‘ব্রিজ ভূষণের কাণ্ড ওরা আমাকে বলেছিল’! অবশেষে মুখ খুললেন ফিজিওথেরাপিস্ট পরমজিৎ মালিক। WFI সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন বেশ কিছু জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী কুস্তিগীর। বর্তমানে তারা দিল্লির যন্তর মন্তরে ব্রিজভূষণের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এর মাঝেই ফিজিওথেরাপিস্ট পরমজিৎ মালিক ২০১৪ সালের সেই ভয়াবহ দিনের কথা স্মরণ করলেন।
তিনি বলেন, সালটা ২০১৪, লক্ষ্ণৌতে জাতীয় শিবির চলাকালীন ক্যাম্পে কমপক্ষে তিনজন জুনিয়র মহিলা কুস্তিগীর তাঁকে জানিয়েছিলেন, কীভাবে তারা "চাপের" মুখে পড়েন এবং "রাতে ব্রিজভূষণের সঙ্গে তাদের দেখা করতে বলা হয়েছিল"। পরমজিৎ বলেন, “তিনি তৎকালীন মহিলা কোচ কুলদীপ মালিকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি”।
পরমজিৎ আরও জানান যে ফেব্রুয়ারিতে, ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটির সামনে তিনি হাজির হয়ে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “আমি ২০১৪ সালে গীতা ফোগাটের (বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদকপ্রাপ্ত) ব্যক্তিগত ফিজিওথেরাপিস্ট ছিলাম। কুস্তিগীররা সেই ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছিল এবং আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে ছাড়াও সিনিয়র কুস্তিগীরদের কাছে লখনউতে জাতীয় শিবিরের সময় ব্রিজ ভূষণের যৌন হয়রানির বিষয়ে তারা বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছিলেন”। অভিযোগ করার পর তাকে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যেতে বলা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী কুস্তিগীরা সরকারের কাছে ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তকারী কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন। অনেক রাজনৈতিক দল বিক্ষোভে তাদের সমর্থন জানিয়েছে। কংগ্রেস থেকে আম আদমি পার্টি এবং সিপিএম এই বিক্ষোভে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। WFI সভাপতি ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন মহিলা কুস্তিগিররা।
কুস্তিগির বনাম রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার মধ্যে লড়াই নতুন মাত্রা পেল। ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন কুস্তিগিররা। সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে FIR দায়ের করার। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৮ এপ্রিল। এবার আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে বিক্ষোভকারীরা জানালেন ব্রিজভূষণ শরণ সিং অভিযোগকারীদের হুমকি দিচ্ছেন। অভিযোগকারী কুস্তিগিরদের দাবি, ব্রিজভূষণ তাদের খুনের হুমকি দিচ্ছেন।
কুস্তিগীররা দাবি করেছেন যে ব্রিজ ভূষণ শরণ সিং এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের যোগসাজশে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যৌন, মানসিক, মানসিক এবং শারীরিক হয়রানির শিকার করেছিলেন। সাক্ষী মালিক এবং বজরং পুনিয়া সহ অনেক প্রবীণ কুস্তিগীর এই ধরনের জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী কুস্তিগীররা ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশেরও দাবি করেছেন।
গত ২৩ জানুয়ারি ব্রিজ ভূষণের বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের অভিযোগের সারবত্তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল৷ যে কমিটির প্রধান ছিলেন বক্সিং কিংবদন্তি মেরি কম। কমিটিকে এক মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তারপর সেই কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে গেলেও তার ফলাফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
মেরি কম ছাড়াও, পর্যবেক্ষক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন অলিম্পিক পদক বিজয়ী-কুস্তিগির যোগেশ্বর দত্ত, প্রাক্তন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় এবং মিশন অলিম্পিক সেলের সদস্য তৃপ্তি মুরগুন্ডে, টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিমের প্রাক্তন সিইও রাজেশ রাজাগোপালন এবং প্রাক্তন স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক। (দল) রাধিকা শ্রীমান।
এদিকে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ভিনেশ ফোগাট, তিনি দাবি করেছেন, চাপের কারণেই দিল্লি পুলিশ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে FIR নিতে চায়নি। এখন কুস্তিগীরদের টাকার লোভ দেখানো হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে হুমকির অভিযোগও সামনে এনেছেন তিনি।