দীপা মালিক, লড়াইয়ের প্রতিশব্দ তিনি। যাঁর সংবিধানে অসম্ভব বলে কোনও শব্দ নেই। পাঞ্জাব তনয়ার অসাধারণ মনের জোরের কাছে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা নুইয়ে পড়ে। হুইল চেয়ারে বসেই ইতিহাস লিখেছেন বছর তিনেক আগে। প্য়ারা অলিম্পিকে ভারতকে প্রথম পদক এনে দেওয়া অ্যাথলিট আজ অনুপ্রেরণার এক প্রতিষ্ঠান। তিনি থামতে শেখেননি। আপাতত ট্র্য়াক অ্যান্ড ফিল্ড নয়, দীপার লক্ষ্য় সমুদ্র অভিযান।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্য়ায় ক্রেডাই বেঙ্গলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে বাইপাসের ধারের এক পাঁচতারা হোটেলে ছিলেন দীপা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা এখন তাঁকে বিরাট অর্থের বিনিময় মোটিভেশনল স্পিকার হিসাবেই আমন্ত্রণ জানায়। এই অনুষ্ঠানেও তিনি এসেছিলেন সেই কাজেই। নোটবন্দি ও জিএসটি ও বিভিন্ন করের ধাক্কায় রিয়াল এস্টেট সংস্থাগুলি এখন ধুঁকছে। দীপার ৪৫ মিনিটের ভাষণের পর রিয়াল এস্টেটের বড় কোম্পানি কর্তাদের হাততালিই বলে দিয়েছিল, দীপা ঠিক কত'টা অক্সিজেন ভরে দিয়ে গেলেন তাঁদের।
দীপার শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে তাঁর দু'টো হাত কাঁধের ওপর ওঠে না। বুকের নিচ থেকে শরীরের বাকি অংশ পুরোপুরি অসাড়। শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তচাপও তাঁর অনিয়ন্ত্রিত। অতিরিক্ত আলো সহ্য় করতে পারেন না দীপা। তাঁর খাদ্য়াভাস উনিশ থেকে বিশ হয়ে গেলে নিজের মলমূত্রের ওপরেও রাখতে পারেন না নিয়ন্ত্রণ। দেখতে গেলে তাঁর বেচেঁ থাকাটাই বিস্ময়ের। ডিসকাস ও জ্য়াভলিনে এশিয়ান প্য়ারা অলিম্পিকে একাধিক পদক জয়ী দীপা তবুও স্বপ্ন দেখতে পারেন। তাঁকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য সৈন্য়ের মতো নেমে পড়েন মাঠে।
দীপা এখন জলের পৃথিবীতে রাজত্ব করতে চান। ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়া হচ্ছে না দীপার। নিজের নাম প্রত্য়াহার করে নিয়েছেন তিনি। আসন্ন টোকিও প্য়ারা অলিম্পিকে দীপার দু'টি ইভেন্টের মধ্য়ে একটিও নেই। জ্য়াভলিন ও শট পুট রাখা হয়নি। আছে শুধুমাত্র ডিসকাস। কিন্তু চোটজনিত কারণে ডাক্তারের পরামর্শেই তাঁর পক্ষে ডিসকাস ইভেন্টে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে দীপা বলছেন, "আমার হাত আর ঘাড় শুধু কাজ করে। অলিম্পিকে ডিসকাসে অংশ নিলে হাত দু'টো হারাতে পারি। ফলে ডাক্তারের পরামর্শেই নামব না। যদিও আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে হচ্ছে। কিন্তু কী করা যাবে! এটাই জীবন।"
সমুদ্র অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন দীপা। রীতিমতো রেকর্ড করার ব্য়াপারে আশাবাদী তিনি। বলছেন, "আমি তো বসে থাকার মানুষ নই। ২০২০-তে নতুন চ্য়ালেঞ্জ। সি সুইমার হিসাবে নিজেকে দেখতে চাই। ব্য়ক্তিগত রেকর্ড করব। এটা কিন্তু প্য়ারা অলিম্পিক বা প্য়ারা সুইমিংয়ের সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। এটা একটা অ্যাডভেঞ্চারের মতো, যাতে আমার নতুন বছরটা ফাঁকা না যায়। খেলার সঙ্গে থাকব। "
সমুদ্রের কথা ভাবলেই মাথায় আসে ইংলিশ চ্য়ানেল। দীপার মাথাতেও এসেছিল সেই ভাবনা। কিন্তু নিজের শরীরের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন তিনি। দীপা এ প্রসঙ্গে বলছেন," ওখানে জলের তাপমাত্রার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারব না। ওই ঠান্ডায় আমার শরীর অসাড় হয়ে যাবে। এমনকী আমি হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারি। ঠান্ডা জল আমার সহ্য় হবে না। কিন্তু গোয়া এবং মলদ্বীপে গিয়ে আমি জলের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু আমার আসল প্রস্তুতি শুরু হবে আগামী বছর গ্রীষ্মের সময়।"