রঞ্জি ট্রফি ফাইনাল (তৃতীয় দিন), বাংলা বনাম সৌরাষ্ট্র, রাজকোট
সৌরাষ্ট্র প্রথম ইনিংস: ৪২৫ অল আউট; বাংলা প্রথম ইনিংস: ১৩৪-৩
ব্যাটিং: সুদীপ চ্যাটার্জি (৪৭), ঋদ্ধিমান সাহা (৪)
সৌরাষ্ট্র বোলিং: ধর্মেন্দ্রসিং জাদেজা ১-২০, প্রেরক মানকড় ১-৮, চিরাগ জানি ১-১১
দিনের শেষে লড়াইয়ে রইল বাংলা। কিন্তু নাও থাকতে পারত। স্কোর যখন ৩৫-২, বলের গতবিধি ঘোরতর অনিশ্চিত, ক্রমশ বাড়ছে সৌরাষ্ট্রের চাপ, তখন গুটিয়ে যেতেই পারত বাংলা, কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে ১৭৪ মিনিট ধরে যে লড়াইটা করে গেলেন মনোজ তিওয়ারি এবং সুদীপ চ্যাটার্জি, তারই দৌলতে ক্ষীণ হলেও এখনও আশার আলো দেখছেন অভিমন্যু ঈশ্বরন অ্যান্ড কোং। দিনের শেষ সেশনে ড্রিঙ্কস ব্রেক-এর মুখেই আউট হন মনোজ, কিন্তু প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনে এই সেশনেই সৌরাষ্ট্র খোয়ায় তিনটি করে উইকেট, অতএব সেই নিরিখে এগিয়ে বাংলা।
আপাতত ঋদ্ধিমান সাহার কাছে সুবর্ণ সুযোগ এটা প্রমাণ করার, যে তিনি অনবদ্য কিপিং ছাড়াও আরও কিছু করতে সক্ষম। খারাপ ফর্মের কারণে দল থেকে বাদ পড়া সুদীপও যত্ন সহকারেই লিখছেন কামব্যাকের চিত্রনাট্য। মোটমাট, যথেষ্ট ঘটনাবহুল হতে চলেছে ফাইনালের চতুর্থ দিন। প্রথম দু-দিন ছিল মোটের উপর শান্ত, কিন্তু আজ তৃতীয় দিন সম্পর্কে সেকথা বলা যাবে না। শেষ ৩০ মিনিট সম্পর্কে তো একেবারেই বলা যাবে না। হতে পারে শেষ নয় ওভারে ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র এক রান, কিন্তু ওই ৩০ মিনিটের প্রতিটি বল ছিল এক একটি পর্ব। এখনও সৌরাষ্ট্রের প্রথম ইনিংসের স্কোরের চেয়ে ২৯১ রানে পিছিয়ে বাংলা, হাতে সাত উইকেট।
অভিমন্যু ঈশ্বরনের বিতর্কিত বিদায়
আজ ম্যাচের আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে DRS-এ অভিমন্যুর আউট হওয়া। আপাতদৃষ্টিতে লেগ সাইডের বাইরের বলে এলবিডব্লু ঘোষিত হন অভিমন্যু, যার ফলে উত্তেজনা ছড়ায় নেট দুনিয়ায়। লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারে প্রেরক মানকড়ের বলে আউট ঘোষিত হওয়ার পর রিভিউ চান অভিমন্যু। কিন্তু যেহেতু ঘরোয়া ক্রিকেটে DRS-এর ব্যবহার সীমিত, রিপ্লে-তে দেখা যায় যে লেগ স্টাম্পের সামনেই ছিল অভিমন্যুর পা, যদিও বল লাগে হাঁটুর ওপরে। মোট ৪৬ বল খেলে ৯ রান করে যখন মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক অভিমন্যু, বাংলা তখনও ৩৯০ রানে পিছিয়ে। তার আগেই আউট হয়েছেন তাঁর সহ-ওপেনার ঘরামি (২৬)।
রঞ্জি সেমিফাইনাল থেকে বিসিসিআই-এর নির্দেশে চালু হওয়া "সীমিত" DRS ব্যবহারের সমস্যা হলো, বল ট্র্যাকিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নেই, সুতরাং বল স্টাম্পে লাগছে কিনা, প্রশ্ন যদি শুধুমাত্র সেটা হয়, তবে থার্ড আম্পায়ারের কোনও উপায় নেই মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া। বুধবার বিসিসিআই-এর এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেন ভারতের প্রাক্তন স্পিনার দিলীপ দোশি। তাঁর মতে, হয় প্রযুক্তির সম্পূর্ণ ব্যবহার হোক, নয়তো "একেবারেই নয়"।
So many terrible things in this #RanjiTrophyfinal but the one that tops is the DRS without ball tracking. Abhimanyu Easwaran was just given out to a ball that was definitely going down leg. Pathetic! @BCCI @BCCIdomestic #SAUvBEN @StarSportsIndia @HotstarVIP
— PK (@iPkoppula) March 11, 2020
এবার পিচের খেলা শুরু
গতকাল প্রথম সেশনে দ্রুত দু-তিনটে উইকেট তুলে তিনশোর মধ্যে সৌরাষ্ট্রের প্রথম ইনিংসকে বেঁধে ফেলার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছিল বাংলা। নতুন বল নিয়ে তেড়েফুঁড়ে শুরুও করেছিলেন ঈশান-মুকেশ-আকাশদীপরা। লক্ষ্যপূরণ তবু হলো না। সেমিফাইনালে গুজরাটের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিলেন অর্পিত ভাসাভাড়া। ফাইনালেও বাংলার বাধা হয়ে দাঁড়ালেন ধৈর্যশীল অর্পিত (১০৬), সেঞ্চুরি করে গেলেন দায়িত্বের প্রতিমূর্তি হয়ে। সঙ্গে প্রায় আগাগোড়া থাকলেন ডিহাইড্রেশন কাটিয়ে মাঠে ফেরা চেতেশ্বর পূজারা।
ICYMI: Bengal pacer Akash Deep's 4⃣-wicket haul in the @paytm #RanjiTrophy #Final against Saurashtra. ????????
Video ???? https://t.co/DiDSA914E7#SAUvBEN pic.twitter.com/DYMKSDJOEa
— BCCI Domestic (@BCCIdomestic) March 11, 2020
আজ ৩৮৪-৮ থেকে রাজকোটে দিন শুরু করেন চিরাগ জানি ও ধর্মেন্দ্রসিং জাদেজা। চিরাগকে শিগগিরই বিদায় করে দিলেও জাদেজা এবং জয়দেব উনাদকাটের ৩৮ রানের জোট নিশ্চিতভাবেই পরে ভোগাবে বাংলাকে। ৪২৫ রানে ইনিংস শেষ করে সৌরাষ্ট্র, সৌজন্যে আকাশ দীপের চার উইকেট, যার পর অভিমন্যু এবং সুদীপ ঘরামির প্রত্যয়ী ওপেনিং জুটি ভেঙে যায় লাঞ্চের আগে। মনোজ এবং সুদীপ চ্যাটার্জির ৮৯ রানের পার্টনারশিপ অবশ্য কিছুটা হলেও সমতা ফেরায়, এবং গোটা দ্বিতীয় সেশন ও তার পরেও কিছুটা সময় আর উইকেট খোয়ায় নি বাংলা।
কিন্তু দিনের শেষে মনোজ আউট, বাংলার স্কোর ১৩৪-৩, এবং এখনই হাল ছাড়ার কারণ না থাকলেও ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে পিচের ভূমিকা। চওড়া হচ্ছে ফাটল, রান তোলা হয়ে পড়ছে কঠিন। বোলারদের স্বর্গ বলা যাচ্ছে না এখনই, কিন্তু বলের হাবভাব প্রায়শই গোলমেলে ঠেকছে।
সৌরাষ্ট্র: হারভিক দেশাই, অভি বারোট, বিশ্বরাজ জাদেজা, অর্পিত ভাসাভাড়া, শেলডন জ্যাকসন, চেতেশ্বর পূজারা, চেতন সাকারিয়া, প্রেরক মানকড়, ধর্মেন্দ্রসিং জাদেজা, জয়দেব উনাদকাট (অধি), চিরাগ জানি
বাংলা: অভিমন্যু ঈশ্বরন (অধি), সুদীপ ঘরামি, সুদীপ চ্যাটার্জি, মনোজ তিওয়ারি, ঋদ্ধিমান সাহা, আকাশ দীপ, অনুষ্টুপ মজুমদার, মুকেশ কুমার, অর্ণব নন্দী, ঈশান পোড়েল, শাহবাজ আহমেদ