Advertisment

Ranji Trophy 2024: মাত্র ১২ বছরেই ভারতীয় ক্রিকেটের দোরগোড়ায়! অভিষেকেই ইতিহাস গড়া কীর্তি বিহারের বৈভবের

Vaibhav Suryavanshi Ranji Trophy debut: ২০১৯-এ খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন পাটনায় কোনও ভালো ক্রিকেট একাডেমি রয়েছে কিনা। পরে কোচ মনীশ ওঝার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তবে প্রাথমিকভাবে মনীশ ওঝা বৈভবকে কোচিং করাতে চাননি। কারণ টা জানালেন নিজেই!

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
Ranji Trophy 2024| Vaibhav Suryavanshi | youngest Ranji Cricketer | Mumbai vs Bihar

Vaibhav Suryavanshi: পাটনার ছেলে গর্বিত করলেন ভারতীয় ক্রিকেটকে (

রঞ্জি ট্রফিতে (Ranji Trophy 2024) ইতিহাস গড়লেন বিহারের বৈভব সূর্যবংশী (Vaibhav Suryavanshi)। মাত্র ১২ বছরেই প্ৰথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটল। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন যুগের সাক্ষী থাকল পাটনার মঈন-উল-হক স্টেডিয়াম। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে সাদা জার্সিতে নামলেন বৈভব। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ অভিষেককারী হিসাবে মাথায় তুললেন বিরল নজিরের শিরোপা। যে ঘটনা তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে।

Advertisment

১২ বছর মুম্বইয়ে কাটানোর পর নিজের 'ঘর' সমস্তিপুরে পা রাখলেন গর্বিত পিতা সঞ্জীব। বড় ছেলের ক্রিকেটে কোনও উৎসাহ ছিল না। তবে দ্বিতীয় পুত্র ক্রিকেটেই যে বাঁচে। পাঁচ বছর বয়সে বৈভবের হাতে ব্যাট তুলে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে সেটাই তাঁর ধ্যান, জ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুম্বইয়ের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন মুম্বইয়ের ময়দানে দেখেছেন কচিকাঁচাদের আনাগোনা। সেই সময়েই সূর্যবংশীর চ্যালেঞ্জ ছিল অন্যত্র। পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার তাড়না। তবে তা স্বত্বেও ক্রিকেটের প্রতি প্যাশন ভোলেননি তিনি। ওভাল ময়দানে এক কোচকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলেন, কোন বয়স ক্রিকেটে হাতেখড়ির জন্য উপযুক্ত! জবাব পেয়েছিলেন, যত অল্প বয়সে শুরু করা যায় আর কী!

আর দেরি করেননি। নিজের ছেলেকে নিয়ে হাজির হয়েছেন কোচিং ক্যাম্পে। ভর্তি করে দিয়েছেন একদম কাঁচা বয়সে। আর ওভাল ময়দানের সেই ঘটনা যেন দৈববাণী হিসাবে হাজির হয়েছিল সঞ্জীবের জীবনে। তাঁর পুত্র বৈভব-ই যে মাত্র ১২ বছর বয়সে অভিষেক ঘটিয়ে ইতিহাস গড়ে ফেললেন পাটনায়।

আরও পড়ুন- ধোনিকে ১৫ কোটি টাকার ধোঁকা বাঙালি ব্যবসায়ীর সংস্থার! আদালতে ছুটতে হল মহাতারকাকে

সঞ্জীব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে বলছিলেন, "ক্রিকেটে আমি নিজেই ট্র্যাজেডির শিকার হয়েছিলাম। বিহারে ক্রিকেট তো বটেই কোনও খেলার জন্যই উপযুক্ত পরিবেশ নেই। মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুম্বইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম। অনেক কাজ করতে হয়েছে মুম্বইয়ে টিকে থাকার জন্য- কোলাবার পাবে বাউন্সার হিসেবে কাজ করতে হয়েছে, সুলভ শৌচালয় হোক বা বন্দরে একাধিক কাজ করেছি। ছুটির দিনে চলে যেতাম ওভাল মাঠে।"

Ranji Trophy 2024| Vaibhav Suryavanshi| youngest Ranji Cricketer | Mumbai vs Bihar
Ranji Trophy: রঞ্জিতে বিহারের বাজি ১২ বছরের বৈভব (স্পেশ্যাল এরেঞ্জমেন্ট)

"ওখানে বাচ্চা-কাচ্চাদের দেখতাম হেলমেট-প্যাড পরে ক্রিকেট খেলতে। ওঁদের মধ্যে কেউ কেউ এত ভালো খেলত, যে ঘন্টার পর ঘন্টা স্রেফ ওঁদের খেলাই দেখা যেতে পারে। তখনই ঠিক করে নিই, ছেলে হোক বা মেয়ে তাকে ক্রিকেটার বানাবো। আমার কাছে জীবনের যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। মুম্বইয়ের ক্রিকেটকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা আর এত বছর পর মুম্বইয়ের বিপক্ষেই আমার ছেলে অভিষেক ঘটাল।"

নিজের ছেলের হাতে ব্যাট তুলে দেওয়ার স্মৃতি এখনও টাটকা সঞ্জীবের। "জন্মদিনের পরের দিন সকালেই থ্রো ডাউন দিতে শুরু করি। বুঝতে পারি, ওঁর সহজাত প্রতিভা রয়েছে। পরে ওঁকে স্থানীয় এক ক্রিকেট ক্যাম্পে নিয়ে যাই। যেটা চালান সুধাকর রায় (জাতীয় যুব দলের প্রাক্তন তারকা অনুকূল রায়ের বাবা)। ১৫ মিনিট ওঁকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পরে ওঁকে নিতে সম্মত হন তিনি।"

২০১৯-এ খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন পাটনায় কোনও ভালো ক্রিকেট একাডেমি রয়েছে কিনা। পরে কোচ মনীশ ওঝার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। তবে প্রাথমিকভাবে মনীশ ওঝা বৈভবকে কোচিং করাতে চাননি।

কেন? ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে মনীশ ওঝা জানাচ্ছিলেন, "ও একদম বাচ্চা ছিল। হেলমেট, প্যাড পড়ে রান নেওয়ার সময় হোঁচট খেত। তবে সঞ্জীবজি আমাকে পার্সোনাল ট্রেনিংয়ের জন্য জোরাজুরি করছিলেন। পাটনা থেকে একশো কিমি দূর সমস্তিপুর থেকে ওঁরা এসেছিলেন। তাই আর 'না' করতে পারিনি।"

তারপর থেকে সাপ্তাহিক তিনদিনের কড়া অনুশীলন চলত। সঞ্জীব পুত্রকে নিয়ে হাজির হয়ে যেতেন 'মনীশ স্যারের' কোচিংয়ে।আর সেই ট্রেনিং একাডেমিই হয়ে ওঠে পিতা-পুত্রের দ্বিতীয় বাড়ি।

Ranji Trophy 2024| Vaibhav Suryavanshi | youngest Ranji Cricketer | Mumbai vs Bihar
Vaibhav Suryavanshi: মাত্র পাঁচ বছরে বয়সেই বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন স্পেশ্যাল উপহার (স্পেশ্যাল এরেঞ্জমেন্ট)

সঞ্জীব বলছিলেন, "আমরা একদম সকালে ৫ টার সময় বাস ধরতাম। একাডেমিতে পৌঁছতে পৌঁছতে ৮ টা বেজে যেত। সপ্তাহে তিনদিন এটাই আমাদের ক্রিয়াকলাপ হয়ে দাঁড়ায়। করোনার আগমনের আগে পর্যন্ত টানা একবছর এটাই হয়ে এসেছিল।"

তবে করোনা অতিমারি সঞ্জীব এবং তাঁর পুত্রের ক্রিকেট সাধনায় ছেদ ফেলতে পারেনি। বাড়িতেই সিমেন্টের পিচ বানিয়ে চলত অনুশীলন। সংবাদপত্রে পড়েছিলেন একই কায়দাতেই পাঞ্জাবের ফাজিলায় শুভমান গিলের পিতা তাঁর তারকা ক্রিকেটারের জন্য প্রস্তুতির বন্দোবস্ত করেছিলেন।

সঞ্জীবের কোচ মনীশকেও লড়তে হয়েছে বিহার ক্রিকেটের সমস্যার সঙ্গে। "হেম্যান ট্রফিতে (আন্তঃজেলা টুর্নামেন্ট) বৈভব টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৬২০ রান করেছিল। নির্বাচকরা চাইছিলেন, ও যেন অনুর্ধ্ব-১৬ দলে খেলে। অনেক তর্কবিতর্কের পর ওঁকে অনুর্ধ্ব-১৯ দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমার যুক্তি একটাই ছিল, নিজের বয়সের দ্বিগুন ক্রিকেটারদের বিপক্ষে খেলতে ওঁর যদি সমস্যা না হয়, তাহলে কেন সিনিয়র দলে নেওয়া হবে না!" বলছিলেন বৈভবের দ্রোনাচার্য।

আরও পড়ুন: ক্যালেন্ডার দাগিয়ে রাখুন! টি২০ বিশ্বকাপে ভারত-পাক ম্যাচ কবে, জানিয়েই দিল ICC

তাঁর আরও যুক্তি, "বিনু মানকাড ট্রফিতে পাঁচ ইনিংসে বৈভব করে ৩৯৩ রান। এর মধ্যে হরিয়ানার বিপক্ষে সেঞ্চুরিও ছিল। অনুর্ধ্ব-১৯ চ্যালেঞ্জার ট্রফিতেও ওঁকে নির্বাচিত করা হয়। মাত্র একটা ফিফটি করলেও নির্বাচকদের নজরে পড়ে যায় ও। তারপরেই অনুর্ধ্ব-১৯ চতুর্দলীয় সিরিজে জায়গা পেয়ে যায়। সেখানে বাংলাদেশ এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ কয়েকটা ফিফটি প্লাস স্কোর করে।"

চতুর্দেশীয় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুরন্ত স্ট্রোক প্লে-র নিদর্শন তুলে ধরে বৈভব ৭৫ করেন। সেই ইনিংসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন স্বয়ং ওয়াসিম জাফর-ও। সেই সময় সঞ্জীব ছিলেন বিজয়ওয়াড়া-তে। বলেন, "ওয়াসিম স্যার বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে ছিলেন। বৈভবের শট নির্বাচন ওঁকে মুগ্ধ করেছিল। এমনকি ভিভিএস লক্ষ্মণ-ও বলে দেন, বড় মঞ্চে খেলার জন্য বৈভব তৈরি। তবে সামনের কয়েক বছরে ও আর কতটা উন্নতি করতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য থাকবে বলেই জানান লক্ষ্মণ। এই মুল্যায়ন আমাদের বাড়তি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।"

Ranji Trophy bihar Indian Cricket Team Cricket News
Advertisment