একসময় হকি খেলতেন। দেশকে গর্বের সমস্ত মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন। তবে এখন আর হাতে নেই হকি স্টিক। হকির জাদু দণ্ড নিয়ে যিনি একসময় মাঠে দাপিয়ে বেড়াতেন, তিনি এখন 'পাল্লেদার'। খালাসির কাজেই মানিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। ৩০ বছরের পরমজিৎ কুমার এখন স্বপ্নের খেলাধুলার জগৎ থেকে বহুদূরে। ফরিদকোট মান্ডিতে লরি-ট্রাক থেকে চাল-চিনি-আটা লোডিং, আনলোডিংয়ের কাজ করেন। যে কাঁধে একসময় স্বপ্ন দেখত গোটা ভারত, সেই চওড়া কাঁধে এখন ভারী ভারী বস্তা সওয়ারি হয়।
পরমজিৎ একটা সময় পর্যন্ত দেশের অন্যতম সেরা প্রতিশ্রুতিমান তারকার মর্যাদা পেতেন। সাই, পেপসু এমনকি পাঞ্জাব রাজ্য হকি দলেরও সদস্য ছিলেন। চারবার যুব পর্যায়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ২০০৭-এ দেশের জুনিয়র হকি দলে ডাক-ও পেয়েছিলেন। স্বপ্নের উত্থান ওখানেই শেষ। আপাতত তিনি খালাসির কাজ করে বস্তা পিছু ১.২৫ টাকা উপার্জন করেন। পেট চালানোর জন্য দিনে ৪৫০ বস্তা লোডিং, আনলোডিং করতেই হয়।
ফরিদকোট থেকে হতাশা মাখা গলায় পরমজিৎ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলে দেন, "বস্তা খালাস করা আমার দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি ব্যাগ থেকে আমার আয় হয় ১.২৫ টাকা। আমি যেখানে কাজ করি, সেখানে কেউই হকির বিষয়ে খোঁজ খবর রাখে না। যদিও বা কেউ জানতে পারেন। তিনি আমার পিঠ চাপড়ে দেন। হকি থেকে আমার পুরস্কার বলতে এটাই। বাড়িতে ফিরে নিজের ছেলে বিক্রান্তকে প্লাস্টিকের হকি স্টিক দিয়ে খেলা শেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাই। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা যেন ওঁর সঙ্গে না হয়।"
ফরিদকোটেই জন্ম, বেড়ে ওঠা। গভর্নমেন্ট বিজেন্দ্র কলেজে কোচ বলতেজ ইন্দেপাল বাবু হকিতে নিয়ে আসেন তাঁকে। পরে যদিও পরমজিৎ কোচ হিসেবে বেছে নেন বলজিন্দর সিংকে। ২০০৪ সালে পরমজিৎ পাতিয়ালায় সাই-য়ে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন। তারপরে ২০০৭-এ পাতিয়ালার হকির উৎকর্ষ কেন্দ্রেও সুযোগ পেয়ে যান। এভাবে ঠিক পথেই এগোচ্ছিল হকির কেরিয়ার। ২০০৯-এ পাঞ্জাব পুলিশ এবং পাঞ্জাব ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ডের হয়ে খেলা শুরু করেন।
পাতিয়ালায় থাকার সময়েই পরমজিৎ অনুর্দ্ধ-১৬ এবং ১৮ সম্মিলিত একাদশের সদস্যও ছিলেন। অনুর্দ্ধ-১৬-য় তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে দলের সঙ্গে সেবার রুপো জেতেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পাঞ্জাব রাজ্য দল এবং পেপসু-র হয়েও খেলেছেন পরমজিৎ। ২০০৭-এ বাংলাদেশে যুব এশিয়া কাপ আয়োজিত হয়েছিল। সেই টুর্নামেন্টেও জাতীয় দলের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
২০১২ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। তবে তারপরেই সর্বনাশ ঘটে কেরিয়ারে। বাঁ হাতে চোট পান তারকা। যাতে খেলা থেকে এক বছরের বেশি সময় দূরে থাকতে হয় তাঁকে। চোট সারিয়ে ফিরিয়ে এসে রাজ্য এবং স্থানীয় পর্যায়েও টুর্নামেন্ট খেলা চালু করেন। ২০১৫-য় আর্থিক তাড়নায় শেষমেশ খালাসির কাজে নেমে পড়েন। বর্তমানে ভাড়া করা এক বাড়িতে থাকেন স্ত্রী-পুত্র এবং বোনকে নিয়ে। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে তাঁর। সেখানেই সরকারি চাকরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করবেন তিনি।
চোখে জল এনে পরমজিৎ জানাচ্ছিলেন, "চোটের পরে কামব্যাক করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পেট চালানোর জন্য মান্ডিতে খালাসির কাজে নেমে পড়তে হয়। সরকারি চাকরি পেলেই কোচ অথবা প্লেয়ার হিসাবে খেলায় ফিরব। সেরকম ঘটলে, ছেলের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমি সিনিয়র জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারিনি, ছেলে হয়ত আমার সেই আক্ষেপ পূরণ করতে পারবে।"
Read the full article in ENGLISH