Rohit Sharma batting career: অস্ট্রেলিয়া যেন ভারতের অনেক ব্যাটসম্যানের টেস্ট কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১২ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরের পর রাহুল দ্রাবিড় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণ তাঁদের সেই জাদুকরী ব্যাটিংয়ের ছন্দ হারান এবং এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই অবসর নেন। এমনকি শচীন তেন্ডুলকরও সেই সফরে ভাল খেলতে পারেননি, যেন তাঁর ব্যাট থেকেও পুরনো ঝলক হারিয়ে যায়, এবং তারপর থেকেই তাঁর বিদায়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যায়। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলেন রোহিত শর্মা, যিনি ২০২৫ সালের শুরুতে হওয়া দুঃস্বপ্নের অস্ট্রেলিয়া সফরের পর টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। নির্বাচকরা যখন তাঁর বদলে নতুন নেতৃত্ব ভাবতে শুরু করলেন, তখনই তাঁর টেস্ট অবসরের পথ প্রশস্ত হল।
তবে দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ বা শচীনের মতো নয়, রোহিতের টেস্ট কেরিয়ার কখনওই সেই উচ্চতায় পৌঁছায়নি, যতটা প্রত্যাশা ছিল। তরুণ বয়সে ঘরোয়া ক্রিকেট মাতিয়ে দেওয়া সেই ব্যাটসম্যান, যাঁর ব্যাটিং স্টাইল পুরনো ধাঁচের কঠোর সমালোচকদের মন জয় করেছিল, তাঁর আন্তর্জাতিক টেস্ট যাত্রা বারবার ব্যাঘাতের মুখে পড়েছে।
রোহিতের টেস্ট কেরিয়ারের শুরু যেমন কঠিন ছিল, শেষটাও তেমনই হতাশাজনক। অস্ট্রেলিয়া সফরে তাঁর গড় ছিল মাত্র ৬-এর একটু বেশি, আর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে গড় ছিল মাত্র ১৫। মাঝেমধ্যে কিছু উজ্জ্বল মুহূর্ত দেখা গিয়েছিল—বিশেষত ইংল্যান্ড সফরে ওপেনার হিসেবে তিনি ভালো খেলেছিলেন, যেখানে তাঁর গড় ছিল ৪৫, যা ভারতের বাইরে তাঁর সেরা পারফরম্যান্স। সম্ভবত সেই স্মৃতির উষ্ণতাই তাঁকে আরও কিছুদিন টেস্ট ক্রিকেটে টিকিয়ে রেখেছিল, তবে নির্বাচকদের সিদ্ধান্তই শেষমেশ তাঁকে অবসর নিতে বাধ্য করে।
আরও পড়ুন কেন আচমকা অবসর গ্রহণ করলেন রোহিত? অবশেষে সামনে এল আসল কারণ
রোহিত শর্মার ব্যাটিং প্রতিভা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন—কেন এমন একজন ব্যাটসম্যান ধারাবাহিকভাবে সফল হতে পারলেন না? তিনি নিজেই Natural Talent বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল এই ‘গড গিফটেড’ তত্ত্ব অনেক সময় ভুল ধারণা তৈরি করে। তিনি একসময় বলেছিলেন, “আমি কখনওই প্রকৃত অর্থে ব্যাটসম্যান ছিলাম না। আমি ছিলাম একজন বোলার। অফ-স্পিনার ছিলাম। ব্যাটিং করা শিখেছি পরবর্তীতে। আমার কোচ দিনেশ লাড বলতে পারবেন, আমি ৮ নম্বরে ব্যাট করতাম। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে আঙুলে চোট পাওয়ার পর বল ধরা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন থেকেই আমি সিরিয়াসলি ব্যাটিং শুরু করি। এই ‘ট্যালেন্ট’ কথাটা আমার পেছনে পড়ে গেছে।”
এই কথাগুলো শুনে অনেকেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের তুলনামূলক ধীরগতির অগ্রগতি যেন আরও পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল। অনেকটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্ল হুপারের মতো, যাঁর টেস্ট কেরিয়ার তাঁর প্রতিভার তুলনায় খাটো থেকে গিয়েছিল। যদিও হুপারের ব্যর্থতা হয়তো মানসিকতাজনিত ছিল, রোহিত নিজেকে সে আলোকে দেখেননি।
আরও পড়ুন টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় রোহিতের, বড় সিদ্ধান্ত নিলেন হিটম্য়ান
তিনি নিজের ব্যাটিংয়ে ধাপে ধাপে পরিবর্তন এনেছেন। যখন মহেন্দ্র সিং ধোনি তাঁকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওপেন করতে বলেন, তখনই তিনি নিজের খেলাকে গভীরভাবে বুঝতে শুরু করেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি একসময় ব্যাট স্টান্সে মাটিতে ঠুকে নিতেন, পরে ব্যাট উপরে তুলে রাখার অভ্যাস করেন। তিনি বলেছিলেন, “কেউ আমাকে বলেনি। এটা আমি নিজেই বুঝে নিয়েছিলাম। ওপেন করার সময় ভেবেছিলাম, ব্যাট উপরে রাখলে বল ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভালো পজিশনে থাকা যায়। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করার সময় এমন সুযোগ থাকত না। তখন শুধু বল মারার প্রস্তুতি থাকত। ওপেন করতে গিয়ে প্রথম যে ভাবনা মাথায় এল তা হল—বল সুইং করবে এবং উইকেটের পিছনে ক্যাচ বা এলবিডব্লু হতে পারে। তখন ভাবলাম কী করলে ভাল হয়—ব্যাট উপরে রাখলে বল ছাড়ার সুযোগ বাড়ে। আগে ব্যাট নিচে রাখলে মনে হত বলটা খেলতেই হবে।”
আরও পড়ুন রোহিতের অবসরে হিঁচকি দিয়ে কান্না, বাঙালি ফ্যান গার্লের বুক ফাটা কষ্টের Video Viral
এই আত্মবিশ্লেষণ, অধ্যবসায় এবং ব্যাটিংয়ের প্রতি তাঁর গভীর মনোযোগ তাঁর যাত্রাকে ব্যতিক্রম করেছে। যদিও টেস্ট ক্রিকেটে তিনি নিজের সম্ভাবনার পুরো প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি, তবু তাঁর সংগ্রাম, পরিবর্তনের চেষ্টা, এবং আত্ম-অনুধাবনের গল্প অনেকের প্রেরণা হয়ে থাকবে।