Advertisment

'চিমা ওকোরি! পিকে বলে কী করি?' কী করতে পারেন, দেখিয়েছিলেন পিকে

সাতের দশকে পিকে-র কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গল ছিল প্রায় অপ্রতিরোধ্য। ১৯৬৯-৭৫, এই সময়টায় ডার্বিতে আগাগোড়া অপরাজেয় ছিল লাল-হলুদ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
pk banerjee dead

পিকে, ফাইল ছবি

কলকাতা ময়দানের ক্লাব ফুটবলে কখনও ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের হয়ে খেলেননি পিকে। ইস্টার্ন রেলের জার্সি গায়েই কলকাতা লিগ খেলেছেন আগাগোড়া। তবে কোচিং জীবনে লাল-হলুদ বা সবুজ-মেরুন শিবিরকে এনে দিয়েছেন অসংখ্য ট্রফি। বাংলার ফুটবলের চিরন্তন বক্স-অফিস ইস্ট-মোহন ডার্বিতে কখনও থেকেছেন লাল-হলুদ ব্রিগেডের শিক্ষাগুরু হয়ে, কখনও আবার সবুজ-মেরুনে। আজ দুপুরে কলকাতায় প্রয়াত পিকে-র কোচিংয়ের দুই অন্যতম স্মরণীয় ডার্বিকে ফিরে দেখা এই লেখায়।

Advertisment

৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫, আইএফএ শিল্ড ফাইনাল, ইস্টবেঙ্গল (৫)-মোহনবাগান (০)

১৯৭৫-এর ৩০ সেপ্টেম্বর। কলকাতা ডার্বির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক। যা লাল-হলুদ সমর্থকদের কাছে এখনও বয়ে আনে অকুন্ঠ আনন্দ, আর সবুজ-মেরুন ভক্তদের কাছে অনন্ত হা-হুতাশ।

সাতের দশকে পিকে-র কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গল ছিল প্রায় অপ্রতিরোধ্য। ১৯৬৯-৭৫, এই সময়টায় ডার্বিতে আগাগোড়া অপরাজেয় ছিল লাল-হলুদ। ১৯৭৫ –এর শিল্ড ফাইনালে উপর্যুপরি চারবার শিল্ড জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মোহনবাগানের মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদের কোচ তখন পিকে।

east bengal vs mohun bagan 1975 derby ছবি: টুইটার থেকে

ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটা শুরুই করেছিল তেড়েফুঁড়ে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই দুরন্ত গোল করে সবুজ-মেরুন শিবিরকে নাড়িয়ে দেন লাল-হলুদের রাইট উইঙ্গার সুরজিত সেনগুপ্ত। সেই শুরু। এরপর আর থামানো যায়নি ইস্টবেঙ্গলকে। সুভাষ ভৌমিকের ক্রস থেকে ২৪ মিনিটে লাল-হলুদ শিবিরকে ২-০ এগিয়ে দেন শ্যাম থাপা। মোহন বাগানের গোলকিপার ভাস্কর গাঙ্গুলি উইংয়ে উড়ে আসা ক্রস মিস করায় ফাঁকায় বল পেয়ে যান শ্যাম। ম্যাচের সেরা গোল আসে ৩৮ মিনিটে। সুরজিত-সুভাষ-শ্যামের মধ্যে নিঁখুত এবং ক্ষিপ্র পাসের আদানপ্রদানে গোলমুখ খুলে যায় বাগানের। ইস্টবেঙ্গলের স্ট্রাইকার রঞ্জিত মুখার্জি প্রতিপক্ষ স্টপার নিমাই গোস্বামীকে চকিত ডজে ছিটকে দিয়ে গোলার মত শট নেন। যা জড়িয়ে যায় বাগানের জালে। ৩-০, প্রথমার্ধেই।

দ্বিতীয়ার্ধেও থামানো যায়নি ইস্টবেঙ্গলকে। বাগানের গোলে ভাস্কর গাঙ্গুলি দৃশ্যতই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন লাল-হলুদের আক্রমণের তোড়ে। ৫১ মিনিটে সুরজিতের শট ভাস্করের হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে যায়। অনায়াসে ৪-০ করে যান পেনাল্টি বক্সে ওত পেতে থাকা শ্যাম থাপা। ভাস্করকে এরপর তুলে নেন বাগান কোচ। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। ৮৪ মিনিটে বাগানের কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিয়ে যায় শুভঙ্কর সান্যালের শট। ৫-০ জিতে ইতিহাস তৈরি করে মাঠ ছাড়েন পিকে-র ছাত্ররা।

১৩ জুলাই, ১৯৯৭, ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনাল, ইস্টবেঙ্গল (৪)- মোহনবাগান (১)

সল্টলেক স্টেডিয়াম এমন ভিড় আগে দেখেনি। গ্যালারি টইটম্বুর, মাঠে কমপক্ষে ১ লক্ষ ২৫ হাজার দর্শক। যাঁরা মাঠ ভরিয়েছিলেন ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে যতটা ডার্বির আঁচ পোহাতে, ততটাই কলকাতা ময়দানের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কোচের ট্যাক্টিকাল টক্কর দেখতে। মোহবাগানের অমল দত্ত বনাম ইস্টবেঙ্গলের পিকে। বাগানের হয়ে মাঠে সেদিন চিমা ওকোরি, লাল-হলুদের জার্সিতে বাইচুং ভুটিয়া।

১৯৯৭-তে ফুটবল মরশুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছিল মোহনবাগান। কোচ অমল দত্ত সে বছর অভিনব ‘ 'ডায়মন্ড সিস্টেমে’ খেলাচ্ছিলেন টিমকে। বিপক্ষ অর্ধে বল গেলেই সবুজ-মেরুন অ্যাটাকাররা 'ডায়মন্ড ফরমেশনে' একযোগে ঝাঁপাচ্ছিলেন। ফালাফালা হয়ে যাচ্ছিল প্রতিপক্ষ। এই আবহেই ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে অমল দত্তের টিমের মুখোমুখি হয় পিকে-র ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের আগের দিন বাইচুং কে 'চুং চুং' বলে তাচ্ছিল্য করেছিলেন অমল দত্ত। আর ম্যাচ শুরুর আগে বাগান সমর্থকরা তারস্বরে চেঁচাচ্ছিলেন, 'চিমা ওকোরি! পিকে বলে কী করি!'

কী করতে পারেন, পিকে সেদিন দেখিয়েছিলেন। বিখ্যাত 'ভোকাল টনিক'-এ তাতিয়ে দিয়েছিলেন বাইচুংকে। পাশাপাশি ম্যান-টু-ম্যান মার্কিংয়ে ভোঁতা করে দিয়েছিলেন সবুজ-মেরুনের ডায়মন্ড সিস্টেম। প্রথমার্ধেই নাজিমুল হক আর বাইচুংয়ের গোলে ২-০ এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ব্যাবধান কমিয়ে ২-১ করেন চিমা। কিন্তু দিনটা ছিল পিকে-র, দিনটা ছিল বাইচুংয়ের। দ্বিতীয়ার্ধে বাইচুং আরও দুটো গোল করে সবুজ-মেরুন গ্যালারিকে স্তব্ধ করে দেন। বাইচুংয়ের হ্যাটট্রিক এবং পিকের স্ট্র্যাটেজির সৌজন্যে ইস্টবেঙ্গল জেতে ৪-১।

Calcutta Football League Kolkata Football
Advertisment