স্বপ্না বর্মণ। এই মুহর্তে সংবাদের শিরোনামে জলপাইগুড়ির বছর বাইশের বাঙালি মেয়েটা। গতরাত থেকেই শুভেচ্ছায় ভেসে যাচ্ছেন দেশের ‘সোনা’র মেয়ে স্বপ্না। সল্টলেক সাই-তে (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) প্র্যাকটিস করা স্বপ্নাই দেশের প্রথম ভারতীয় যিনি এশিয়ান গেমসের আসর থেকে হেপ্টাথলনে সোনা ছিনিয়ে এনেছেন। গত সাত আট বছর ধরেই স্বপ্না সল্টলেক সাইয়ের বাসিন্দা। এখানেই প্র্যাকটিস করেন আর থাকেনও। স্বপ্নার কোচ সুভাষ সরকার ছাড়াও তাঁর সঙ্গে প্রায় প্রতিনিয়ত জুড়ে রয়েছেন আরও একটা মানুষ। তিনি কল্যাণ চৌধুরি।
সাই পূর্বাঞ্চলের অ্যাকাডেমিক ইনচার্জ কল্যাণবাবুই ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের দায়িত্বে। এই রাজ্যেরও প্রধান কোচ তিনি। গতরাতে ইন্দোনেশিয়া থেকে হোয়াটসঅ্যাপেই স্বপ্নার সঙ্গে কথা হয়েছে কল্যাণবাবুর। নিউ টাউনের এই বাসিন্দা আজ শিষ্যার জন্য গর্বিত। তিনি বলছেন, "বাকি মেয়েরা যেখানে ৭০-৮০ শতাংশ দেয়, সেখানে স্বপ্না দেয় ১২০ শতাংশ। ঠিক এই কারণেই বাকিদের থেকে ও আলাদা। স্বপ্নার কোনও বিকল্প নেই। এরকম মনের জোর আমি আর কারোর মধ্যে দেখিনি। অসম্ভব মোটিভেট করতে পারে নিজেকে। ও আর পাঁচটা মেয়ের মতো একেবারেই নয়। খুব ডাকাবুকো আর একগুঁয়ে। যেটা করবে বলে, করেই ফেলে। এটাই একজন স্পোর্টসম্যানকে অনেকদূর নিয়ে যায়। এককথায় স্বপ্না অসাধারণ।”
আরও পড়ুন: এশিয়াডে ‘সোনা’র ইতিহাস লিখলেন বাংলার স্বপ্না বর্মণ
স্বপ্না দাঁতের অসম্ভব যন্ত্রণা নিয়েও এই সাত ইভেন্টের খেলা হেপ্টাথলনে সোনা পেয়েছেন। ব্যাথার প্রসঙ্গে কল্যাণবাবুর সংযোজন, “শুধু দাঁতের ব্যাথা তো নয়। ওর কোমরে একটা চোট পেয়েছিল। সেখান থেকে সেরে উঠে এশিয়াডে এসেছে। আর ওই কোমর নিয়ে হাইজাম্প, শটপাট আর জ্যাভলিন থ্রো’র মতো ইভেন্টে ভাল ফল করা মুখের কথা নয়। আমি সুভাষকে বলি, তুমি স্বপ্নার মতো একটা মেয়েকে পেয়ে ভাগ্যবান। মেয়ে হিসেবেও খুবই ভাল ও। কোচেদের কখনও অমান্য করে না।”
স্বপ্নার আর্থিক অবস্থার কথা প্রায় প্রত্যেকেরই এখন জানা। অত্যন্ত অভাবী সংসারের মেয়ে স্বপ্না। কিন্তু কল্যাণবাবু এও জানেন যে, কলকাতায় ফিরলেই সংবর্ধনা আর শুভেচ্ছায় ভেসে যাবেন স্বপ্না। এই প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, “বাংলায় আবেগের অভাব নেই। স্বপ্না হয়তো এরপর সংবর্ধনা নেওয়ার জন্য সময়ই করে উঠতে পারবে না। সংবর্ধনা তো বুঝলাম, কিন্তু আমি ভাবছি টাকা-পয়সার ব্যাপারটা। ও কোথাও চাকরি করে না। রেল থেকে একটা চাকরির প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু সেরকম ভাল কিছু নয় বলে ও করেনি। এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ওকে চাকরি দেওয়া হবে বলেও শুনিনি।”