সুপ্রীতি তখন কোলের শিশু। তাঁর মা, বালমতি দেবীর আজও মনে আছে দিনটা। ২০০৩-এর ডিসেম্বর। সেই কুয়াশাচ্ছন্ন রাত। পাঁচ সন্তানকে নিয়ে তিনি স্বামী রামসেবক ওরাওঁয়ের বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করছিলেন। ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার বুরহু গ্রাম। রামসেবক ছিলেন গ্রাম্য চিকিত্সক। চার গ্রামবাসীর সঙ্গে পাশের গ্রামে রোগী দেখতে গিয়েছিলেন। পরের দিন তাঁকে ওই চার জনের সঙ্গে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। দেহগুলো গাছের সঙ্গে বাঁধা ছিল। বাসিন্দাদের সন্দেহ, নকশালরা গুলি করে ওই চিকিত্সক ও চার গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে।
সেই ছোট্ট সুপ্রীতি আজ বড় হয়েছে। ১৯ বছরের মেয়েটা ৩,০০০ মিটার দৌড়ে নতুন রেকর্ড গড়ল। হরিয়ানার পঞ্চকুলায় খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমসের আসর বসেছে। সেখানে ৯ মিনিট ৪৬.১৪ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেছেন সুপ্রীতি। ভাঙলেন ৯ মিনিট ৫০.৫৪ সেকেন্ডের রেকর্ড। সোনার মেয়ের সাফল্যে চোখের জল বাগ মানেনি বালমতি দেবীর।
গুমলা থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বালমতি দেবী বলছিলেন, 'নকশালরা যখন সুপ্রীতির বাবাকে মারল, সুপ্রীতি তখন হাঁটতেও শেখেনি। ওঁদের বাবা খুন হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমি সন্তানদের মানুষ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছি। ও সবসময় বলত দৌড়তে ভালোবাসে। আজ যদি ওঁর বাবা বেঁচে থাকতেন, তো খুব খুশি হতেন। আমরা জানি, উনি স্বর্গ থেকে নজর রাখছেন। মেয়ে বাড়ি ফিরলে, আমরা বুরহু গ্রামের বাড়িতে ওর পদক নিয়ে যাব।' স্বামীর মৃত্যুর পর, বালমতি দেবী গুমলার ঘাঘরা ব্লকের ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের (বিডিও) অফিসে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি হিসেবে চাকরি পান। মেয়েদের নিয়ে বুরহুর বাড়ি ছেড়ে চলে যান সরকারি কোয়ার্টারে।'
সুপ্রীতি প্রথমে নুকরুদিপা চানপুর স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর দৌড়ের শুরু। ছোট মাটির ট্র্যাকে ছোট্ট মেয়েটির পা যেন কথা বলত। পরে, তাঁকে বৃত্তিতে গুমলার সেন্ট প্যাট্রিক স্কুলে ভর্তি করেন বালমতী দেবী। তখনই নাম দিয়েছিলেন আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায়। নজরে পড়ে যান কোচ প্রভাত রঞ্জন তিওয়ারির। তিনিই ২০১৫ সালে গুমলার ঝাড়খণ্ড ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যান সুপ্রীতিকে।'
আরও পড়ুন- IPL যুদ্ধ থেকে সরে গেল Amazon! কোটি কোটি টাকার লড়াইয়ে পোয়াবারো আম্বানির রিল্যায়েন্সের
সেই ছাত্রীর সাফল্যে আজ খুশি প্রভাতরঞ্জন তিওয়ারি। তিনি বলেন, 'আমরা প্রায়ই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় যাই আদিবাসীদের মধ্যে প্রতিভা খুঁজে বের করার জন্য। প্রথমে আমি ওকে ৪০০ মিটার এবং ৮০০ মিটারে নামিয়েছিলাম। পরে দেখলাম, ও লম্বা দূরত্বে সবচেয়ে ভালো দৌড়য়। তাই ১,৫০০ মিটারে নামিয়েছিলাম। তারপর নামালাম ৩,০০০ মিটারে। দেখলাম খুব ভালো দৌড়চ্ছে। আমি খুব খুশি।'
Read full story in English