Para Cricket Captain Jammu and Kashmir:: আমির হোসেন লোন, কাশ্মীরের ওয়াঘামা গ্রামের বাসিন্দা। আট বছর বয়সে তাঁর বাবার মিলে কাজ করার সময় নিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র, দুই হাত চিরতরে হারিয়েছিলেন। তবে, তিনি আশা ছাড়েননি। তাঁর আশা ছিল বড় ক্রিকেটার হবেন। একদিন তাঁর ক্রিকেটীয় দক্ষতাকে সম্মান করবে গোটা দেশ।
সেই আশায় নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া আমির একদিন এক শিক্ষকের নজরে পড়ে যান। যিনি কাশ্মীরের এই গ্রামের ছেলেটির মধ্যে ক্রিকেটীয় প্রতিভা খুঁজে পান। তাঁকে পেশাদার ক্রিকেট খেলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
এই প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা ANI-কে আমির বলেন, 'ওই দুর্ঘটনার পরও আমি আশা হারাইনি। কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি নিজেই সবকিছু করতে পারি। আমি কারও ওপর নির্ভরশীল নই। আমার দুর্ঘটনার পর কেউ আমাকে কোনও সাহায্য করেনি। এমনকী সরকারও আমাকে কোনও সাহায্য দেয়নি। কিন্তু, আমার পরিবার সবসময় আমার পাশে ছিল।'
আরও পড়ুন- টাকা ধার করেছিলেন বাবা, মা বিক্রি করেন সোনার গয়না! ধ্রুবর টিম ইন্ডিয়ায় সুযোগ যেন রূপকথা
ঘাড় এবং কাঁধের মাঝখানে ধরে ব্যাটিং। আর, পায়ের মাধ্যমে বোলিংয়ের অনন্য দক্ষতা আয়ত্ত করেছেন আমির। ৩৪ বছর বয়সি ক্রিকেটার এই প্রসঙ্গে বলেন, 'আমার খেলার জন্য আমি সর্বত্র প্রশংসা পেয়েছি। আমি মনে করি যে, ঈশ্বরের জন্যই আমার কঠোর পরিশ্রম প্রতিফলিত হয়েছে। কারণ পায়ে বোলিং করা সত্যিই কঠিন। কিন্তু, আমি সমস্ত দক্ষতা এবং কৌশল শিখে নিয়েছি। আমি প্রতিটি কাজ নিজেই করি। আমি ঈশ্বর ছাড়া কারও ওপর এই সব ব্যাপারে নির্ভরশীল নই।'
আমির ২০১৩ সাল থেকে প্যারা ক্রিকেট খেলছেন। বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীর প্যারা দলের অধিনায়ক। তাঁর কথায়, 'আমি ২০১৩ সালে দিল্লিতে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলাম। ২০১৮ সালে আমি বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলাম। এরপর নেপাল, শারজাহ এবং দুবাইয়ে ক্রিকেট খেলেছি। আমাকে আমার পা দিয়ে খেলতে (বোলিং) এবং কাঁধ ও ঘাড় দিয়ে ব্যাটিং করতে দেখে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছেন। আমি ক্রিকেট খেলার শক্তি দেওয়ার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই।'
আরও পড়ুন- দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন পা! চা বিক্রি করেই ক্রিকেটে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন সালকিয়ার রমেশের
শচীন তেন্ডুলকার এবং আশিস নেহরা অতীতে তাঁর দৃঢ় সংকল্প এবং অটুট চেতনার জন্য আমিরের প্রশংসা করেছেন। নেহরা মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রিকেটার আমিরকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। বলিউড তারকা ভিকি কৌশল ২০২৩ সালে রিয়েলিটি শো 'সা রে গা মা পা'-এর সময় আমিরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
এই কাশ্মীরি ক্রিকেটার ও তাঁর উঠে আসার কথা শুনে রীতিমতো মুগ্ধ হয়েছিলেন। ভিকি বলেন, 'যদি আমি কখনও কোনও ভারতীয় ক্রিকেটারের বায়োপিক করার সুযোগ পাই, সেই ক্রিকেটার কে হবেন, আজ আমি আমার উত্তর পেলাম। সিনেমার মাধ্যমে তাঁর (আমির হুসেন লোন) জীবন দেখানোর সুযোগ পেলে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করব।'