একের পর এক ইতিহাস গড়ছেন। নজির গড়ায় খামতি নেই চন্দননগরের পিয়ালির। অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্টে উঠে নজির গড়েছিলেন। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসাবে সপ্তশৃঙ্গ এবং সাতটা উল্কা-শৃঙ্গও জয় করার রেকর্ড বাঙালি তনয়ার দখলে। এবার কানাইলাল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকার মুকুটে নতুন পালক।
সোমবার সকালে বিশ্বের দশম উচ্চতম শৃঙ্গ আরোহণ করলেন তিনি। সকাল ৮.২৫-এ পিয়ালির পা পড়ল মাউন্ট অন্নপূর্ণায় (৮০৯১ মিটার)। অক্সিজেন ছাড়াই পিয়ালির এই শৃঙ্গ জয় করতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার কথা ভেবে সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন নিতে হয় তাঁকে। গোটা আরোহণ পর্বে পিয়ালির সঙ্গী থাকলেন শেরপা দাওয়ানুরু।
গত ১৬ মার্চ কলকাতা ছেড়েছিলেন তিনি। তারপর সুখবর এল ঠিক একমাস পরে। তাঁর এজেন্সি পাওনিয়ার এডভেঞ্চার-এর তরফে চেয়ারম্যান পাসাং তেনজি শেরপা জানিয়েছেন, "অক্সিজেন ছাড়া উঠলেও সাপ্লিমেন্টারি অক্সিজেন ব্যবহার করতে হয়েছে ওঁকে। কারণ পর্বতারোহীদের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে প্রয়োজন।
"আরও সাতজন শেরপা সহ পর্বতারোহী ঠিকঠাক রয়েছেন। ক্যাম্প থ্রি থেকে তাঁরা নেমে এসেছেন। মঙ্গলবার বিকালে অথবা পরের দিন সকালে বেস ক্যাম্পে ওঁরা পৌঁছবে।" জানিয়েছেন এক শেরপা।
চন্দন নগরের বাসিন্দা পিয়ালি বসাক (৩১) অঙ্ক নিয়ে স্নাতক পাশ করে এখন এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ২০১৯-এ খবরে এসেছিলেন এভারেস্ট অভিযানকে কেন্দ্র করে। সেবার অল্পের জন্য এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা হয়নি তাঁর। সেবার নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়েও নিশ্চিত ছিলেন না অভিযান আদৌ হবে কী না। অভিযানের মাঝপথেই বারবার চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। ক্রাউড ফান্ডিং-এর টাকা একটু একটু করে ভরসা জুগিয়েছিল পিয়ালিকে। তারপরেও স্বপ্ন ছোঁয়া হয়নি পিয়ালির।
পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকায় এভারেস্ট শিখরের মাত্র ৪৫০ মিটার নীচ থেকে সমতলে ফিরে আসতে হয়েছিল বঙ্গ কন্যা পিয়ালিকে।
পিয়ালি সেই সময় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেছিলেন, “এভারেস্ট সামিট যখন হবে না বুঝতে পারছি, আমার অক্সিজেন সিলিন্ডারও শেষ হয়ে যাচ্ছে, কেঁদে কেঁদে সবাইকে অনুরোধ করেছি। হতাশা মুহূর্তের জন্য আসেনি, তা নয়। তবে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আবার তৈরি করতে শুরু করেছি। আগামী বার আমায় শিখরে পৌঁছতেই হবে।”
গত বছর এভারেস্ট জয়ের পরেও পিয়ালির স্বপ্ন যে এখনও থেমে নেই, সোমবারের কীর্তিতেই তা স্পষ্ট।