/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/07/11-19-17-Azhar.jpg)
সুললিত কব্জির মোচড়। সেই শিল্প এখন কোথায়! যার হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে কব্জি শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয়, সেই মহম্মদ আজাহারউদ্দিন স্মৃতিচারণা করলেন ফেলে আসা সেই দিন নিয়ে।
সালটা ১৯৮৪। দিল্লি টেস্টে হারাকিরি করার পর তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টার বয় সন্দীপ পাতিলকে বাদ দেওয়া হল। সেই সময়ে কপিলের হাতে বিকল্প তৈরিই ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে তুখোড় ফর্মে খেলতে থাকা মহম্মদ আজহারউদ্দিন ছিলেন অটোমেটিক চয়েস। তখন আজহার ২১।
তবে ফুটন্ত ইংল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক ঘটানোর জন্য কোনো তরুণের উপযুক্ত পরিবেশ সেটা মোটেও ছিল না। প্রথম ম্যাচে জিতেও সুবিধা হাতছাড়া হয়েছিল দ্বিতীয় টেস্ট হেরে বসায়। ম্যাচ শুরুর সময়েও আজহার জানতেন না, তিনি দলে থাকবেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/07/11-43-14-Azharuddin-archive.jpg)
আজহার বলছিলেন, "ম্যাচ শুরুর ৪৫ মিনিট আগে হঠাৎ জানতে পারি আমি খেলব।শুরুতে একটু নার্ভাস থাকলেও, আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তার আগে গত তিন চার মাস দারুণ ফর্মে ছিলাম ঘরোয়া ক্রিকেটে। রঞ্জিতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সুযোগ পাই জাতীয় দলে। নির্বাচকরাও আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন। চাঁদু বোরদে পর্যন্ত বলেছিলেন আমাকে খেলানো উচিত।"
স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তারকা ক্রিকেটার আরো বলছিলেন, "প্রথম দু-টেস্টে দ্বাদশতম ব্যক্তি হিসাবে দলে ছিলাম। আমি আন্দাজ করেছিলাম, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গেলে কীরকম মানসিক প্রস্তুতি দরকার হয়। আমি খেলা দেখে অনেক কিছু শিখেছি। আমি আসলে খুব ভালো পর্যবেক্ষক।"
প্রথম টেস্টে খেলতে নেমে আজহার কোন ক্রিকেটারদের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন, তা এখনো স্পষ্ট মনে রয়েছে তাঁর। বলছিলেন, "সানি ভাইয়ের (সুনীল গাভাস্কার) নেতৃত্বে খেলতে পেরে অনেক ভাগ্যবান ছিলাম আমি। ঐ টেস্টে কপিল পাজি ছিলেন না, তবে দিলীপ ভাই (বেঙ্গসরকার), জিমি ভাই (মহিন্দর অমরনাথ), কিরি ভাই (সৈয়দ কিরমানি) ছিলেন। আমাকে গাইড করার লোকের অভাব ছিল না।"
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ঐতিহাসিক টেস্ট অভিষেকের স্মৃতি এখনো পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে রেখেছেন সুপারস্টার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানাচ্ছিলেন, "ডিসেম্বরের শেষ দিকে কলকাতা বেশ ঠান্ডা ছিল। সেই প্রথমবার এত দর্শকদের সামনে খেলতে নেমেছিলাম। পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করে ইংরেজ পেসাররা দারুন বল সুইং করছিল। স্ট্রোক প্লেয়ারদের জন্য মোটেই সেই পিচ আদর্শ ছিল না। ১০ রানের মাথায় একবার বেঁচে গিয়েছিলাম। সেঞ্চুরি করতে ৩০০ র বেশি বল লেগে গিয়েছিল। সেই শতরান অনেক তৃপ্তি এনে দিয়েছিল আমাকে। এটাই ভাগ্য যে প্রথম টেস্টেই শতরান করতে পেরেছিলাম আমি।"
ইডেন আর আজহার- প্রেমপর্বের সেই শুরু। যা পরে আর দীর্ঘস্থায়ী হবে। ১৫ বছরের কেরিয়ারে ৭টা টেস্ট খেলেছেন হায়দরাবাদি তারকা। এর মধ্যে পাঁচটা সেঞ্চুরি সহ ১০৭.৫০ গড়ে ৮৬০ রান করেন। তার আগে স্কুল পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতে এসেও ইডেনে হাফ সেঞ্চুরি করে যান তিনি।
ইডেনে বিজয়ী হয়ে ফেরার পর সেই সিরিজেই চতুর্থ টেস্ট খেলা হয় মাদ্রাজে। সেই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ভালোই ব্যাট করছিলেন। তবে হাফসেঞ্চুরির ঠিক আগে ৪৮ রানে আউট হয়ে ফিরে যান তিনি। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তার প্রতিশোধ তোলেন শতরান হাঁকিয়ে।
আজহারউদ্দিন সেই স্মৃতি রোমন্থন করে জানাচ্ছিলেন, "দ্বিতীয় ইনিংসে চিপকে বল একটু টার্ন করছিল। তবে ভালো মাত্রায় বাউন্সও হচ্ছিল। নীল ফস্টার রীতিমত বাউন্স পাচ্ছিল। তাই সেই শতরান বেশ সন্তোষজনক। ছিল।" সেই টেস্টেই অমরনাথের সঙ্গে প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে আজহার যথাক্রমে ১১০ ও ১৯০ রানের পার্টনারশিপ খেলে যান।
তারপরে কানপুরের গ্রিন পার্কেও শতরান করে যান আজহার। "দিনের শেষে ৯৮ রানে ব্যাট করছিলাম। অনেকেই জিজ্ঞাসা করছিল, ঠিকমত ঘুমাতে পারবো কিনা। অবশ্যই আমি ভালোভাবে ঘুমিয়েছিলাম। কারণ শতরান না পেলেও আমি তো ৯৮ করেছিলাম।" গ্রিনপার্ক এ তাঁর ব্যাট থেকে বেরোয় ১২২ রানের ঝকঝকে ইনিংস।
অভিষেকের পর টানা তিন টেস্টে শতরান করে ইতিহাস বইয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। আজহার এখনো ভোলেন না সেই ঘটনা, "আমি প্রথমে রেকর্ডের বিষয়ে অবহিত ছিলাম না। তবে সেলিব্রেশন অনেকটাই সংযত ছিল। লাঞ্চব্রেকের সময় ড্রেসিংরুম থেকে আমাকে কমেন্ট্রি বক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আসলে আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইছিলেন রাজীব গান্ধী। তিনি আমাকে শুভেচ্ছা জানান ফোনে।"