সাল ২০১৪। ভয়ঙ্কর বন্যায় ভেসে গিয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীর। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপে ভারত-পাকিস্তান মিলিয়ে বলি হয়েছিল ৫৫৭ জন মানুষের প্রাণ। এহেন বন্যা বিধ্বস্ত কাশ্মীরকে ফুটবলের হাত ধরেই স্বাভাবিক করতে চেয়েছিলেন স্থানীয় এক সংবাদপত্রের মালিক শামিম মিরাজ। রিয়াল কাশ্মীর বলে একটি ফুটবল ক্লাব শুরু করেন তিনি।
মিরাজের কাছে না ছিল টাকা, না ছিল ফুটবলার। ট্রেনিংয়ের সুযোগ সুবিধা সেখানে নিছকই স্বপ্ন। কাট টু ২০১৮। দ্বিতীয় ডিভিশন আই-লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আগামী বছর আই-লিগের মূল পর্বে খেলবে রিয়াল। এক কথায় যেন রূপকথার গল্প।
জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম দল হিসেবে আই-লিগ খেলবে তারা। ভারতীয় ফুটবলে নয়া ইতিহাস লিখল শ্রীনগরের এই ক্লাব। বুধবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য একটি মাত্র পয়েন্টের দরকার ছিল। কিন্তু এদিন তারা বেঙ্গালুরুর এফএসভি এরিনায় হিন্দুস্থান এফসিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে দিল।
Congratulations Real Kashmir FC for becoming the first club from Kashmir to qualify for the I-League. I am sure the achievement will inspire the youth to take up the game and take our Country to higher echelons of Indian Football. @IndianFootball @ILeagueOfficial @realkashmirfc pic.twitter.com/a4VCNJTNXs
— Praful Patel (@praful_patel)
Congratulations Real Kashmir FC for becoming the first club from Kashmir to qualify for the I-League. I am sure the achievement will inspire the youth to take up the game and take our Country to higher echelons of Indian Football. @IndianFootball @ILeagueOfficial @realkashmirfc pic.twitter.com/a4VCNJTNXs
— Praful Patel (@praful_patel) May 30, 2018
30, 2018
ইতিহাস লেখার পর মিরাজের মনে পড়ছিল কষ্টের সেই দিনগুলি। কলেজ পড়ুয়া ও ব্যাংকে চাকুরিরত আধা পেশাদার ফুটবলারদের নিয়েই এই রিয়াল টিম। মিরাজ বলছেন, “আমরা রীতিমতো ভিক্ষা করেছি। ক্লাবটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শুধু ধারই করিনি, চুরিও করেছি।” রিয়ালের স্কটিশ কোচ ডেভিড রবার্টসন বলছেন, “আমাদের মতো ছোট ও কম বাজেটের ক্লাব কখনও ভাবতেও পারিনি যে আমরা কোয়ালিফাই করতে পারব। গোটা ব্যাপারটাই অলৌকিক, যেন রূপকথার গল্প।” গতকাল এই ঐতিহাসিক ম্যাচের সাক্ষী ছিলেন মাত্র জনাপঞ্চাশ দর্শক। প্রচণ্ড বৃষ্টি আর প্রবল হাওয়ার মধ্যেই খেলল রিয়াল-হিন্দুস্থান। যদিও কোচ রবার্টসন বলেছেন যে, তথাকথিত প্রতিকূল পরিবেশই তাঁদের পক্ষে গেছে। কারণ জম্মু-কাশ্মীরে এরকম প্রবল ঠান্ডা হাওয়ার মধ্যেই তাঁরা খেলে অভ্যস্ত।
আরও পড়ুন ফুটবলায়নের দিনগুলি- পৃথিবীজোড়া ফুটবল চর্চার ইতিহাস
ভারতীয় ফুটবলে পেশাদার লিগ শুরু হওয়ার ২২ বছর পরেই অবশেষে একটি ক্লাব কাশ্মীর থেকে এল, যারা দেশের প্রথমসারির লিগ খেলবে। এই রাজ্য থেকে কোনও ক্লাব টপ লিগে না-খেললেও এখানকার বেশ কিছু ফুটবলার কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে খেলেছেন। আবদুল মজিদ কাকরু প্রথম কাশ্মীরি ফুটবলার হিসেবে দেশের অধিনায়কত্ব করেন। এছাড়াও মাজিদ ডার, মেহরাজ ওয়াডু ও ইশফাক আহমেদরা রয়েছেন। কয়েকবছর আগে আই-লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলেছে লোনস্টার কাশ্মীর। কিন্তু কাশ্মীরের রাজ্য লিগের জন্যই তাদের অগ্রগতি থেমে যায়।
মীরাজ বলছেন তাঁর রাজ্যে সেঅর্থে কোনও জাতীয় স্তরে খেলা হয় না। এই লিগই তাদের জন্য দরজা খুলে দেবে বলে আশাবাদী তিনি। এমনকি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতো টিমও শ্রীনগরে এসে খেলবে বলেই মনে করেন তিনি। সংবাদপত্র কাশ্মীর মনিটরের মালিক মিরাজ। তিনি বলছেন, “ভুল কারণের জন্যই কাশ্মীর সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় আসে। এবার শেষ পাতায় থাকবে তারা। সেখানে দলের সাফল্যের কথা লেখা থাকবে।”