রুশ আগ্রাসনে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। প্রিয় দেশ ছেড়ে পলাতক কোটি কোটি মানুষ। স্বপ্নের শহর, দেশ এখন কার্যত মৃত্যুপুরী। ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুর নিঃশ্বাস ফেলছে কঠিন এই সময়। এসব দেখে শুনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে কলকাতায় কোচিং করাতে আসা রাশিয়ান কোচ আন্দ্রে চেরনিশভ জানিয়ে দিচ্ছেন, "ইউক্রেন দারুণ একটা দেশ। আমার অনেক বন্ধুবান্ধব, চেনা পরিচিতরা রয়েছেন ওখানে। শীঘ্রই এই পরিস্থিতি শেষ হোক।"
মহামেডানের কোচ হিসেবে কলকাতায় পা রেখেই ইতিহাস গড়েছিলেন কয়েক দশক পরে সাদা-কালো জার্সিধারীদের হাতে কলকাতা লিগের ট্রফি তুলে দিয়ে। তার আগে অল্পের জন্য ডুরান্ড কাপ হাতছাড়া হয়েছিল।
সামনেই আইলিগের চ্যালেঞ্জ। বায়ো বাবলে ঢুকে গিয়েছেন কয়েকদিন আগেই। তবে চেরনিশভ কলকাতায় বসে শিউরে উঠছেন নিজের দেশ রাশিয়া, নিজের ইউরোপে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলে দিচ্ছেন, "বহুদিন ইউক্রেনে যাওয়া হয়নি। তবে অনেক পরিচিতরা রয়েছেন ওদেশে। তবে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আপাতত সুস্থই রয়েছে ওঁরা। প্রার্থনা করছি শীঘ্রই যেন এমন অবস্থার অবসান ঘটে।"
আরও পড়ুন: পোল্যান্ড বর্ডার পেরোতে পারব কিনা জানি না! আতঙ্কের ভিডিওয় EXCLUSIVE ইউক্রেন ফিজিও
বিশ্বের কাছে কলঙ্কিত হয়েছে রাশিয়ার ভাবমূর্তি। মার্কিন, ব্রিটিশ, জার্মান নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছে রুশদের। অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের হাতছানি আম রাশিয়ানদের মনে। পুতিনের আগ্রাসী মনোভাব বিশ্বে নিন্দিত। এমন অবস্থায় ডায়নামো মস্কো, স্পাটার্ক মস্কোর মত বিখ্যাত দলের প্রাক্তন তারকা শহর কলকাতায় বসে জানাচ্ছেন, "আগেও জানিয়েছি, খেলাধুলার সঙ্গে রাজনীতিকে মেশানো উচিত নয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত খেলার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে রাজনীতি। রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশকেই অন্য দেশে খেলতে হবে এখন।"
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গনগনে হলকা ছড়িয়ে গিয়েছে ক্রীড়া ময়দানেও। ইউক্রেন, রাশিয়ায় যাবতীয় ফুটবল কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে সরে গিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল। রাশিয়া গ্রা পি-ও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আক্ষেপে শহরে বসে স্রেফ চেরনিশভ বলে যাচ্ছেন, "রাশিয়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল হারিয়ে ফেলল। এটা মোটেই ভাল খবর নয়। এই মুহূর্তে যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। বাকি দেশের প্লেয়াররা এখন রাশিয়া, ইউক্রেন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এটা দুই দেশকেই আরও দুর্বল করে দেবে। আমি অবশ্য বিদেশে থাকলে সবসময়েই পরিবার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে চিন্তিত থাকি, তা যে পরিস্থিতিই হোক না কেন।"
আরও পড়ুন: বাস্তেনের আগেই ০ ডিগ্রিতে গোল ছিল সুরজিতের! আক্ষেপ-হতাশায় বিষণ্ণ সাব্বির
কোভিডের ক্ষত এখনও পুরোপুরি সারিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ব। তা কাটিয়ে ওঠার আগেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাতছানি, পূর্ব ইউরোপে। কঠিন সময় অবশ্য দ্রুত কেটে যাবে, এই বিষয়ে আশাবাদী চেরনিশভ, "এখন আমাদের বাবলে কাটাতে হচ্ছে। এটা ফুটবলারদের জন্য আরও ক্লান্তিকর। তবে ওঁরাও পেশাদার, জানে কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত। তবে আগামী মরশুমে ফুটবল পুরোনো ছন্দে ফিরবে, আমার ধারণা।"
রাশিয়ার জ্বলজ্বলে ফুটবলের আলোকবৃত্ত ছেড়ে কেন ভারতে, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন রুশ কোচ। জানাচ্ছেন, "চুক্তিতে সই করার আগে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। যেভাবে ওঁরা প্রোজেক্টটা নিয়ে এগোতে চেয়েছিল, সেই এপ্রোচটা পছন্দ হয়েছিল। ওঁদের পেশাদারিত্বেও মুগ্ধ হই। তারপরেই এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিই।"
আরও পড়ুন: কৃশানুর সেই ছেঁড়া কার্টিলেজ এখনও রেখেছেন সঙ্গে, প্রেমদিবসে নস্ট্যালজিক স্ত্রী পনি
"ভারতে এসো সহজেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম। তাছাড়া এখানে আসার আগে ভারতের অনেক ফুটবল ম্যাচ দেখে প্রস্তুতি নিই। এখানকার ফুটবলের প্রত্যাশা কী, তা আগেভাগে জেনেই এখানে পা রাখি।"
আর গত বছর কলকাতা লিগের মহা-সাফল্যের বিষয়েও খুল্লামখুল্লা তিনি নিজের দর্শন নিয়ে, "জয়ে পৌঁছনোর রাস্তা বরাবর কঠিন ছিল। স্কোয়াডে একাধিক নতুন মুখ ছিল। তাছাড়া সেভাবে আমরা প্রস্তুতির জন্য সময়ও পাইনি। ক্যালেন্ডারও ঠাসা ক্রীড়াসূচিতে ভর্তি ছিল। কলকাতা লিগে নামার আগে ডুরান্ডে খেলতে হয়েছিল। তবে কোন দল খেলছে, কারা খেলেনি, তা না ভেবে মাঠে নামি। আমরাই শক্তিশালী ছিলাম। তাই আমরাই জিতি।"