ভারতীয় ক্রীড়াজগতে শোকের ছায়া। ভারতের প্রথম দৃষ্টিহীন আয়রনম্যানের হঠাৎ মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ দেশের ক্রীড়ামহল। লক্ষ মানুষের অনুপ্রেরণা নিকেত শ্রীনিবাস দালালের অকালপ্রয়াণে পুরো দেশের জন্যই এক বড় ধাক্কা। ১ জুলাই সকালে মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের ছত্রপতি সম্ভাজীনগরে একটি হোটেলের পার্কিং লটে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়। তদন্তে জানা গেছে, তিনি হোটেলের তিনতলা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনাটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
নিকেতের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ৩০ জুন রাতে হঠাৎ তাঁর বাড়িতে আগুন লেগে যায়। সেই সময় তাঁর বন্ধুরা তাঁকে নিরাপদে বের করে নিয়ে গিয়ে প্রায় রাত ২:৩০টা নাগাদ একটি হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে। কেউ ভাবতেও পারেনি এটাই হবে তাঁর শেষ রাত।
সকাল প্রায় ৮টা নাগাদ হোটেল স্টাফরা পার্কিং লটে নিকেতের দেহ দেখতে পান। আপাতত পুলিশ এটিকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখছে। তবে পুরো শহরজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, কারণ নিকেত শুধু একটি নাম ছিলেন না, ছিলেন এক আশার প্রতীক। বর্তমানে পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্ত করছে।
কে এই নিকেত দালাল?
নিকেত দালাল এমন এক অসাধ্যকে সম্ভব করেছেন, যা সুস্থ চোখ থাকলেও অনেকের পক্ষে করা সম্ভব নয়। ২০২০ সালে তিনি আয়রনম্যান 70.3 ট্রায়াথলন সম্পূর্ণ করেন। এই প্রতিযোগিতায় ১.৯ কিলোমিটার সাঁতার, ৯০ কিলোমিটার সাইকেল রেস এবং ২১.১ কিলোমিটার দৌড় থাকে। তিনি শুধু ভারতের প্রথম নয়, বিশ্বের পঞ্চম দৃষ্টিহীন অ্যাথলিট হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।
২০১৫ সালে নিকেত গ্লুকোমা রোগে সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টিশক্তি হারান, তবে তিনি কখনও হাল ছেড়ে দেননি। পেশায় তিনি স্পিচ থেরাপিস্ট ছিলেন এবং খেলাধুলায় তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি জাতীয় পর্যায়ের সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনটি পদকও জিতেছিলেন।
পরিবার ও শহর শোকে স্তব্ধ
নিকেতের পরিবারে রয়েছেন তাঁর মা লতা দালাল, যিনি ঔরঙ্গাবাদের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র ছিলেন। নিকেতের প্রয়াণ শুধু তাঁর পরিবার নয়, গোটা ক্রীড়াজগৎ ও অসংখ্য অনুরাগীর কাছে এক অপূরণীয় ক্ষতি। শহরজুড়ে মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।