বিশ্বকাপে ভারতীয় পেসারদের দাপুটে পারফরম্যান্সের পিছনে অদ্ভুত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সামনে এনে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন একাধিক প্রাক্তন পাকিস্তানি ক্রিকেটার। বলে দেওয়া হয়েছিল, বলের ওপর আলাদা আচ্ছাদন লাগিয়ে বল করছেন শামি-বুমরারা। পরিবর্তিত সেই বলের জন্যই নাকি বেশি সুইং আদায় করে নিচ্ছেন তাঁরা।
তবে এবার সেই পাকিস্তানি তারকাদেরই এবার একহাত নিলেন মহম্মদ শামি। পুমা-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুপারস্টার ভারতীয় বলে দিয়েছেন, "আমি খেলছিলাম না। তবে কানে আসছিল এসব ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। আমি এই বিশ্বকাপের প্ৰথম ম্যাচেই পাঁচ উইকেট তুলে নিই। দ্বিতীয় ম্যাচে দখল করি চার উইকেট। তৃতীয় ম্যাচে আবার চার উইকেট শিকার করি। অনেক পাকিস্তানি ক্রিকেটারেরই ব্যাপারটা হজম হচ্ছিল না। এতে আমি কী-ই বা করতে পারি!"
৭ ম্যাচে ২৪ উইকেট দখল করে শামিই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন। শামি বিষ্ফোরকভাবে আরও জানিয়ে দিয়েছেন, "কিছু পাকিস্তানি ক্রিকেটার মনে করেন, তাঁরাই হয়ত দুনিয়ার সেরা। ভালো ক্রিকেটারদের, বিশেষ করে ভারতীয়দের তো ওঁরা সহ্যই করতে পারেন না। যাঁরা প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠে দলকে সাফল্য এনে দেন, আমার কাছে তাঁরাই আসল পারফর্মার।"
পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার, বর্তমানে ধারাভাষ্যকার হাসান রাজা ভারতীয় পেসারদের সাফল্য নিয়ে বোমা ফাটিয়েছিলেন। বলেন, আইসিসির তরফেই হয়ত শামি-সিরাজদের অন্য বল দেওয়া হচ্ছে, যাতে বল বেশি পরিমাণে সুইং করে। শামি পাল্টা দিয়ে বলেছেন, "আপনারা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আউরে বলছেন যে বলের রং আলাদা হয়ে যাচ্ছে। আমরা নাকি একাধিক কোম্পানির কাছ থেকে বল পাচ্ছি। ভাই, প্লিজ শুধরে যাও…।"
শুধু হাসান রাজাই নন, এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে সায় ছিল পাকিস্তানের অন্য এক প্রাক্তনী মহম্মদ হাফিজেরও। যিনি আবার রোহিত শর্মার টস করার ধরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন টসে স্বচ্ছতা রাখার জন্য আইসিসির তরফে ড্রোন ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হোক। এমনকি পিচ পাল্টে দেওয়ার অভিযোগও ভেসে এসেছিল পাকিস্তানিদের তরফ থেকে। বলা হচ্ছিল, ইনিংসের বিরতিতে নাকি ভারতীয়দের জন্য পিচ বদলে ফেলা হচ্ছে সকলকে ধোঁকা দিয়ে।
শামি বিশ্বকাপ চলাকালীন এর আগে একহাত নিয়েছিলেন হাসান রাজাদের। ইন্সটা-স্টোরিতে লিখে দেন, "একটু তো লজ্জা থাকুক। এসব আলতু ফালতু বিষয়ে মন্তব্য না করে, ক্রিকেটে ফোকাস করো। কখনও কখনও অন্যের সাফল্যও উপভোগ করতে শেখো। এটা ওয়ার্ল্ড কাপ। স্থানীয় কোনও টুর্নামেন্ট নয়। তুমিও তো একসময় ক্রিকেটার ছিল, তাই তো? ওয়াসিম ভাই কিন্তু ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছে। তারপরেও এরকম মন্তব্য। তাহলে তো নিজেদের দেশের ক্রিকেটারদের ওপর তোমাদের বিশ্বাস নেই। স্রেফ নিজেই নিজের পিঠ চাপড়াচ্ছ।"
হাসান রাজার এই কমেন্টের জন্য ধিকৃত হয়েছেন পাক ক্রিকেটীয় মহলেও। ওয়াসিম আক্রম স্বয়ং একহাত নিয়েছেন প্রাক্তন সতীর্থকে, "গত কয়েকদিন ধরেই এই গল্প শুনে আসছি। ওঁরা কী সব নিয়ে (নেশার দ্রব্য) এসব মন্তব্য করছে, সেটা আমিও নিতে চাই। মনে হচ্ছে, মজা করেই বলেছে। তবে প্লিজ গোটা বিশ্বের সামনে আমাদের খাটো করে দিও না। এই অপমান নিজের কাছেই রাখো।"
আক্রমের এমন বক্তব্যের পরেও থামিয়ে রাখা যায়নি হাসান রাজাকে। বরং ভিন্নভাবে সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি। শামি তুলোধোনা করে আরও বলেছেন, "ওয়াসিম ভাই ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে বল সিলেক্ট করে বক্সের মধ্যে রাখা থাকে। তারপরও ওঁরা এরকম ষড়যন্ত্রের কথা বলে গেল! যদি এমন কেউ কোনও সমর্থক বলেন, যিনি কখন ক্রিকেট-ই খেলেনি, তাহলে সেটা বোধগম্য হত। তবে একজন প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে যদি এরকম অভিযোগ আনা হয়, সেটা আরও হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়।"