তিনি এসেছিলেন, দেখেছিলেন, জয় করেছিলেন। শহরের ফুটবল নিঃশ্বাসের অঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন একটা সময়। তারপরে গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক স্রোত। সনি নর্ডি এখন মালয়েশিয়ান ফুটবল লিগের অন্যতম বড় স্টার।
তাঁর প্রিয় মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে 'এটিকে' শব্দবন্ধনী। সংযুক্তির সঙ্গে মিশে গিয়েছে এটিকে এবং মোহনবাগান দুই পৃথক ক্লাবের অস্তিত্ব। ঐতিহ্য মাখা মোহনবাগানের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি এটিকেকে একই বন্ধনীতে দেখে প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে মোহন-জনতা। ক্লাবের গেট থেকে সেই প্রতিবাদ আছড়ে পড়েছে যুবভারতীর গ্যালারিতেও।
আরও পড়ুন: রিয়েল মাদ্রিদের সুপারস্টার জেসে কি ATKMB-তে! খবরের ভিতরের খবর জেনে নিন
তপ্ত রাজপথে স্লোগান লিখে দেওয়া হয়েছে 'রিমুভ এটিকে'। আর প্রিয় দলের সমর্থকদের সুরে সুরে মিলিয়েই সনি নর্ডি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানিয়ে দিচ্ছেন, "মোহনবাগানের ঐতিহ্যের কথা ভেবে যত দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হোক 'এটিকে'। এটিকে মোহনবাগানের খেলা দেখার কোনও ইচ্ছাই আপাতত নেই।"
এসেছিলেন রাজার মত। প্রস্থান ততটা সুখের হয়নি। পায়ের লিগামেন্টে চোট পেয়ে আনফিট তকমা নিয়ে কলকাতা ময়দান ছাড়তে হয়েছিল। সবুজ-মেরুন জনতার নয়নের মনি তবু আজও আক্ষেপের তুফান তোলেন চায়ের কাপে, ফেসবুক ওয়ালে। সনি অবশ্য সেই উত্তাপ থেকে নিজেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। নিস্পৃহ গলায় তিনি বলেছিলেন, "আমি বর্তমান মুহূর্তে বাঁচি। অতীত ঘেঁটে আক্ষেপে বিশ্বাসী নই। যেভাবে আমার কেরিয়ার গড়ে উঠছে তাতে আমি খুশিই।"
মালয়েশিয়ান লিগে সনি নর্ডি (ফেসবুক)
ভারতে মোহনবাগান, মুম্বই সিটি এফসিতে খেলার পর সনি নর্ডির ঠিকানা হয়েছিল আজারবাইজানের জিরা এফকে-তে। গত দুই বছর ধরেই মালয়েশিয়ান সুপার লিগে ঠাঁই বেঁধেছেন। সেই পুরোনো ফর্মের আগুনের স্ফুলিঙ্গ অনেকটাই নিভু নিভু। সবুজ মেরুন জার্সিতে মাঠে নেমে গোল করা প্রায় অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিলেন। পাঁচ মরশুম ধরে তাঁর নামের পাশে ৩৭ গোল। আইএসএল-এও রয়েছে ৪ গোল। মেলাক্কা ইউনাইটেড এফসির হয়ে তিনি যে পড়ন্ত বেলার সূর্য। বিকেলের রোদের মত তেজ কমে এসেছে সনির গোল দক্ষতায়। মেলাক্কায় সানির গোলের সংখ্যা মাত্র ৭টি।
আরও পড়ুন: ভারতে খেলতে চাওয়ায় ভয়ঙ্কর হুমকিতে ইস্টবেঙ্গলের বিতর্কিত ফুটবলার! সন্ত্রস্ত হয়ে কাটছে দিন
এটিকে মোহনবাগানকে কিছুদিন আগেই যুবভারতীতে নিজেদের সমর্থকদের সামনেই চূর্ণ হতে হয়েছে কুয়ালালামপুর সিটি এফসির কাছে। সনি অবশ্য নিজের পুরোনো দলের দুর্দশা আগেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। কেএল সিটির বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ান লিগে নিয়মিত খেলার অভিজ্ঞতা মেখে সনি জানাচ্ছিলেন, "আমি মোটেই বিস্মিত নই। কারণ কেএল সিটির কোচ মালয়েশিয়ান লিগের অন্যতম সেরা কোচ। ওঁদের স্কোয়াডে একাধিক ভাল মানের বিদেশিও রয়েছে। আমি খেলা দেখিনি। তবে হাইলাইটস দেখেছিলাম যদিও।"
আইলিগর বটেই আইএসএল-ও সাক্ষী থেকেছে সনি নর্ডি ঝড়ের। হাইতিয়ান তারকার গান সেলিব্রেশন এখন ডার্বির মিথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সনি এসব পেরিয়ে এসেছেন বহুদিন। পুরোনো সেই দ্রিম দ্রিম আবেগ আর তাঁকে হয়ত নাড়া দেয় না। অভিমানের বাষ্প গলায় জড়িয়ে সবুজ-মেরুনের একদা ম্যাজিশিয়ান বলছিলেন, "আমি আইএসএল ফলো করি না। সময় থাকলে হাইলাইটস দেখি এটুকুই। মোহনবাগানের খেলা তো একদমই ফলো করি না। কোচের অল ইন্ডিয়ান আক্রমণভাগের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, সেটা কিন্তু ভারতের ফুটবলের জন্যই ভাল।"
আরও পড়ুন: ক্যাপ্টেন পোগবাকে নিয়ে বিরক্ত মেরিনার্সরা! এবার মুখ খুললেন কোচ ফেরান্দোও
ভারতীয় ফুটবলে শেষবেলায় আর প্রত্যাবর্তন ঘটাতেও বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই শেখ জামাল ধানমন্ডি থেকে কলকাতায় মা রাখা জাদুকরের। "আপাতত মালয়েশিয়াতেই গুছিয়ে নিয়েছি নিজেকে। পরিবার নিয়ে এখানেই বরং ভাল রয়েছি।" এক নিঃশ্বাসে বলে চলেছিলেন তিনি।
আবেগ তাঁকে আজ আর ধাওয়া করে না। জনতার চক্রবুহ্যে আর বন্দি হতে হয় না তাঁকে এখন। নিজেকে নিজের মত সাজিয়ে নিয়েছেন শহরের এই ফুটবল কোলাহল থেকে বহু দূরে। তবু স্মৃতিও কি কখনও নাড়িয়ে যায় না সবুজ মেরুনের একদা হার্টথ্রবকে? সে উত্তর অজানাই রয়ে গেল।