অবশেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললেন মেসুট ওজিল। বিশ্বকাপ জয়ী জার্মান ফুটবলার আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বুট জোড়া তুলে রাখলেন। জার্মানির জার্সিতে আর খেলবেন না ‘কিং অফ অ্যাসিস্ট’। টুইটার ও ফেসবুকে তিন পাতার বিবৃতি দিয়ে নিজের অবসরের কথা জানিয়েছেন বছর উনত্রিশের আর্সেনালের মিডফিল্ডার। ওজিলের বক্তব্য, তিনি জার্মান টিমে শুধুই অসম্মানিত হননি, বর্ণবৈষম্যের শিকারও হয়েছেন।
রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেয় গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। টুর্নামেন্টে ওজিলের পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা তো ছিলই, এছাড়াও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের সঙ্গে ছবি তোলার জন্যও কাটাছেঁড়া হয় ওজিলের। সেই ছবিতে তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থ ইলখাইন গুন্ডোয়ানও ছিলেন। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কেন তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ছবি তুলে ওজিল ও গুন্ডোয়ানের পোস্টমর্টেম করা হল!
আরও পড়ুন: FIFA Football World Cup 2018: কাজান বলল বিদায় জার্মানি
জার্মানির গেলেসেনকারখেন শহরে জন্ম ওজিল ও গুন্ডোয়ানের। দু’জনেরই বাবা-মা তুরস্কজাত। তুরস্কের সঙ্গে জার্মানির রাজনৈতিক সম্পর্ক এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। জার্মান সমাজ তুরস্কের অভিবাসীদের এখন ঘৃণার চোখেই দেখছেন। ২০১৭-তে তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মানির সাংবাদিক দেনিজ ইউসেল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই এই বিষয়টা প্রকট হয়। তখন তুরস্ক সরকার তাঁর দেনিজের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনেছিল।
গত মে মাসে লন্ডনে এর্দোয়ানের সঙ্গে ওজিল-গুন্ডোয়ান ছবি তোলেন। বিশ্বকাপে জার্মান স্কোয়াড ঘোষণার আগেই সোশ্যালে সেই ছবি ঝড় তুলে দিয়েছিল। এরপর জার্মানির অস্ট্রিয়া ও সৌদি আরবের সঙ্গে ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ ছিল। ওজিল ও গুন্ডোয়ানকে জার্মান দলে খেলানো নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। যদিও ওজিল জানিয়েছিলেন যে, ওটা নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎকার ছিল।
তুরস্কের বংশোদ্ভূত ওজিল নিজের অবসরের বিবৃতিতে ছবি ইস্যুতে লিখেছেন, “তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছবি তোলার সঙ্গে রাজনীতি বা নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। আমার পরিবারের শিকড়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। সেখান থেকেই এই ছবি। আমার কাজ ফুটবল খেলা। আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি ডিএফবি (জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) ও আরও অনান্যদের থেকে যে আচরণ পেয়েছি তা অপ্রত্যাশিত। আমি এখানে ব্রাত্য। আর এই জার্সি গায়ে চাপাতে চাই না। ২০০৯ থেকে এখনও পর্যন্ত যা অর্জন করেছি, সবাই সেটা ভুলে গেছে। য়ারা ফুটবল ফেডারেশনের মধ্যে বর্ণবৈষম্য আনে তাঁদের ফুটবলের স্বার্থে কাজ না-করতে দেওয়াই কাম্য। এই পৃথিবীতে এরকম অনেক ফুটবলার আছে যাদের পরিবারের দ্বৈত ঐতিহ্য আছে।” ওজিল এখানেই থামেননি। ডিএফবি-র প্রেসিডেন্ট রেইনহার্ড গ্রিন্ডেলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, “গ্রিন্ডেল ও তাঁর সমর্থকদের কাছে দেশ জিতলে আমি জার্মানির, হারলে আমি অভিবাসী হয়ে যাই। জার্মানির জার্সি পরে আলাদা উত্তেজনা হত, গর্ব বোধ করতাম। এখন আর সেরকমটা মনে হচ্ছে না অত্যন্ত কষ্টের সঙ্গেই এই সিদ্ধান্তটা নিলাম”