Advertisment

'খুব খারাপ, খুব খারাপ উইকেট', রঞ্জি ফাইনালের পিচ নিয়ে রেগে লাল অরুণ

কিছু বিশেষজ্ঞ আবার ঠারেঠোরে যা বলছেন, তার একটাই অর্থ দাঁড়ায়। রাজকোটের পিচ কিউরেটররা তাঁদের 'নিরপেক্ষতার' জন্য ঠিক প্রসিদ্ধ নন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
bengal ranji trophy

ঋদ্ধিমান সাহার সঙ্গে অরুণ লাল, ফাইল ছবি

রাজকোটের পিচ নিয়ে একটি প্রচলিত রসিকতা রয়েছে মুম্বইয়ের ড্রেসিং রুমে। "চেহারা দেখে ভুল কোরো না, ভেতরের রূপ ঢাকার জন্য ওপরে স্রেফ কিছুটা ধনেপাতা ছড়ানো।" সত্যি সাদা চোখে দেখতে দিব্যি, কখনোসখনো একটু সবুজও চোখে পড়বে, কিন্তু তা মাটির ওপর খুচরো ঘাস মাত্র। শিগগিরই দেখা দেবে ফাটল, মন্থর হতে থাকবে পিচের গতি এবং নিচু হয়ে আসবে বল, এবং তারপর শুরু হবে ঘূর্ণি।

Advertisment

রঞ্জি ফাইনালে বাংলা বনাম সৌরাষ্ট্রের ম্যাচের প্রথম দিনের শেষে পিচ নিয়ে রেগে আগুন হন বাংলার কোচ অরুণ লাল। "খুব খারাপ", "লজ্জা" জাতীয় শব্দ ব্যবহার করে ক্ষোভ প্রকাশও করেন। দিনের শুরুতে পাটা পিচ মনে হলেও দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে যেতে থাকে পিচ, এবং বাউন্স ক্রমশ কমতে থাকে।

রাজকোটের কিউরেটররা যে কোনোরকমের পিচ তৈরিতে সিদ্ধহস্ত: একেবারে পাটা ব্যাটিং পিচ, প্রবল ঘূর্ণি পিচ, অথবা এই ফাইনালের জন্য যে পিচ বানিয়েছেন - মন্থর, নিচু পিচ যা বোলারদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে বটে, তবে ধৈর্য ধরে মোটামুটি সোজা বল ফেলে গেলে পুরস্কৃতও করবে, এবং পরে ঘুরবে।

অরুণ লাল বলেন, "খুব খারাপ, খুব খারাপ উইকেট। বোর্ডের দেখা উচিত এই ব্যাপারটা, অত্যন্ত খারাপ। বল উঠছেই না, এটা ক্রিকেটের পক্ষে ভালো নয়। বল পিচ থেকে উঠছেই না, প্রথম দিনেই ধুলো উড়ছে। ফাইনাল নিউট্রাল মাথেই হতে হবে, এমন কোনও কথা নেই, কিন্তু বোর্ডের হাতে তো নিউট্রাল কিউরেটর রয়েছে, ওদের দেখা উচিত। ম্যাচের ১৫ দিন আগে নিরপেক্ষ কিউরেটর পাঠিয়ে দিন, কিন্তু এখানে তো নিউট্রাল কিউরেটরও ঠিকঠাক কাজ করেন নি। তৃতীয় দিনেই যদি পিচে বল গড়াতে শুরু করে, তার চেয়ে লজ্জার আর কিছু হয় না।"

যাঁদের হাতে পিচ তৈরি হয়েছে, তাঁরা পিচের এই অবস্থার পেছনে দুটি মূল কারণ দেখছেন। এক, গুজরাট এবং সৌরাষ্ট্রের সেমিফাইনাল শেষ হয় ৪ মার্চ, অর্থাৎ ফাইনালের আগে পিচ তৈরি করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় নি। না, সেমিফাইনালের পিচেই ফাইনাল খেলা হচ্ছে না, কিন্তু সেমিফাইনাল চলাকালীন তো আর ফাইনালের পিচের ওপর কাজ করা যায় না, সে যতই কর্ণাটক থেকে নিরপেক্ষ 'পিচ কিউরেটর' আমদানি করা হোক।

দুই, আমাদের সূত্রের খবর, ম্যাচের দু'দিন আগে থেকেই পিচে জল দেওয়া বন্ধ করা হয়। অর্থাৎ সেমিফাইনালের পর মাত্র দু'দিন জল পেয়েছে এই পিচ। যুক্তি ছিল, ফাইনালের আগে দু'দিন নিঃশ্বাস নিক পিচ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত জল না দেওয়ার সম্ভাব্য উদ্দেশ্য হলো পিচে দ্রুত ফাটল ধরানো - ঘরের মাঠ, ঘরের সুযোগসুবিধে।

কিছু বিশেষজ্ঞ আবার ঠারেঠোরে যা বলছেন, তার একটাই অর্থ দাঁড়ায়। রাজকোটের পিচ কিউরেটররা তাঁদের 'নিরপেক্ষতার' জন্য ঠিক প্রসিদ্ধ নন। যদিও একথা স্রেফ সৌরাষ্ট্র নয়, দেশের অন্যান্য অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষেত্রেও অল্পবিস্তর প্রযোজ্য, এমনকি জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও। তবে সৌরাষ্ট্রের কিউরেটরদের সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে, যে তাঁরা চাইলে পিচের স্রেফ একটি অংশ বদলে দিতে পারেন, ধরুন গুড লেংথে দেখা দিল একটি এবড়োখেবড়ো 'রাফ প্যাচ', যার সুবিধা নিতে পারবেন রবীন্দ্র জাদেজার মতো স্পিনাররা।

তিন বছর আগে এই পদ্ধতি বুঝিয়ে বলেছিলেন এক স্থানীয় কিউরেটর। ব্যাপারটা সোজাই। গুড লেংথ জায়গাগুলোতে জল দেওয়া, সেই জল দুই মিলিমিটার গভীরে ঢুকতে দেওয়া, এবং তারপর কাজ হওয়ার অপেক্ষা করা। দিন দুয়েকের মধ্যেই নরম হয় যায় এইসব জায়গা, এবং ম্যাচের প্রথম দিন বুটের চাপে যা ক্ষতি হয়, তার ফলে দিব্য 'রাফ প্যাচ' তৈরি হয়ে যায়।

এবারের এই পিচ কী চেহারা ধারণ করে, সেটা দেখার।

Advertisment