বর্ডার গাভাসকার সিরিজে প্ৰথম টেস্টেই ভারত রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন। মহম্মদ শামি এবং মহম্মদ সিরাজ প্ৰথম দিনের প্ৰথম ঘন্টাতেই ২/২ করে দিয়ে যে ধাক্কা দিয়ে দিয়েছিল, সেই ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি অজিরা। শামি নাগপুর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আরও দু-উইকেট দখল করে যান। যে ম্যাচে অশ্বিন-জাদেজা-অক্ষররা বিপক্ষের ষোলো উইকেট নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে, সেই টেস্টেও আলাদা করে নজর কাড়লেন মহম্মদ শামি।
বুমরার অনুপস্থিতিতে শামি জাতীয় দলের পেস বিভাগের সফলভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে রায়পুরে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হওয়ার পর শামি বলে দিয়েছিলেন, "দলে আমি আসার পর আমার ভূমিকা বিন্দুমাত্র বদলায়নি। স্রেফ ডায়েট এবং ফিটনেস নিয়ে খাটতে হচ্ছে আমাকে।"
ঘটনা হল, ২০১৮-য় শামির দুর্বল ফিটনেসই তাঁকে জাতীয় দল থেকে ছিটকে দিয়েছিল। এমন একটা সময় অতিবাহিত করতে হয়েছিল তারকাকে যেখানে তিনি অবসরের বিষয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছিলেন। সেই পর্বের ঘটনাই খোলস করেছেন শাস্ত্রী জমানায় জাতীয় দলের বোলিং কোচের ভূমিকা পালন করা ভরত অরুণ।
"২০১৮-য় ইংল্যান্ড সফরের আগে ফিটনেস টেস্টে শামি ব্যর্থ হয়। তারপর ও জাতীয় দলে জায়গা হারায়। ও একবার আমাকে ফোন করে কিছু কথা জানাতে চায় আমাকে। তাই ওঁকে আমি নিজের রুমে আমন্ত্রণ জানাই। ব্যক্তিগত জীবনে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল। এতে ওঁর ফিটনেসে প্রভাব ফেলেছিল। মানসিকভাবে ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। ও আমার কাছে এসে বলে বসে, 'আমি ভীষণ ক্রুদ্ধ এবং ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে চাই।'
"সঙ্গেসঙ্গেই শামিকে নিয়ে শাস্ত্রীর কাছে হাজির হই। রবিকে জানাই শামি কিছু বলতে চায়। রবি ওঁকেও সমস্যার কথা জানতে চায়। শামি একইভাবে বলে ও আর ক্রিকেট খেলতে চায় না। শামিকে আমরা দুজনেই জিজ্ঞাসা করি, ক্রিকেট না খেললে কী করবে? ক্রিকেটের বাইরে তুমি কী জানো? তুমি স্রেফ বোলিং করতে পারো।" এমনটাই ক্রিকবাজ-কে জানিয়েছেন ভরত অরুণ।
ভরত অরুণ আরও জানান, "রবি ওঁকে বলে, 'তুমি রেগে গিয়েছ, এটা ভালো ব্যাপার। এটা তোমার জন্য ভালোই হয়েছে। কারণ তোমার হাতে অন্তত একটা বল রয়েছে। সব রাগ বের করে দাও শরীর দিয়ে। আমরা তোমাকে এনসিএ-তে পাঠাচ্ছি।' এটা শামির জন্য ভালোই হয়েছিল। কারণ কলকাতায় যাওয়ায় শামির সমস্যা ছিল। তারপর এনসিএ-তে শামি পাঁচ সপ্তাহ কাটায়। ফিরে এসে ও বলে, নিজেকে যোদ্ধার মত মনে হচ্ছে। আমাকে যত খুশি দৌড় করান। যে পাঁচ সপ্তাহ ও এনসিএ-তে কাটিয়েছিল, ও বুঝতে পেরেছিল ফিটনেস ওঁকে কোন জায়গায় পৌঁছে দিতে পারে।"
এনসিএ-তে শামির ফিটনেস নিয়ে খাটনি শেষ পর্যন্ত তারকাকে ফের জাতীয় দলের দরজায় পৌঁছে দেয়। ২০১৮-য় ইংল্যান্ড ট্যুরে শামি দ্বিতীয় উইকেট সংগ্রাহক হন। পাঁচ টেস্টে ১৬ উইকেট নিয়ে যান শামি। অস্ট্রেলিয়াকে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও ১৬ উইকেট নেন শামি।
সেই সময়ে শামির ব্যক্তিগত জীবনে ঝড় উঠেছিল। বিচ্ছিনা স্ত্রী হাসিন জাহান শামির বিরুদ্ধে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, প্রতারণা, গার্হস্থ্য হিংসা সমেত একাধিক ধারায় অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হন। সেই সম্পর্ক আজও জোড়া লাগেনি। তবে শামি ব্যক্তিগত সম্পর্ক পিছনে ফেলে ফুল ফোটাচ্ছেন জাতীয় দলের জার্সিতে। নিয়মিত।
Read the full article in ENGLISH