Advertisment

বিশাল টাকার চাকরি ছেড়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে বরফ-রাজ্যে অরিজিৎ, বাংলার র‍্যাঞ্চোকে কুর্নিশ দুনিয়ার

প্রবল জেদ এবং ইচ্ছা শক্তিতে ভর করে কার্যত অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন বঙ্গ সন্তান। কুর্নিশ করছে গোটা দেশ।

author-image
Subhasish Hazra
New Update
NULL

বাঙালি পরিশ্রম বিমুখ, কর্মবিমুখ! আলসে জীবন বাঙালির মগজের শিরায় শিরায়। ঝুঁকিহীন নিরুপদ্রব জীবনেই মোক্ষ বাঙালির শয়নে স্বপনে। এমন ধারণা কার্যত গেঁথে দেওয়া হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের।

Advertisment

এই ধারণাকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন শ্যামবাজারের অরিজিৎ দে। পেশায় ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বড়সড় অঙ্কের বেতন একাউন্টে জমা পড়ত মাস শেষে। নিশ্চুপ আরামের জীবনের সমস্ত উপকরণ নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়ার যাবতীয় মশলাই ছিল অরিজিতের কেরিয়ারে।

তবে সেসব এখন অতীত। বিশাল টাকা বেতনের চাকরি ছেড়েছুড়ে তিনি আপাতত বেছে নিয়েছেন অস্থির জীবন। পর্বতারোহণ রক্তের প্রতি প্রবাহে। নেশা ছিলই। এবার সেই নেশাতেই জীবন পার করার জন্য অনিশ্চিত আগামীকে সাদরে বরণ করে নিয়েছেন কলকাতার অরিজিৎ।

আরও পড়ুন: ভারতে খেলতে চাওয়ায় ভয়ঙ্কর হুমকিতে ইস্টবেঙ্গলের বিতর্কিত ফুটবলার! সন্ত্রস্ত হয়ে কাটছে দিন

ভারত এবং নেপাল হিমালয়ের ৬ হাজারের অধিকাংশ চূড়াই গত কয়েক বছরে আরোহণ করেছেন। ওটা ছিল সলতে পাকানো। বহু বছরই পাখির চোখ ছিল নেপালের সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট মানসলু (৮১৬৩ মিটার) অভিযান করার। সেই স্বপ্নের শিখাতেই তিনি আপাতত নেপালের অন্যতম উচ্চতম শৃঙ্গ জেতার কাছাকাছি।

গত কয়েক দিন ধরেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন কাঠমান্ডুতে। অপেক্ষায় ছিলেন নেপাল সরকারের অনুমতি পত্রের। অনুমতি পত্র মিলেছে চলতি সপ্তাহেই। তারপরেই নতুন উদ্যমে শুরু করে দিয়েছেন অনন্তের পথের সন্ধানে।

পরিসংখ্যান বলছে, মাউন্ট মানসলু অগম্য নয়। বহুবারই বিশ্বের অষ্টম এই উচ্চতম শৃঙ্গে আরোহণ করেছেন বহু ব্যক্তি। তবে এখানেও স্বকীয় তিনি। অতিরিক্ত শ্বাসবায়ু অক্সিজেন এবং শেরপা ছাড়াই তিনি চলেছেন অজানা পথে। পদে পদে মৃত্যুর ঝুঁকি।

আরও পড়ুন: ক্যাপ্টেন পোগবাকে নিয়ে বিরক্ত মেরিনার্সরা! এবার মুখ খুললেন কোচ ফেরান্দোও

কাঠমান্ডু থেকে গত সপ্তাহে অরিজিৎ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে হোয়াটসএপ কলে বলছিলেন, "মাউন্টেনিয়ারিং দুনিয়ায় ৮০০০ মিটার উচ্চতার বেশি পর্বতারোহণে রয়েছে অসম্ভব মৃত্যুর ঝুঁকি। ৮০০০ মিটার উচ্চতাকে তাই মাউন্টেনিয়ারিংয়ের পরিভাষায় ডেথ জোন ধরা হয়। এত উঁচুতে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে ভয়ঙ্কর কষ্ট হয় পাতলা বাতাসের জন্য। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের ক্ষেত্রে আইসফল ডক্টর, ওয়েদার রিপোর্টার, শেরপা, গাইড, কুক, হেল্পার, পোর্টার থাকে। আর আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কথা ভেবে অতিরিক্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্যারি করতে হয়।"

"তবে এরকম কোনও অতিরিক্ত সুবিধা ছাড়াই পর্বতারোহণ করতে চলেছি। বিশ্বে ভয়ঙ্কর এই ঝুঁকি বহুল।এই অভিযানকে আলপাইন স্টাইল বলা হয়।"

মৃত্যুর হুমকি থাকে প্রতি পদক্ষেপে, অক্সিজেনের ঘাটতি হলে কার্যত মৃত্যুর কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করতে হয়। বহু পর্বতারোহী অতীতে এরকম অভিযানে গিয়ে স্রেফ হারিয়ে গিয়েছেন বরফের দেশে। হিমালয় পর্বতে অস্ট্রিয়ান হারমান বুল ছিলেন এই স্টাইলের অগ্রদূত। কোনও সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ছাড়াই নাঙ্গা পর্বত সফলভাবে অভিযান করেছিলেন তিনি। হাতে গোনা কয়েকজন মাউন্টেনিয়ারই সফলদের ব্র্যাকেটে নাম লিখিয়েছেন। এবার সেই দুর্গম পথের নেশাতেই ভারতের হারমান বুল হতে চাইছেন অরিজিৎ।

নেপাল সরকারের অনুমতি পত্র পেয়ে যাওয়ার পরেই ৬ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডু ছেড়ে বেসিশহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন অরিজিৎ। সেখান থেকে গাড়ি করে ধারাপানি, ট্রেক করে গোওয়ায় গিয়ে নেটওয়ার্কের হদিশ পাননি ফোনে। ৮ সেপ্টেম্বর ফেদি, ৯ সেপ্টেম্বর ধর্মশালা, ১০ সেপ্টেম্বর সামাগাউন যাওয়ার পরে হালকা নেটওয়ার্কের দেখা পান অরিজিৎ।

বিস্তীর্ণ পর্বত রাজ্যের অনেক পথ পেরোনো বাকি। তাঁর মধ্যেই তিনি হোয়াটসআপ কলে বললেন, "বন্ধুদের বারবার বলতাম, আমার শিক্ষা আমাকে পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখেনি। এটাই আমার শক্তি। প্ৰথমে বাড়ির সকলে চাকরি ছাড়ার পর আপত্তি করেছিলেন। ওঁদের এখনও বোঝাতে পারিনি মাউন্টেনিয়ারিংও একটা স্পোর্টস। এতদিন বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছুটা রাজি হলেও পুরোটা নিশ্চিত নন ওঁরা। আলপাইন স্টাইলে যদি সফল হই, তাহলে হয়ত ওঁরা আমার প্যাশনের বিষয়ে কিছুটা হলেও টের পাবেন।"

স্বপ্ন, বুকে দ্রিম দ্রিম হৃদগতি, পরিবারের আপত্তি, প্যাশনের জন্য নিরন্তর সাধনা- কোথাও হয়ত মিলে যাচ্ছে মহেন্দ্র সিং ধোনির অখ্যানের সঙ্গে। কিংবা পর্দার র‍্যাঞ্চো তো এরকমই হতে চেয়েছিলেন না!

Sports News mountain Sports Others
Advertisment