রবিবার থেকে কাতারে শুরু হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত ফিফা বিশ্বকাপ। লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের জন্য এবারই শেষ সুযোগ। সবথেকে বড় মঞ্চে ফিরেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ব্রাজিল এবারও জিতলে, তারা ষষ্ঠবারের জন্য বিশ্বকাপ জয়ীর শিরোপা পাবে। যা পেলের দেশের রেকর্ডকে বাকিদের কাছে আরও ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাবে।
কাতারের কড়া শাসন
এ-সব ছাড়িয়ে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর আরও একটা কারণে মনে রাখার মত। সেটা তার আয়োজক দেশের জন্য। কাতার, মুসলিম বিশ্বের যে দেশে ফুটবল শুধুই একটা খেলা। তাকে উন্মাদনার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া কতটা সহ্য করে সেদেশের শাসন, সেটাও একটা ফুটবল বিশ্বের কাছে পরখের ব্যাপার।
ফুটবল জ্বর
তার মধ্যেই খেলা চলবে। যেন সেই আপ্তবাক্য- দ্য শো মাস্ট গো অন। ৩২ দল, ৬৪ ম্যাচ, ২৯ দিন। গো-ও-ল শব্দটা খেলা দেখতে গিয়ে আচমকাই মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে অনেকের। কেউ বা হতাশায় মুখ ঢেকে ফেলবেন হাত দিয়ে। সোজা কথায় ফুটবল জ্বরে কাঁপবে গোটা বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে অধিকাংশই কাতারকে মনে করে, সেখানকার আইনের শাসন তাদের মত কড়া নয়।
ফুটবল ভক্তদের উচ্ছ্বাস
তাতেও যেটুকু, ফুটবল ভক্তদের উচ্ছ্বাস বেশ ধাক্কা খাবে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কিন্তু, গোটা বিশ্বে ফুটবলকে সমানভাবে ছড়ানোর ব্যাপারে ফিফাকেও পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। এগোতে গেলে পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই যেতে হবে। কাতার নিয়ে বাজি ধরা ছাড়া ফিফার কাছে তাই পথ ছিল না।
ঘরোয়া লিগ শিকেয়
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সময় ঘরোয়া লিগ চলছিল। সেসব এখন বিশ্বকাপ জ্বরে শিকেয়। সবারই চোখ রবিবারে। উদ্বোধনী ম্যাচেই খেলবে আয়োজক দেশ কাতার। প্রতিপক্ষ ইকুয়েডর। কাতারের মত এত ছোট দেশকে আগে কখনও বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব ফিফা দেয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এত ফুটবল ভক্ত কাতারে এখন আসছেন, তাঁদের সকলের জায়গা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে আয়োজক দেশের প্রশাসনকে। অনেকেরই জায়গা হয়েছে ভাসমান হোটেলে।
সেরা দল
ব্রাজিল- ফিফার তালিকায় এক নম্বরে আছে। নেইমার, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, সেলেকাওরা তাঁদের সেরা ফর্মে এখানে খেলতে এসেছেন। ২০০২ এর পর ফের কি তারা কাপ জিতবে? ব্রাজিলের প্রথম ম্যাচ ২৪ নভেম্বর, প্রতিপক্ষ সার্বিয়া।
বেলজিয়াম- ফিফার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে। এর 'গোল্ডেন জেনারেশন' ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু, এখনও কেভিন ডি ব্রুইন বেলজিয়ামের দায়িত্বে। তবে রোমেলু লুকাকুর ফিটনেস নিয়ে সংশয় আছে।
আর্জেন্টিনা- ফিফার তালিকায় তৃতীয়। দিয়েগো মারাদোনার সময় থেকেই দীর্ঘদিন বিশ্বকাপের শিরোপা জেতেনি দল। ২০২০ সালের নভেম্বরে মারাদোনার মৃত্যুর পর এটিই প্রথম বিশ্বকাপ। তবে, এবারের আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনির তত্ত্বাবধানে উন্নতি করেছে। মেসি এখনও দলের প্রাণভোমরা। তার কারণ, তাঁর নেতৃত্বে দল এখনও পর্যন্ত ৩৫টি ম্যাচে অপরাজিত। আর্জেন্টিনাও এবারের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার।
ফ্রান্স- ফিফার তালিকায় চতুর্থ। গতবারের চ্যাম্পিয়ন। যথেষ্ট শক্তিশালী দল। যদিও পল পোগবা, এন’গোলো কান্তেদের ইনজুরি আছে। আক্রমণের নেতৃত্ব থাকবেন এমবাপ্পে ও করিম বেনজেমা। ১৯৬২ সালে ব্রাজিলের পর আর কোনও দেশ তাদের খেতাব ধরে রাখতে পারেনি।
ইংল্যান্ড- ফিফার তালিকায় পঞ্চম। দলটি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ছয় ম্যাচের একটাতেও জয় পায়নি। আশার কথা একটাই, সাম্প্রতিক বড় টুর্নামেন্টগুলোয় ট্র্যাক রেকর্ড ভালো। ইংল্যান্ড ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালিস্ট। ২০২১ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালিস্ট ছিল।
আরও পড়ুন- বিদেশির পায়ে চাপড় মেরেই চুমু! ভারতীয়র কীর্তিতে চরম অসম্মানিত গোটা কেরালা, দেখুন মারাত্মক ভিডিও
নামী তারকা
লিওনেল মেসি। দল আর্জেন্টিনা। সাতবারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়। বয়সটা ৩৫ হয়ে গিয়েছে। এবারই হয়তো শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ জিতলে, ফুটবল দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর আসনটা আরও দৃঢ় হবে। প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের হয়ে এই মুহূর্তে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। দল পর্তুগাল। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন। পুরুষদের আন্তর্জাতিক ফুটবলে শীর্ষস্থানীয় স্কোরার। কিন্তু, কোনওদিন বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেননি। এখন বয়স ৩৭। এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরও প্রথম পছন্দ নয়। তাই এবারের বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
কিলিয়ান এমবাপে। দল ফ্রান্স। গত বিশ্বকাপের তারকা। সেই সময় বয়স ছিল ১৯ বছর। ক্রমশই উন্নতি করছেন। দ্রুতগতির এই স্ট্রাইকারের দল এবারের বিশ্বকাপেও জিতলে, সেটা হবে ইতিহাস। আর, প্রথম দুই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জেরে এমবাপে ফুটবল সম্রাট ব্রাজিলের পেলের সঙ্গে তুলনায় চলে আসবেন।
কেভিন ডি ব্রুইন। দল বেলজিয়াম। বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোচিত। তাঁর ড্রাইভিং রান এবং ক্রসিং ফুটবল দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে ফুটবল বিশ্ব। বেলজিয়াম কৃতজ্ঞ, যে কেভিন ইনজুরি ছাড়াই কাতারে এসেছে।
নেইমার। দল ব্রাজিল। প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে এমবাপ্পে আর মেসির ছায়ায় ঢাকা পড়ে যান। তবে, এখনও বর্তমান ব্রাজিল দলের সেরা খেলোয়াড়। তার কৌশল, ফ্লিকের মত বেশ কিছু মুভ দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে ফুটবল দুনিয়া।
যেভাবে টুর্নামেন্ট চলবে
চারটি করে দল নিয়ে আটটি গ্রুপ। যার মধ্যে শীর্ষ দুটি দল ১৬ টিমের নকআউট পর্বে পৌঁছবে। প্রতিদিন চারটি খেলা হবে। সবই গ্রুপের খেলা। চারটি দল পরস্পরের সঙ্গে খেলবে। গ্রুপের খেলা শেষে শুরু হবে নকআউট পর্যায়। বিশ্বকাপের ১৭তম দিন ৭ ডিসেম্বর থেকে তা শুরু হবে।
গ্রুপের যে ম্যাচগুলো অবশ্যই দেখবেন
প্রথম ম্যাচে ২০ নভেম্বর আল কোহরের আল বায়েত স্টেডিয়ামে কাতার-ইকুয়েডর মুখোমুখি হবে। আর্জেন্টিনা বনাম মেক্সিকো ম্যাচ ২৬ নভেম্বর। স্পেন বনাম জার্মানি ২৭ নভেম্বর। ইরান বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৯ নভেম্বর। ঘানা বনাম উরুগুয়ে ২ ডিসেম্বর।
Read full story in English