অবশেষে মুখ খুললেন মিতালি রাজ। বোর্ডকে পাঠালেন পত্রবোমা। নড়ে গেল ভারতীয় ক্রিকেট। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে এখন চূড়ান্ত ডামাডোল। বিতর্কের কেন্দ্রে মিতালি রাজ বনাম হরমনপ্রীত কাউর। সদ্যসমাপ্ত টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের পর হরমনপ্রীত কাউরের দলগঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল ঝড় উঠেছে । ইংল্যান্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে কেন মিতালির মতো এরকম অভিজ্ঞ সিনিয়র ক্রিকেটারকে খেলানো হল না! এই প্রশ্নই উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। মিতালিকে না-খেলানোরই খেসারত দিতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে। ১১২ রানে গুটিয়ে যাওয়া ভারতকে আট উইকেটে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
এত বিতর্কের মাঝেও একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি মিতালি। এবার সরাসরি চিঠি লিখে ফেললেন তিনি। বিসিসিআই-এর সিইও রাহুল জোহরি ও ক্রিকেট অপারেশনসের জেনারেল ম্যানেজার সাবা করিমকে পাঠালেন সেই চিঠি। তোপ দাগলেন কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্সের (সিওএ) সদস্য ডায়না এডালজি ও ভারতীয় মহিলা দলের কোচ রমেশ পাওয়ারের বিরুদ্ধে। মিতালি জানিয়ে দিলেন যে. ক্ষমতাশালী কিছু মানুষ তাঁকে শেষ করে দিতে চাইছেন।
আরও পড়ুন: হরমনপ্রীত কাউর মিথ্যে বলছেন: মিতালি রাজের ম্যানেজার
মিতালি লিখলেন, “২০ বছরের কেরিয়ারে এই প্রথমবার আমি ভেঙে পড়েছি। ভাবতে বাধ্য হয়েছি যে, জাতীয় দলে কী আর আদৌ আমার কোনও মূল্য আছে! কিছু ক্ষমতাশালী মানুষ আমার আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিয়ে কেরিয়ার শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।” ডায়না এডালজির নাম করেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন মিতালি। জানিয়েছেন, “আমি বরাবর ডায়না এডালজির ওপর আস্থাশীল ছিলাম। সিওএ-তে তাঁর পদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। কিন্তু আমি কখনও ভাবিনি যে, তিনি তাঁর ক্ষমতার ব্যবহার করবেন আমার বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপের সময় আমার ওপর দিয়ে কী যাচ্ছে তা তিনি পুরোটাই শুনেছিলেন আমার থেকে। তারপরেও টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আমার দল থেকে বাদ পড়াকে সংবাদমাধ্যমের কাছে সমর্থন জানিয়েছিলেন। যেটা শুনে অসম্ভব মর্মাহত হয়েছি।”
টি-২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যাক-টু-ব্যাক ম্যাচে ওপেন করতে নেমে মিতালি হাফ-সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। যথাক্রমে ৫৬ ও ৫১ রানের ইনিংস খেলে ভারতের জয়ে সুনিশ্চিত করেছিলেন৷ দু’টিতেই ম্যাচের সেরার পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচে হাঁটুর চোটের জন্য মাঠে নামতে পারেননি মিতালি৷ তাঁর পরিবর্তে ম্যাচে ওপেন করতে নেমে তানিয়া ভাটিয়া চূড়ান্ত ব্যর্থ হন৷ তাসত্ত্বেও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ফের তানিয়াকেই ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল। আবারও ডাঁহা ফেল করেন তানিয়া। অথচ ম্যাচের পর হরমনপ্রীত জানিয়েছিলেন যে, মিতালিকে না-খেলানোর কোনও আক্ষেপই নেই তাঁর। যদিও মিতালি বলছেন যে, হরমনপ্রীতের ওপর তাঁর কোনও আক্রোশ নেই। তিনি লিখলেন, “আমি এটা পয়েন্ট আউট করতে চাই যে, হরমনপ্রীতের বিরুদ্ধে আমার বলার মতো কিছুই নেই। শুধু একটা বিষয় মেনে নিতে পারিনি যে, ও কী করে সেমিফাইনালে আমাকে না-খেলানোর সিদ্ধান্তে কোচের সঙ্গে সহমত হল! আমি দেশের জন্য বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিলাম। সুবর্ণ একটা সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার জন্য খুব কষ্ট পেয়েছি।”
কোচ রমেশ পাওয়ারের বিরুদ্ধেও মিতালি সরাসরি অভিযোগ করেছেন, তিনি একের পর এক ঘটনা তুলে ধরে বললেন, “ধরুন আমি কোথাও বসে আছি উনি আমার সামনে থেকে চলে যাবেন। নেটে অন্যদের ব্যাটিং দেখলেও আমার ব্যাটিংয়ের সময়ের উনি থাকবেন না। আমি ওনার সঙ্গে যখনই কথা বলার চেষ্টা করেছি উনি তখনই না হয় ফোন ঘাঁটতে ব্যস্ত হয় পড়েছেন, কিম্বা হাঁটতে শুরু করে দিয়েছেন। যেটায় অসম্ভব অপমানিত বোধ করেছি। কিন্তু কখনও মেজাজ হারাইনি।”