ্চাদের তুলে আনতে চাই। ওদের শেখাতে চাই না-হারার মানসিকতা। কোচ হিসেবেই দেখতে চাই নিজেকে। এভাবেই ফুটবলের সঙ্গে থাকতে চাই।
শুধু ক্লাব ফুটবলই নয়, মেহতাব দেশের জার্সিতেও ছাপ রেখেছেন নিজের। কলকাতা ফুটবল লিগ খেলেই অবসর নিতে চেয়েছিলেন মেহতাব। কিন্তু কোনও কারণবশত সেটা সম্ভব না-হওয়ায় তিনি আই-লিগটাই বেছে নিয়েছেন। মোহনবাগান এরপর সুপারকাপ খেলতে ভুবনেশ্বর চলে যাবে। ফলে মেহতাব ময়দানের রূপকথা কলকাতাতেই শেষ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। গতকাল প্র্যাকটিসের পর বাগানের ফুটবলাররা তাঁকে গার্ড অফ অনার দিয়েছিলেন। এদিন সতীর্থরা তাঁকে জয় উপহার দিতে চান। হয়তো মেহতাবের হাতে শেষবারের মতো উঠতে পারে 'ক্যাপ্টেন'স আর্মব্যান্ড'।