রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মোট রান করার কৃতিত্ব যাঁর, সবরকম ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন সেই ওয়াসিম জাফর। ১৯৯৬-৯৭ এর মরশুমে মুম্বইয়ের হয়ে কেরিয়ার শুরু করেন বর্তমানে ৪২ বছর বয়সী ওয়াসিম, যদিও তাঁকে 'এজলেস ওয়ান্ডার' বলে থাকেন অনেকেই। মুম্বই ছেড়ে ২০১৫-১৬ মরশুমে বিদর্ভে চলে যান ওয়াসিম। গত বছরের রঞ্জি ট্রফিতেও তাঁর সংগ্রহ ১,০৩৭ রান।
Advertisment
সব মিলিয়ে ২৬০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন ওয়াসিম, মোট রান সংখ্যা ১৯,৪১০, কেরিয়ারের ব্যাটিং গড় ৫০.৬৭। ঝুলিতে রয়েছে ৫৭টি সেঞ্চুরি এবং ৯১টি হাফ-সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ স্কোর ৩১৪। রঞ্জি ট্রফিতে কেরালার বিরুদ্ধে ফেব্রুয়ারি মাসে নিজের কেরিয়ারের শেষ ইনিংসেও ৫৭ রান করেন ওয়াসিম।
ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতের জাতীয় দলের হয়ে ২০০০ থেকে ২০০৮-এর মধ্যে ৩১টি টেস্ট খেলেন ওয়াসিম, রান করেন ১,৯৪৪। এই রানের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি সেঞ্চুরি এবং ১১টি হাফ-সেঞ্চুরি। আন্তর্জাতিক স্তরে ডবল সেঞ্চুরিও আছে ওয়াসিমের, ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২১২। ভারতের হয়ে দুটি ওডিআই-ও খেলেছেন তিনি।
Advertisment
ওয়াসিম জাফরের বিদায়ী বিবৃতির সংক্ষিপ্তসার
প্রথমত, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সর্বশক্তিমান আল্লাহকে, যিনি আমাকে এই অসাধারণ খেলাটা খেলার প্রতিভা দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানাই আমার পরিবারকেও - আমার বাবা-মা, ভাইদের, যাঁরা আমায় সাহস যোগান ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার, এবং আমার স্ত্রীকে, যিনি ইংল্যান্ডে আরামের জীবন ছেড়ে এখানে চলে আসেন, আমার এবং আমাদের সন্তানদের জন্য একটি সুন্দর সংসার তৈরি করতে।
বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই আমার সমস্ত কোচকে, সেই স্কুলজীবন থেকে শুরু করে পেশাদার ক্রিকেট পর্যন্ত, যাঁদের সাহায্যে পরিণত হয়েছে আমার দক্ষতা। অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই সেইসব নির্বাচকদের, যাঁরা আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। একইসঙ্গে ধন্যবাদ সেইসব আধিনায়কদের, যাঁদের অধীনে খেলেছি, এবং আমার সতীর্থদের, যাঁদের থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি, এবং যাঁদের সঙ্গে জীবনভর কিছু স্মৃতি ভাগ করে নেব।
বিসিসিআই, মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, এবং বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ, তাদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়ার জন্য... আমার স্কুল, অঞ্জুমান-এ-ইসলাম, যেখান থেকে আমার পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার যাত্রা শুরু। সুধীর নায়েক স্যার, আমাকে ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
কেরিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলির একটি নিঃসন্দেহে আমার ভারতের টেস্ট ক্যাপ অর্জন করা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২০২, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২১২, এবং ২০০৬-০৭ এ ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়।
রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি, অনিল কুম্বলে, ভিভিএস লক্ষণ, বীরেন্দ্র সেহওয়াগ, এবং এমএস ধোনির সমকক্ষ হিসেবে এক ড্রেসিং রুমে বসতে পেরে আমি গর্বিত।
শচীন সম্পর্কে আর কী বলব? শুরু করলে থামতে পারব না। ও আমার 'রোল মডেল' ছিল। এত কাছ থেকে ওর খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছি, সেটা আশীর্বাদ। আমার মতে ওর যুগে ও শ্রেষ্ঠ ছিল, ব্রায়ান লারাকে বাদ দিলে।
Probably one of the best world cup knock by sachin, considering the opponent and importance of the game. The build up, the tension leading up to the match was incredible. But @sachin_rt delivered! As they say cometh the hour, cometh the man! Was it his best WC knock? #OnThisDaypic.twitter.com/8GuPBatDth
কেরিয়ারে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছি মুম্বই দলের সঙ্গে, এবং সেখানেই শিখেছি 'খড়ুস' ক্রিকেট, যা একান্তই মুম্বই ঘরানা। আমার প্রথম ক্যাপ্টেন ছিল সঞ্জয় মঞ্জরেকর। এছাড়াও শচীন তেন্ডুলকর, বিনোদ কাম্বলি, জাহির খান, অমল মুজুমদার, নীলেশ কুলকার্নির মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিং রুম ভাগ করে নিতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
২০০৮ সালে আমি অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে আশা করি উত্তরাধিকার হিসেবে কিছুটা শেখাতে পেরেছি রোহিত শর্মা, অজিঙ্ক্য রাহানে, সূর্যকুমার যাদব, আদিত্য তারে, এবং অন্যদের।
পরিশেষে বলব, ২০১৭-১৮ মরশুমে যখন কোনও টিম আমার প্রতি কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছিল না একজন পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে, তখন এগিয়ে আসেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। ওঁর জন্যই আমি ফের একবার রঞ্জি খেলার সুযোগ পাই, বিদর্ভের হয়ে, এবং দুবার রঞ্জি ট্রফি এবং ইরানি কাপ জিতে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকি।
আমার বাবা চেয়েছিলেন, তাঁর অন্তত এক ছেলে ভারতের হয়ে খেলুক, সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি গর্বিত।