অক্সিজেন ছাড়াই 'দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ' জয় করতে ভয়াবহ তুষারঝড়ের মুখে পড়েন পিয়ালি বসাক। অদম্য জেদ আর মনের জোরকে সঙ্গী করেই বেঁচে ফিরে আসেন তিনি। এবার ফের অক্সিজেন ছাড়াই দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ জয়ের 'স্বপ্নে বিভোর' চন্দননগরের পিয়ালি বসাক। পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা পিয়ালিকে ছোট থেকে পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে টানে। আর সেই টানেই বারে বারে পাহাড়ে ফিরে ফিরে যাওয়া….! এসেছে মৃত্যুভয়, প্রতিপদেই বিপদের হাতছানি… তাও অদম্য জেদ কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারেনি পিয়ালির পাহাড় জয়ের খিদেকে।
আরও একবার অক্সিজেন ছাড়াই দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ জয়ের 'স্বপ্নে বিভোর' চন্দননগরের পিয়ালি বসাক। পিয়ালির এবারের লক্ষ্য জোড়া শৃঙ্গ জয়! তাতেই স্বপ্নে বুক বাঁধছেন গর্বের এই বঙ্গকন্যা। অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয় করেছিলেন আগেই। এবার আবারও ইতিহাস তৈরি করতে চান পিয়ালি। অন্নপূর্ণা (৮,০৯১ মিটার) এবং মাকালু (৮,৪৮১ মিটার) জোড়া শৃঙ্গ জয় করে মহিলা হিসাবে দেশ তথা রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করতে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছেন না তিনি। অভিযানের খরচ আনুমানিক ৩০ লক্ষ টাকা। কীভাবে জোগাড় করবেন এতটাকা? সেটাই এখন ভাবাচ্ছে পিয়ালিকে।
অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয় করেছিলেন। তার ১০ মাস পর আবার জোড়া শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে চন্দননগরের পিয়ালি বসাক। দু’টি শৃঙ্গেরই উচ্চতা আট হাজার মিটারের বেশি। একটি অন্নপূর্ণা (৮০৯১ মিটার) এবং অন্যটি মাকালু (৮৪৮১ মিটার)। ৯ মার্চ রওনা দেবেন পিয়ালি। পিয়ালি বলেন,'অন্নপূর্ণা খুবই বিপজ্জনক শৃঙ্গ। এখানে পর্বতারোহীদের মৃত্যুর হার সব থেকে বেশি। তবে আমি ভয় পাওয়ার মেয়ে নই। ভয় সরিয়েই স্বপ্ন জয়ই এখন লক্ষ্য বাংলার এই 'অগ্নিকন্যার'।
আগামী ৯মার্চ ফের ইতিহাস গড়ার পথে আরও এককদম বাড়াতে চলেছেন চন্দননগরের পিয়ালী বসাক! তার আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে হাড়হিম কাহিনী শোনালেন এই পর্বতারোহী। এভারেস্ট জয় করার পরও বসে থাকার পাত্রী নন তিনি। মাথার ওপর লক্ষাধিক টাকার দেনা। তাতে কি হয়েছে? পাহাড়ের 'অদম্য টান' ছেড়ে তিনি বের হতে পারা কি এতই সহজ? তাই পরবর্তী লক্ষ্য এবার অন্নপূর্ণা এবং মাকালু পিক। ব্যাঙ্ক লোন রয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। ফের মাথার ওপর আরও ৩০ লাখের বোঝা….!
তিনি 'হুগলির গর্ব'। আগামী ৯ মার্চ তিনি রওনা হচ্ছেন তাঁর আগামী লক্ষ্যে। এবার তিনি বিনা অক্সিজেন-এ ওই দুই পর্বতশৃঙ্গে উঠতে চলেছেন। জেলা প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই কথা জানালেন পর্বতারোহী পিয়ালী বসাক। নেশায় পর্বতারোহী হলেও পেশায় তিনি স্কুল শিক্ষিকা। গতবারের মতো এবারও তিনি মিডিয়ার মারফত শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে কিছু আর্থিক অনুদানের আবেদন জানান তিনি। খরচ হবে আনুমানিক ৩০ লক্ষ টাকা। সরকারি সাহায্যের ওপর তাকিয়ে নেই তিনি। তিনি বরং ক্রাউড ফাউন্ডিং-য়ের দিকেই তাকিয়ে আছেন।
পিয়ালি বলেন," আগের বার অভিযানে আমার খরচ হয়েছিল ৪০ লক্ষ টাকার বেশি। সেই সময় অজস্র সাধারণ মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এবারেও আমার ভরসা সেই ক্রাউড ফান্ডিং। তবে সরকারের কাছ থেকে কিছু সাহায্য পেলে আমার কাজে লাগবে। আমার মত আরও অনেকেই দেশ তথা রাজ্যের নাম উজ্জ্বল করতে এগিয়ে আসবে"। আগামী দিনে মেয়েরা যাতে পর্বত অভিযানে আকৃষ্ট হয় তাঁর জন্য সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলেও পিয়ালী জানিয়েছেন। এভারেস্ট জয়ের শংসাপত্র এখনও হাতে পাননি চন্দননগরের পর্বতারোহী পিয়ালি বসাক। সেই নিয়ে কিছুটা অভিমানের সুর ধরা পড়ে পিয়ালির গলায়।