ভারত: ০ শ্রীলঙ্কা: ০
খবর শুনে দীর্ঘশ্বাস নেমে আসে ফোনের ওপারে। কিছু বলতে গিয়েই যেন ক্ষণিক থেমে যান। সাফ কাপে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের ফলাফল জানার পরে অতনু ভট্টাচার্য যেন সম্বিৎ হারিয়ে ফেলেন।
নেপালে কিছুদিন আগে স্টিম্যাচের ভারত নেপালকে হারাতে হিমশিম খেয়েছিল। তারপরে সাফ কাপে খেলতে নেমে সুনীল ছেত্রীদের দুর্দশা অব্যাহত। প্রথম ম্যাচে ১০ জনের বাংলাদেশকে হারাতে পারেনি ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছেও বিশ্রী ফুটবলের নিদর্শন তুলে ধরে গোলশূন্য ড্র করল ভারত।
আরও পড়ুন: ডুরান্ড কাপের তারকাকে সই করিয়ে চমক! ঘরের ছেলেকে ঘরে ফেরাল ইস্টবেঙ্গল
আর জাতীয় দলের এই অধঃপতন দেখেই কার্যত বাকরুদ্ধ এশিয়ার অলস্টার দলের হয়ে খেলা কিংবদন্তি অতনু ভট্টাচার্য। অফিসের কাজে গিয়েছেন বেঙ্গালুরুতে। উদ্যান নগরী থেকেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে অতনু ভট্টাচার্য বলে দিলেন, "সাফ কাপ ভারতের নিজের এলাকা। বাংলাদেশ, নেপালকে দুরমুশ করে বরাবর আমরাই চ্যাম্পিয়ন। আমাদের আমলে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে চার-পাঁচ গোল করে দিতাম। এখন কী যে হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।"
সাফ কাপে ভারতের কৌলিন্য হারানো নিয়ে বেজায় শঙ্কিত টানা বারো বছর জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা প্রবাদপ্রতিম গোলকিপার। বেঙ্গালুরুতে ব্যস্ততার মাঝে সময় করে বলছিলেন, "সাফ কাপ হারালে স্টিম্যাচের চাকরি বাঁচানো মুশকিল। কনস্ট্যানটাইনের আমলেও তো আমরা ভাল খেলেছি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ফাইট দিতাম। এখন তো বাংলাদেশ, নেপালকে হারাতেই ভারতের কালঘাম ছুটে যাচ্ছে!"
আরও পড়ুন: পা ভেঙে কোচিংয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়নি! নতুন ভূমিকায় ইস্টবেঙ্গলে প্রত্যাবর্তন মৃদুলের
সাফ কাপের আগে থেকেই স্টিম্যাচ হাঁটাও স্লোগান উঠে গিয়েছিল ভারতীয় ফুটবল মহলে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ধরাশায়ী হওয়ার পরে স্টিম্যাচ বিদায়ের হ্যাশট্যাগ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং। সব জেনে শুনেও অতনু ভট্টাচার্য অবশ্য ক্রোয়েশিয়ান কোচের পাশেই দাঁড়াতে চান। বলেন, "স্টিম্যাচ এক মরশুম আগে ভারতে এসেছে। ওঁর আরও কিছুটা সময় প্রাপ্য। তবে ভারতীয় ফুটবলারদের শারীরিক গড়ন বা খেলার ধাঁচের কথা মাথায় রাখলে স্প্যানিশ কোচেদের স্টাইল কিন্তু রপ্ত করতে সুবিধা ভারতীয়দের। মাটিতে বল রেখে পাসিং ফুটবল- ভারতের ফুটবলে স্প্যানিশ ঘরানার ফুটবলই চাই আমাদের। জার্মান বা ইংল্যান্ডের কোচেদের ভারতে সফল হওয়া সমস্যার।"
হাবাস-সের্জিও লোবেরোদের পারফরমম্যান্সের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলছিলেন, "হাবাস কিন্তু ভারতীয় ফুটবলে বেশ সফল। ম্যান ম্যানেজমেন্টও ভাল।"
ভারতীয় ফুটবলের সাম্প্রতিক অধঃপতনে উঠে এসেছে আইএসএলের প্রসঙ্গও। বাংলার নক্ষত্রখচিত গোলকিপার অতনু ভট্টাচার্য বলেন, "আইএসএলে তো নামি নামি ফুটবলাররা খেলতে আসে। গত মরশুমে অবশ্য ভারতীয়রাও পাল্লা দিয়ে ভাল খেলেছিল। তবে জাতীয় দলের হতে খেলতে নামলেই কেন এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স, সেটা ফেডারেশনের খতিয়ে দেখা উচিত। তাছাড়া আগে একাধিক টুর্নামেন্ট হত- কলকাতা লিগ, শিল্ড, ডুরান্ড কাপ, আইলিগ, ফেডারেশন কাপ। এখন তো শুধু আইএসএল। বাকিগুলো নামমাত্র হচ্ছে। ফেডারেশনকে এই বিষয়টা খেয়াল করতেই হবে।"
আর কলকাতায় তাঁর কোচিংয়ে খেলে যাওয়া গুরপ্রীত সিং সান্ধুকে নিয়ে অবশ্য এখনও উচ্ছ্বসিত অতনু। জানিয়ে দিলেন, "গুরপ্রীত সব ম্যাচেই সিরিয়াস থাকে। সামনে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ও কিন্তু বেশ পরিশ্রমী। তবে লো বলের ক্ষেত্রে ওঁর সমস্যা রয়েছে। লম্বা গোলকিপারদের যে সমস্যা হামেশাই থাকে। আর স্টিম্যাচ জাতীয় দলে দ্বিতীয় কোনও গোলকিপারকে কেন তৈরি রাখছেন না, সেটাও ভাবার বিষয়। গুরপ্রীতকে সব ম্যাচে না খেলিয়ে বরং বিশ্রাম নিয়ে খেলানো হোক। বাংলাদেশের সঙ্গেও যদি গুরপ্রীতকে নামতে হয়, সেটা চিন্তার বিষয়!"
ভারতীয় একাদশ:
গুরপ্রীত সিং সান্ধু, রাহুল ভেকে, শুভাশিস বোস, শেরিটন ফার্নান্দেজ, অনিরুদ্ধ থাপা, গ্লেন পিটার মার্টিন্স, সুনীল ছেত্রী, উদান্ত সিং, মন্দার রাও দেশাই, লিস্টন কোলাসো, সুরেশ সিং
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন