বুধবারের রাতের পরে ক্রিকেট বিশ্বে একই সঙ্গে সবচেয়ে সুখী ও দুঃখী ব্যক্তি কে হতে পারেন? আমচি মুম্বইয়ের ক্রিকেট মহলে এই প্রশ্ন ক্যুইজে জিজ্ঞাসা করা হলে অবশ্য সঠিক উত্তরের জন্য কোনও পুরস্কার মিলবে না। সকলেই দীনেশ লাডের নাম জানিয়ে দেবেন নির্দ্বিধায়। লক্ষ্মীবারে অন্য সপ্তাহে পুজো করতে যে সময় লাগে, এই সপ্তাহে লাগল আরও পাক্কা অতিরিক্ত ৩০ মিনিট। পুজো শেষ করেই মুম্বইয়ের ডম্বিভিলি থেকে কলকাতায় ফোন!
শুরুতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তির গলায় দার্শনিকতা, “আসলে কী জানেন, জিন্দগি মে হর খুশি একসাথ নহি মিলতি!” আসলে মুম্বই বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের ম্যাচ যত গড়িয়েছে, দীনেশ লাডের ফোনে ইনকামিং কলের সংখ্যা তত বেড়েছে। পুত্র সিদ্ধেশ যে আইপিএলে অভিষেক ঘটিয়ে ফেললেন! কিন্তু পুত্রের আইপিএল জগতে আবির্ভাবের খুশি অনেকটাই ম্লান হয়ে গেল ছাত্র রোহিত শর্মার চোটের খবরে। অশ্বিনদের বিরুদ্ধে ডুয়েলে নামার আগেই গোটা দেশে আশঙ্কার চোরাস্রোত বয়ে গিয়েছিল অনুশীলনে রোহিত শর্মা চোট পাওয়ায়। রোহিতের জায়গাতেই মুম্বইয়ের প্রথম একাদশে প্রবেশ ২৬ বছরের সিদ্ধেশ লাডের।
Siddhesh Lad is all set to make his debut for the @mipaltan ????????#MIvKXIP pic.twitter.com/tPw5eQN3sv
— IndianPremierLeague (@IPL) April 10, 2019
আরও পড়ুন: IPL 2019, MI vs KXIP Highlights: রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারে শেষ হাসি মুম্বইয়ের
বৃহস্পতিবারে সকালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে দীনেশ বলছিলেন, “কতটা খুশি হয়েছি, তা ভাষায় বর্ণনা করা মুশকিল। শুধু আমি নয়, সিদ্ধেশের মা, আমাদের বউমা, আমাদের পুঁচকে, কাল সন্ধেবেলা মারাত্মক টেনশনে কাটিয়েছি। বাড়ির ছেলে প্রথমবার আইপিএলে খেলতে নামছে, সেই উত্তেজনা আমাদের গ্রাস করবে না? আপনিই বলুন?” গর্বিত পিতার আনন্দ অবশ্য নিমেশেই উধাও হয়ে যায় ছাত্র রোহিতের কথা উঠলে। দীনেশ এক নিঃশ্বাসে বলেন, “চেয়েছিলাম সিদ্ধেশের ডেবিউ ম্যাচে যেন রোহিত থাকে। তবে রোহিতের জায়গাতেই যে ও খেলবে, তা কোনওদিন ভাবিনি।”

গোটা দেশে পরিচিতি রোহিত শর্মার বাল্যকালের কোচ হিসেবে। অনামি থেকে সুপারস্টার ক্রিকেটার হওয়ার পরেও রোহিত নিজের প্রথম ‘গুরু’কে ভোলেননি। নিজের বিয়ের খবর প্রথম কোচকেই দিয়েছিলেন। শুধু রোহিতই নয়, জাতীয় দলের তারকা শার্দুল ঠাকুরের উত্থানও তাঁর হাতে। সেই কোচের পুত্রের অভিষেক ম্যাচেই থাকতে পারলেন না কাপ্তান রোহিত। ক্রিকেট অদৃষ্টের পরিহাস বোধহয় এমনই!

দীনেশ লাড জানালেন, “সাম্প্রতিককালে রোহিতের সঙ্গে কথা হয়নি। ও ক্রিকেট নিয়ে ভীষণই ব্যস্ত। তবে বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে রি-ইউনিয়নের কথা ছিল। তবে গতকাল হঠাৎই ওর চোটের খবর শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেই মন খারাপ যে এভাবে ঈশ্বর কয়েকঘণ্টার মধ্যে পালটে দেবেন, তা জানতাম না।” রোহিতের সঙ্গে কথা না হলেও ছাত্রের ইনজুরি আপডেট নিয়ে দীনেশ লাড জানান, “শুনেছি খুব সিরিয়াস কিছু নয়। সামনের ম্যাচ থেকেই মুম্বইয়ের জার্সিতে দেখা যেতে পারে।”
আরও পড়ুন: সামনেই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা, তার আগেই চোট পেলেন রোহিত
বিখ্যাত মুম্বইকরের চোটের কথা বলার মাঝেই দীনেশ লাডের বক্তব্য, “সিদ্ধেশ গতকাল বেশি রান করতে পারেনি। তবে অভিষেকে খেলতে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা! আইপিএলে এমন রেকর্ড আমার ছেলের ব্যাটেই প্রথমবার। দুরন্ত অনুভূতি। পাড়ায় মিষ্টি বিলিয়েছি। ” আইপিএলে অভিষেক ঘটানোর আগেই অবশ্য মুম্বই ক্রিকেটের পরিচিত মুখ সিদ্ধেশ। ২০১৭-১৮ মরশুমে রঞ্জি ট্রফিতে মুম্বইয়ের জার্সিতে সর্বোচ্চ স্কোরার হয়েছিলেন। ভারতীয়-এ দলের হয়ে খেলার পাশাপাশি দলীপ ট্রফিতে নিয়মিত পারফর্ম করে গিয়েছেন সিদ্ধেশ।
দুরন্ত ফর্মে থাকার কারণেই গত আইপিএলের নিলামে মুম্বই রীতিমতো চড়া দামে কেনে সিদ্ধেশকে। তবে কোনও ম্যাচেই প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পান নি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে স্বপ্নপূরণ গেইল-রাহুল-অশ্বিনদের বিরুদ্ধে। অভিষেকের গোলার্ধে ঢুকে যাওয়া পুত্রের সঙ্গে রাতে অনেকক্ষণ কথাও হয়েছে। কী পরামর্শ দিলেন? ওয়েস্টার্ন রেলওয়েজের প্রাক্তন দাপুটে ক্রিকেটার দীনেশ জানাচ্ছেন, “সিদ্ধার্থ যথেষ্ট ভাল ক্রিকেটার। নিজের ভালটা বোঝে। আমার পরামর্শের প্রয়োজন নেই সবসময়ে।” রোহিতের চোটেও যুবরাজ সিংয়ের জন্য মুম্বইয়ের দরজা খোলে নি। সেই বিতর্কে অবশ্য ঢুকতে নারাজ দীনেশ। সাফ বলে দিয়েছেন, “এটা মুম্বইয়ের টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত।”
দীনেশ লাডের ফোনের রিংটোন লক্ষ্মী-মন্ত্র। বরাবরের ঈশ্বরে বিশ্বাসী দীনেশ লক্ষ্মীবারের সকালে ঠাকুরের কাছে একটাই প্রার্থনা করেছেন, “সিদ্ধেশ যেন নিয়মিত খেলার সুযোগ পায়। ভাল পারফর্ম করে জাতীয় দলের দরজা যেন খুলে যায় ওর জন্য।” হর্ষ-বিষাদে থাকা রোহিতের বিখ্যাত কোচের মনষ্কামনা কতটা পূরণ হয়, সেটাই আপাতত দেখার।