ইডেনে দ্বিতীয় দিনের শেষে ঈশানের হাত ধরে ফাইনালের স্বপ্ন দেখছে বাংলা

কতটা আধিপত্য ছিল বাংলার বোলিংয়ে, সেটা বোঝাতে দুটো তথ্যই যথেষ্ট। এক, কর্ণাটক ব্যাট করতে পেরেছে মাত্র ৩৬.২ ওভার। দুই, টিমের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন কিনা স্পিনার কৃষ্ণাপ্পা গৌতম (৩১)!

কতটা আধিপত্য ছিল বাংলার বোলিংয়ে, সেটা বোঝাতে দুটো তথ্যই যথেষ্ট। এক, কর্ণাটক ব্যাট করতে পেরেছে মাত্র ৩৬.২ ওভার। দুই, টিমের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন কিনা স্পিনার কৃষ্ণাপ্পা গৌতম (৩১)!

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
ranji trophy bengal vs karnataka

রবিবারের ইডেনে ঈশান পোড়েল বুঝিয়ে দিলেন, তাঁকে দলে নিয়ে ভুল করেনি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। ছবি সৌজন্য: বিসিসিআই

রঞ্জি সেমিফাইনালের দ্বিতীয় দিনের শেষে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে অ্যাডভান্টেজ বাংলা। কে এল রাহুল-করুন নায়ার-মনীশ পাণ্ডের মতো তারকাদের নিয়ে গড়া প্রবল পরাক্রমশালী কর্ণাটকের প্রথম ইনিংস বাংলার পেস ব্যাটারির নিরুঙ্কুশ দাপটে মাত্র ১২২ রানে গুটিয়ে গেল। শুধু গুটিয়ে যাওয়া নয়, লেখা ভালো, পটাটো চিপসের মতো ঝুরঝরিয়ে ভেঙে পড়ল প্রতিরোধহীন।

Advertisment

প্রথম ইনিংসের ৩১২-র সুবাদে ১৯০ রানের লিড নিয়ে খেলতে নেমে বাংলার টপ অর্ডারে ফের ব্যাটিং বিপর্যয়। ৭২ -৪ অবস্থায় দিন শেষ করল বঙ্গব্রিগেড। লিড এখন ২৬২। আর একশো-একশো পঁচিশ যোগ করতে পারলেই ফোর্থ ইনিংসে কর্ণাটকের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা চারশোর কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। যে টার্গেট তাড়া করে জেতার নজির কমই আছে রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে। ক্রিকেট যতই হোক অনিশ্চয়তার খেলা, রবিবাসরীয় বিকেলে ইডেনে 'জয় বাংলা!'-র রিংটোন কিন্তু বাজতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: অনুষ্টুপের সেঞ্চুরিতে লজ্জা এড়িয়ে বাংলা সাময়িক স্বস্তিতে

গতকাল যেখানে শেষ করেছিলেন, আজ সেখান থেকেই শুরু করেছিলেন অনুষ্টুপ মজুমদার। মারকুটে ব্যাটিংয়ে গতকালের ২৭৫-৯ থেকে স্কোরকে বাড়িয়ে নিয়ে গেলেন ৩১২-য়। ঈশান পোড়েলের শেষ উইকেট টা যখন পড়ল, অনুষ্টুপ তখন ব্যাটিং ১৪৯। রান দিয়ে এই ইনিংসের বিচার হয় না। পরিস্থিতির বিচারে এবং প্রভাবের নিরিখে বাংলার রঞ্জি-ইতিহাসে সর্বকালীন সেরা দশ ইনিংসের তালিকায় হেসেখেলে জায়গা করে নেবে অনুষ্টুপের এই ইনিংস।

Advertisment

৩১২ ভদ্রস্থ রান। কিন্তু কে এল রাহুল বা মণীশ পাণ্ডের মধ্যে একজন লম্বা খেলে দিলে তিনশো প্লাস যথেষ্ট না-ও হতে পারে, এমনটাই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু কে জানত, সম্পূর্ণ অন্য মেরুতে ভাবনাচিন্তা বইছিল বাংলার তরুণ পেসারদের!

কে এল রাহুলের সঙ্গী ওপেনার আর. সমর্থকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দিয়ে যে ঝটকাটা শুরুতেই ঈশান পোড়েল দিয়েছিলেন, তা থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি কর্ণাটকের তারকাখচিত ব্যাটিং লাইন আপ। একের পর এক ব্যাটসম্যান এসেছেন, এবং ঈশান-মুকেশ-আকাশদীপের আগুন-ঝরানো বোলিংয়ের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন। সিম-সুইং-গতির ত্র্যহস্পর্শে দিশেহারা লেগেছে কর্ণাটকিদের। হাল ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন রাহুল-মনীশ-করুনের মতো তারকা-ত্রয়ীও। রাহুল (২৬) তবু কিছুটা লড়েছেন। মনীশ ফিরেছেন ১২ করে। ক্যাপ্টেন করুনের অবস্থা আরও করুণ, মাত্র ৩ করে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন। কতটা আধিপত্য ছিল বাংলার বোলিংয়ে, সেটা বোঝাতে দুটো তথ্যই যথেষ্ট। এক, কর্ণাটক ব্যাট করতে পেরেছে মাত্র ৩৬.২ ওভার। দুই, টিমের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন কিনা স্পিনার কৃষ্ণাপ্পা গৌতম (৩১)!

মুকেশ-আকাশদীপ দু'জনেই দুর্দান্ত বল করেছেন, ঝুলিতে যাঁদের যথাক্রমে তিনটে এবং দুটো করে উইকেট। তবে দিনের নায়ক নিঃসন্দেহে ছয় ফুট তিনের ঈশান পোড়েল (১৩-২-৩৯-৫)। চন্দননগরের ঈশান আজ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। একুশ বছরের বঙ্গসন্তান আজ দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, আসন্ন আইপিএল-এ তাঁকে দলে নিয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব কোন ভুল করেনি।

হাতে প্রায় দুশো রানের লিড। দ্বিতীয় ইনিংসে দুশোর কাছাকাছি তুললেই ফাইনালের হাইওয়েতে পা রাখা একরকম নিশ্চিত। বাংলার টপ অর্ডার তবু অভিমন্যু মিঠুনের সামনে কেঁপে গেল আরেকবার। দুই ওপেনার অভিষেক রমন আর অভিমন্যু ঈশ্বরন ফের ব্যর্থ, যেন রান করার পাসওয়ার্ড হঠাৎই হারিয়ে ফেলেছেন দু'জনে। অর্ণব নন্দী আর মনোজ তিওয়ারিও এলেন আর গেলেন। আশার কথা, তিনে নামা সুদীপ চ্যাটার্জিকে( ৪০ ব্যাটিং) দ্বিতীয় ইনিংসে অনেক জমাট দেখাচ্ছে। সঙ্গী প্রথম ইনিংসের নায়ক অনুষ্টুপ।

খেলাটার নাম ক্রিকেট। কখন কী ঘটে যায় কিচ্ছু বলা যায় না। সেটা মাথায় রেখেও লিখে ফেলা যায়, ম্যাচ প্রায় ৭০-৩০ ঝুঁকে রয়েছে বাংলার দিকে। এই অবস্থা থেকে মনোজরা ম্যাচ হারলে সেটা চূড়ান্ত অঘটনের পর্যায়ে পড়বে।

ম্যাচের আগের দিন প্রেসকে বাংলার কোচ অরুণলাল বলেছিলেন, "কর্ণাটকে ইন্ডিয়া প্লেয়ার আছে কয়েকজন, জানি। কিন্তু খেলাটা তো আর নাম দেখে হবে না। মাঠেই হবে। আমরা ওদের ভয় পাচ্ছি না।"

ঠিকই। খেলাটা নাম দিয়ে নয়, মাঠেই হয়। নাহলে দ্বিতীয় দিনের শেষে প্রাক-ম্যাচ ফেভারিট কর্ণাটককে 'ডেভিড' দেখায়, আর বাংলাকে 'গোলিয়াথ'!