Angela Carini Imane Khelif controversy: মাত্র ৪৬ সেকেন্ড খেলার পরই ইতালির এঞ্জেলা কারিনি আলজেরিয়ার ইমেন খেলিফের বিরুদ্ধে বক্সিং ম্যাচ ছেড়ে দিলেন। ঘুরিয়ে খেলিফকে কার্যত পুরুষ বলে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। যাতে অভিযোগ উঠল, এই ম্যাচে জয় পেল আসলে 'এক পুরুষের হাসি'। এঞ্জেলা ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার পরই প্যারিস অলিম্পিকের এই বক্সিং ম্যাচ ঘিরে পাকিয়ে উঠল লিঙ্গ সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব। এনিয়ে লেখক জেকে রাউলিং, ইতালীর প্রধানমন্ত্রীও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সমালোচনা করেছেন। পালটা অভিযুক্ত খেলিফের পাশে দাঁড়িয়েছেন এক আইরিশ বক্সার।
একইসঙ্গে ওই ম্যাচে ইতালির এঞ্জেলা কারিনির হাঁটু গেড়ে অস্বস্তিকরভাবে কাঁদার ছবিটাও ভাইরাল হল। আলজেরিয়ার ইমেন খেলিফের বিরুদ্ধে তাঁর ১৬ রাউন্ডের খেলায় মাত্র ৪৬ সেকেন্ডের ম্যাচ ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিল। খেলিফ গত বছর ভারতে আয়োজিত বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপের সময় আন্তর্জাতিক বক্সিং এজেন্সি পরিচালিত লিঙ্গ-যোগ্যতা পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। প্যারিস অলিম্পিকের ম্যাচে খেলিফের আঘাতে কারিনির নাক ভেঙে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ৬৬ কেজি বিভাগের এই ম্যাচ সম্পর্কে কারিনি বলেছেন, কোনও মহিলাকে তিনি এত জোরে আঘাত করতে দেখেননি।
ম্যাচে লড়াইয়ের প্রথম দিকে, খেলিফের ঘুষিতে কারিনির চিবুকের গার্ড খুলে যায়। এরপর কারিনিকে তাঁর হেড গার্ড ঠিক করার জন্য সংক্ষিপ্ত বিরতি নিতে হয়। শীঘ্রই, খেলিফের ডান হাত কারিনির চিবুকের ওপর একটি ঘুষি বসায়। এই সময় কারিনি তাঁর দলের সহায়তা চান। কারণ, ঘুষিতে কারিনির শর্টস পর্যন্ত রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি আর লড়াই চালিয়ে যেতে চাননি। ম্যাচ ছেড়ে দেন। রেফারিও তখন প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেন। তখন কারিনি হাঁটু মুড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সান্ত্বনা দিতে খেলিফ তাঁর হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু, কারিনি খেলিফকে উপেক্ষা করেন। একবার নয়। দু'বার এমন ঘটনা ঘটে। রিং এর ভিতরে কারিনি তাঁর কোচকে বলেন, 'এটা ঠিক না, এটা ঠিক না।'
নেপলসের মেয়ে বছর ২৫-এর কারিনি পরে সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার মন ভেঙে গিয়েছে। আমাকে অনেকবার বলা হয়েছে যে আমি একজন যোদ্ধা। কিন্তু, আমি আমার স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই ম্যাচটা থামিয়ে দিয়েছি। আমি কখনও কোনও মহিলার থেকে এত শক্তিশালী ঘুষি খাইনি। তবে, আমি লড়াই করার জন্য রিংয়ে নেমেছি। হাল ছাড়িনি। কিন্তু, একটা ঘুষি আমাকে খুব জোরে আঘাত করেছে। আমি মাথা উঁচু করেই বাইরে যাচ্ছি।'
কারিনি সাংবাদিকদের এ-ও বলেন, 'এটা আমার পরাজয় নয়। আমি এখানে বিচারক হিসেবে আসিনি। এটা ম্যাচে জয় ন্যায্য নাকি অন্যায্যভাবে হয়েছে, তা বলার ক্ষমতাও আমার নেই। আমি শুধু আমার কাজ করেছি। মাথা উঁচু করে চলে যাচ্ছি। আমি একজন পরিণত মহিলা। যখন আমি অনুভব করলাম যে ম্যাচ চালিয়ে যেতে পারব না, তখন আমি সরে এলাম। আমি হার মানছি না। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে আমি জিতব। আমি মনোযোগী এবং পরিষ্কার মনের। কিন্তু, এই ঘুষি যেভাবে নাকে লেগেছে, আমি ম্যাচ থেকে সরে আসতে বাধ্য হলাম।'
আরও পড়ুন- দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এই দলের কি কোচ হচ্ছেন দ্রাবিড়! বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেন মুখ খুললেন সরাসরি
খেলিফ প্রথমে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। পরে সংক্ষেপে বিবিসিকে বলেন, 'আমি এখানে সোনা জিততে এসেছি। এজন্য আমি যে কারও সঙ্গে লড়াই করতে প্রস্তুত।' আলজেরিয়ার সরকারি টিভিতে খেলিফ বলেন, 'আমি আলজেরিয়ার জনগণকে বলছি যে আমি তাদের খুশি করার জন্য আমার পক্ষ থেকে যথাসাধ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।'
খেলিফকে নিয়ে এই বিতর্কের জন্যই অলিম্পিকে তাঁকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কাউন্সিলকে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। গত বছর, নয়াদিল্লিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তার স্বর্ণপদক লড়াইয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে খেলিফকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই সময়ে তিনি আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের (আইবিএ) যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এমনকি তাইওয়ানের ডাবল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন লিন ইউ-টিং-এর দিল্লি ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক একই মানদণ্ড পূরণ না করার জন্য তাইওয়ানের ওই বক্সারকেও বাতিল করা হয়েছিল। আইবিএ সভাপতি উমর ক্রেমলেভের মতে, দুই বক্সারের ডিএনএ পরীক্ষা, 'প্রমাণ করেছে যে তাঁদের XY ক্রোমোজোম রয়েছে এবং তাই বাদ দেওয়া হয়েছে।' প্রসঙ্গতঃ, XY হল পুরুষদের ক্রোমোজোম। আর XX হল মহিলাদের ক্রোমোজোম।
যাইহোক, তাইওয়ানের ওই বক্সার ও খেলিফ, উভয় বক্সারকেই প্যারিস অলিম্পিকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কারণ, আন্তর্জাতিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন (IBA) আর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (IOC) দ্বারা স্বীকৃত নয়। অলিম্পিক গেমসের বক্সিং ইভেন্টগুলো IOC-এর কার্যনির্বাহী বোর্ড দ্বারা গঠিত প্যারিস বক্সিং ইউনিট (PBU) নামে একটি অ্যাড-হক সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ক্যারিনির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রাক্কালে, আইবিএ বলেছে যে খেলিফ প্রাথমিকভাবে তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খেলার সুবিধা পেতে আরবিট্রেশন কোর্টে (সিএএস) আপিল করেছিল। কিন্তু, প্রক্রিয়া চলাকালীনই আপিলটি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। যা থেকে, আইবিএ বিশ্বাস করে যে তাদের সিদ্ধান্তই ঠিক ছিল। তাইওয়ানের ইউ-টিং, যিনি শুক্রবার রিং-এ নামতে চলেছেন, তিনি অবশ্য আপিলের রাস্তায় হাঁটেননি।
এই পরিস্থিতিতে আইওসি দাবি করেছে, উভয় বক্সারই যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে, কী সেই যোগ্যতার পরীক্ষা, তা স্পষ্ট করেনি অলিম্পিক কমিটি। নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়ে রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টার রিম আলসালেম গোটা ঘটনায় কারিনির সঙ্গে যা ঘটেছে, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আলসালেম লিখেছেন, 'এঞ্জেলা কারিনি সঠিক কাজ করেছেন। তিনি নিজের শারীরিক সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কিন্তু, তাঁর ও অন্যান্য মহিলা ক্রীড়াবিদদের এই লিঙ্গের ওপর ভিত্তি করে শারীরিক এবং মানসিক হিংসার বিষয়টি ফাঁস করে দেওয়া ঠিক হয়নি।'
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, 'আমি মনে করি, যে অ্যাথলিটদের পুরুষের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাঁদের মহিলাদের প্রতিযোগিতায় নামতে দেওয়া উচিত নয়। এই কারণে নয় যে আপনি কারও প্রতি বৈষম্য করতে চান। কিন্তু, মহিলা ক্রীড়াবিদদেরও সমান শর্তে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হওয়ার অধিকার রক্ষা করা দরকার।'
খেলিফ অবশ্য এই পরিস্থিতিতে আয়ারল্যান্ডের প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বক্সার অ্যামি ব্রডহার্স্টের সমর্থন পেয়েছেন। এই ম্যাচ প্রসঙ্গে ব্রডহার্স্ট টুইট করেছেন, 'অনেক লোকই আমাকে খেলিফের বিষয়ে লিখে পাঠিয়েছেন। কিন্তু, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি না তিনি প্রতারণা করেছেন। আমি মনে করি এটি তাঁর জন্মগত ব্যাপার। আর, জন্মগত ব্যাপার তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর আগে তাঁকে ৯ জন মহিলা বক্সার হারিয়েছেন বা মেরেছেন। সুতরাং, ব্যাপারটাকে একতরফা ভাবলে চলবে না।'