যেদিন ফুটবলের রাজপুত্রের হাতে বিশ্বকাপ উঠেছিল, সেই ১৯৮৬ সাল থেকে আর্জেন্টিনার ভক্ত। নীল-সাদা জার্সি যেন জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। পেশায় চা-বিক্রেতা হলেও তাঁর ধ্যান-জ্ঞান সবই 'ভামোস আর্জেন্টিনা'। আর এবার কাতার বিশ্বকাপ শুরুরই দিনই অবাক কাণ্ড করে সবার চোধ ধাঁধিয়ে দিয়েছেন ইছাপুর নবাবগঞ্জের শিবশঙ্কর পাত্র। লিওনেল মেসির আস্ত মূর্তি বানিয়ে ফেলেছেন। গোটা এলাকা সাজিয়ে দিয়েছেন নীল-সাদা পতাকা-ফেস্টুনে। কিন্তু মেসির মূর্তি গড়ে নিজের ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখিয়েছেন শিবশঙ্কর।
ইচ্ছা ছিল, কাতারে গিয়ে এবার বিশ্বকাপ দেখবেন। সেই মতো কয়েক বছর ধরে টাকা জমাচ্ছিলেন। চা-বিক্রি করার পাশাপাশি সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত পাড়ার শিবেদা। তাতেও তাঁর খরচ হয়। তৈরি করেছেন আর্জেন্টিনা ফ্যানস ক্লাব। এবার বিশ্বকাপে স্বচক্ষে মেসিকে খেলতে দেখতে চেয়েছিলেন শিবশঙ্কর। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। তাই বলে কি ঈশ্বর ভক্তর পুজো পাবে না, তা হয় নাকি? বিশ্বকাপে না যেতে পারার জন্য আক্ষেপ থেকে বড় উদ্যোগ নিয়ে নেন তিনি। মেসির ফাইবারের মূর্তি বানিয়েছেন তিনি। ৫০ হাজার টাকা খরচে দত্তপুকুরের এক শিল্পীকে দিয়ে এই ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির মূর্তি বানিয়েছেন শিবশঙ্কর পাত্র।
রবিবার বিরাট ঘটা করে মেসির মূর্তি উন্মোচন করেন শিবেদা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন গোলকিপার সংগ্রাম মুখোপাধ্যায় এবং গায়ক রাতুল পর্বত-সহ আরও অন্যান্যরা। মূর্তি উন্মোচন ঘিরে এলাকায় ছিল খুশির মেজাজ। ইতিমধ্যেই বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে বাংলা। তার উপর মেসির মূর্তি বাড়তি উন্মাদনা জুগিয়েছে আর্জেন্টিনা ভক্তদের। গোটা এলাকা নীল-সাদা পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়। প্রত্যেকের পরনে ছিল নীল-সাদা জার্সি। শিবশঙ্করের গায়ে ছিল মেসির ১০ নম্বর জার্সি।
শিবেদা বলেছেন, "অনেক ইচ্ছা ছিল এবার কাতারে গিয়ে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখব। সম্ভবত এটাই মেসির শেষ বিশ্বকাপ। তাই এবার তাঁকে স্বচক্ষে দেখার আশায় ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাওয়া হচ্ছে না। চা বিক্রির টাকায় শুধু ম্যাচ দেখা নয়, আসা-যাওয়া, খাওয়া-থাকার খরচ কুলোবে না। তাই তখন ঠিক করি, জমানো টাকায় মেসির মূর্তি বানাব। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। মনে করতে পারেন, ফুটবল ঈশ্বরকে তাঁর ভক্তের অর্ঘ্য।"
আরও পড়ুন আর্জেন্টিনার প্ৰথম ম্যাচে মাঠে নামবেন কি মেসি! ভয়ানক আপডেটে শিউরে উঠছে বিশ্বকাপ
এদিন আর্জেন্টিনা ফ্যানস ক্লাবের তরফে এলাকাবাসীর মধ্যে মিষ্টি-ফল বিতরণ করা হয়। দুস্থদের কম্বল দেওয়া হয়। পুরো উদ্যোগটাই নেয় শিবশঙ্কর পাত্রের তৈরি আর্জেন্টিনা ফ্যানস ক্লাব।